1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একাধিক শহর জুড়ে বিশাল শিল্পকর্ম জার্মান শিল্পীর

৯ এপ্রিল ২০২১

টেবিলে বসে ছবি আঁকা অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ৷ কিন্তু একাধিক শহরে বিশাল সারফেসের উপর কোনো ভুলত্রুটি ছাড়াই নিখুঁত শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা বিশাল চ্যালেঞ্জ বটে৷ এই জার্মান শিল্পী সেই অসাধ্যসাধন করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3rl6X
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/A. Berry

জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ম্যার্সেবুর্গ শহরের প্রাসাদে শিল্পী হিসেবে অঁতোয়ানেৎ বিশাল এক শিল্পকর্মের কাজ শেষ করছেন৷ রং-পেন্সিল দিয়ে তিনি প্রায় একশো বর্গমিটার জুড়ে সেটি এঁকেছেন৷ নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘একই ধরনের বিশাল এই সারফেসগুলির জন্য অনেক পেন্সিলের প্রয়োজন হয়৷ শুধু একটি কাগজের জন্য আমি ৩৬টি নীল পেন্সিল ব্যবহার করেছি৷ কোনো স্কেচ বা খসড়া করতে পারি নি৷ বিশাল আয়তন এর অন্যতম কারণ৷ এত বড় জায়গার জন্য ছোট খসড়া মাথায় রাখা কঠিন৷''

তিন বছর ধরে তৈরি ‘ইউরোপাস অল্টার' অর্থাৎ গ্রিক পুরাণের চরিত্র হিসেবে ইউরোপার বেদি নামের শিল্পকর্মের জন্য তার প্রায় দেড় হাজার পেন্সিলের প্রয়োজন হয়েছে৷ মোট ১৩টি প্যানেলের মধ্যে শেষ চারটি ম্যার্সেবুর্গ শহরে সৃষ্টি হয়েছে৷ বাকিগুলি তিনি কাছের গ্যোরলিৎস শহর এবং ভিয়েনা ও প্রাগে এঁকেছেন৷ অঁতোয়ানেৎ বলেন, ‘‘তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে ইউরোপ আমার চর্চার বিষয় হয়ে আছে৷ কারণ আমার মতে গোটা বিশ্বে এই মহাদেশের এক অসামান্য গুরুত্ব রয়েছে৷ বাকি বিশ্বের মতো এখানেও বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ সে কারণেও নিজস্ব পরিচয়, নিজেদের সাধারণ ঐতিহ্য, পারস্পরিক সংযোগ এবং ভবিষ্যতের দিশা বর্ণনা করা অত্যন্ত জরুরি৷''

ইউরোপের রূপকথা জগতের চরিত্রগুলি সেখানে বিষাদ ও মুক্তি, নেতিবাচক মনোভাব ও ভালবাসার কাহিনি ফুটিয়ে তুলছে৷ গ্রিক পূরাণে ইউরোপাকে নারী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে৷ অঁতোয়ানেৎ সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে অসংখ্য নারীর প্রতিকৃতি এঁকেছেন৷

অঁতোয়ানেৎ তথাকথিত লাইপসিষ ঘরানার শিল্পী৷ তিনি সেই ধারার অন্যতম সেরা শিল্পী ব্যার্নহার্ড হাইসিশের খাস ছাত্রী ছিলেন৷ তবে অভিজ্ঞ শিল্পী হিসেবেও বিশাল এই প্রকল্প তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ অঁতোয়ানেৎ মনে করেন, ‘‘সত্যি ছবির মাঝে হাত রেখে আঁকা যায় না৷ পুরোটা সময় জুড়ে হাত বাড়িয়ে কাজ করতে হয়৷ ফলে টেবিলে বসে আরাম করে হাত রেখে আঁকার তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়৷''

ম্যার্সেবুর্গ শহরে গোটা বেদিটি প্রথমবার খাড়া করা হয়েছে৷ ২০ মিটার দীর্ঘ ও পাঁচ মিটার প্রস্থের সেই শিল্পকর্ম সঠিক স্থানে রাখা মোটেই সহজ কাজ ছিল না৷ পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সেটিকে এভাবেই রাখা হবে৷

দেড় হাজার পেন্সিলে আঁকা গ্রীক পুরাণের চরিত্র

প্রথমে মুক্ত গ্যালারি হিসেবে প্রদর্শনীর কথা ভাবা হয়েছিল৷ কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আগ্রহী দর্শকরা আপাতত শুধু জানালা দিয়ে শিল্পকর্মটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ অসাধারণ, খুঁটিনাটি বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে৷ সবাই যে তাকে সরাসরি কাজ করতে দেখতে পেয়েছেন, সেই বিষয়টি শিল্পীর জন্য সত্যি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা বটে৷ অঁতোয়ানেৎ বলেন, ‘‘প্রথম দর্শকরা এখানে আসার পর সত্যি বলতে কি আমি বেশ বিরক্ত হয়েছিলাম৷ কাজে আবার ভালোভাবে মনোযোগ দিতে আমার প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল৷ তারপর আর পিছনে কী হচ্ছে, তা বুঝতেই পারিনি৷''

সপ্তাহে সাত দিন ধরে দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের ধকল তাঁর জন্য সত্যি কঠিন ছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘কোনো ভুলত্রুটির অবকাশ নেই, কারণ বিশাল এই সারফেসে কিছুই মোছার উপায় নেই৷ এমনটা করলে কাগজ কুঁচকে যাবে, নষ্ট হবে৷ দর্শকরা অনেক বিষয় স্পষ্ট চিনতে পারবেন না৷ এখানে কোনো ত্রুটি নেই৷''

‘ইউরোপাস অল্টার' শিল্পকর্মের জন্য অঁতোয়ানেৎ এখন চূড়ান্ত জায়গা খুঁজছেন৷

আনা আকার/এসবি