একেই বলে শিক্ষা দেওয়া?
২৫ আগস্ট ২০১৭হিন্দুস্থান টাইমস-এর খবর অনুযায়ী মেয়েটি নাকি গায়ক তোশি সাব্রির বোনঝি৷ সাব্রি অবশ্য বলেছেন, এই ভিডিও দেখে তাঁর বোনের সন্তান প্রতিপালনের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণা করা উচিত নয়৷
খাতা খুলে ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর আওড়াচ্ছে মেয়েটি – আর ভুল করছে৷ মায়ের গলায় ঠিক সেইরকম শাসানির সুর, যা আমরা সকলেই জানি ও চিনি৷ এর পরের পর্যায়ই হলো চড়চাপড় বা কানমোলা, গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে যা অনন্তকাল ধরে চলে আসছে৷ আমার চেনা এক মা বলতেন, ‘‘পিঠ সুড় সুড় করছে?'' ইমেজটা ইন্টারেস্টিং, কেননা সংশ্লিষ্ট ছেলেটির সত্যিই পিঠ সুড় সুড় করত, যেন তার সারা শরীর বুঝতে পারত, এবার গুম করে কিলটি পড়বে...৷ কাজেই ছেলেটি আরো ভয় পেয়ে আরো বেশি ভুল করত, ভিডিও-র মেয়েটি যেমন করছে৷
আমাদের যা অবাক করা উচিত, তা এই মেয়েটির কান্না নয়, মার খাওয়া নয়, এমনকি তার রাগ পর্যন্ত নয়৷ আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত, ঐটুকু মেয়ে কখনো হাত জোড় করে, কখনো দাঁত কিড়মিড় করে, কখনো রাগের সঙ্গে কান্না আর কান্নার সঙ্গে রাগ মিশিয়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করছে – এ দুনিয়া যে কঠিন ঠাঁই, সেটা যেন সে এই বয়সেই বুঝে ফেলেছে আর ছোটদের – বা বড়দের – যা কিছু অস্ত্র, সব ব্যবহার করে সে তার ছোট্ট সত্তাটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে৷
এই অসহায়তার সঙ্গে জুটেছে এক চাপা প্রতিরোধ, যা আর কোনো পথ না পেলে ব্যঙ্গ হয়ে ফুটে বেরোয়: তাই চার বছরের মেয়ে বার বার একটা সংখ্যা নিয়ে ভুল করলে, মা যখন ক্রমেই আরো বেশি রেগে যাচ্ছেন, তখন সে বলছে ওটা থ্রি, নাকি ফোর? সঙ্গে সঙ্গে মায়ের হুঙ্কার, তাই বেচারি একবার বলছে ফাইভ – মা আবার ফুঁসে উঠলে বলছে, ‘কুছ ভি নহি হ্যায়', ওটা কিছু নয়, ওটা কোনো সংখ্যাই নয়৷
এরকম অ্যাবসার্ড ড্রামা বেকেট লিখতে পারতেন কিনা সন্দেহ৷ আমি এই মেয়েটির অস্তিত্ববাদী, কিম্ভুত রসবোধ দেখে মুগ্ধ৷ বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে যুবরাজ সিং-এর মতো ক্রিকেটাররা সোশ্যাল মিডিয়াতোলপাড় করছেন এই কচি কমিক প্রতিভাটির দুর্দশা নিয়ে: আমি তাদের নিশ্চিন্ত থাকতে বলব৷
এ মেয়ে ইংরেজিতে আঁক কষতে পারুক আর নাই পারুক, এ হলো আসল ডেস্টিনিজ চাইল্ড, এ হলো আসল সার্ভাইভার – এ আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিকে গুলে খেয়েছে, রোমিলা থাপারের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা উচিত৷
এসি/এসিবি