1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এই দেশ তরুণদের: ড. ইউনূস

৮ আগস্ট ২০২৪

শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘‘এই দেশ তোমাদের, এটাকে তোমরা তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলবে৷'' দেশে ফিরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ড. ইউনূস৷

https://p.dw.com/p/4jF69
শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'এই দেশ তোমাদের, এটাকে তোমরা তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলবে।'
ড.মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আমাদের গৌরবের দিন৷ যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল সেটাকে সামনে রেখে এবং আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘যারা এটাকে সম্ভব করেছে—তরুণ সমাজ—তাদের প্রতি আমি আমার সমস্ত প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি৷ তারা আমার পাশে আছে৷ তারা এ দেশকে রক্ষা করেছে, এ দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে এবং এ পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশকে পেলাম সে বাংলাদেশ যেন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের শপথ৷ সেটা আমরা রক্ষা করতে চাই৷''

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের৷ যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে৷ কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ তারপর থেকে আর কোনো যুবক-যুবতী হার মানেনি, সামনে এগিয়ে গেছে৷ তারা বলেছে, যত গুলি মারো মারতে পারো, আমরা আছি৷ যার কারণে এই আন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে৷''

‘‘এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে,'' বলেন ড. ইউনূস৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু স্বাধীনতা রক্ষা করা নয়৷ এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাতে হবে৷ তা না হলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম নেই৷ এই স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে পৌঁছানোই আমাদের প্রতিজ্ঞা৷''

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘মানুষ যেন জানে, যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, সুযোগের পরিবর্তন, তার ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন৷''

তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকের তরুণ সমাজকে এটা বোঝানো যে এই দেশ তোমাদের৷ এটাকে তোমরা তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলবে৷ তোমরা যেহেতু স্বাধীন করতে পেরেছ, তোমরা এটাকে তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলতেও পারবে৷ তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে যে কীভাবে একটা দেশকে তরুণ সমাজ গ্রহণ করতে পারে এবং পাল্টে ফেলতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমি বারেবারে উপদেশ দিই, পুরোনোদের বাদ দাও৷ পুরোনোদের চিন্তা দিয়ে কিছু হবে না৷ শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দুনিয়ার কথা বলছি৷ তোমাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, সৃজনশীলতা আছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে৷ শুধু বইখাতাতে লেখার জিনিস না, সেটা প্রকাশ করার জিনিস৷''

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দায়িত্ব হলো, যেটা তারা অর্জন করে নিয়ে এসেছে সেটা এখন তাদেরকে দিয়ে করিয়ে দেওয়া৷ সরকার বলতে একটা জিনিস আছে, কিন্তু মানুষের কোনো আস্থা নেই৷ মানুষ মনে করে, সরকার হচ্ছে একটা দমনপীড়নের যন্ত্র৷ এটা একটা ভয়ের জিনিস, যাকে সামাল দিয়ে চলতে হবে৷ এটা সরকার হতে পারে না৷ সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে৷ মনে করতে হবে সরকার আমাকে রক্ষা করবে, সহযোগিতা করবে, আমার সরকার আমার পাশে দাঁড়াবে৷ কিন্তু সরকার কারো জন্য পাশে দাঁড়ায় না কোনো সময়৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে, আস্থাভাজন হবে৷ তোড়জোর করে তাকে ভালো বলাতে হবে না৷ সে নিজে নিজে বিশ্বাস করবে যে সরকার ভালো, সরকারি লোক দেখলে বলবে যে এ আমার লোক, আমাকে রক্ষা করার লোক৷ সেই আস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের মধ্যে৷ তাহলে মানুষও যোগ দেবে এর মধ্যে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সারা বাংলাদেশ একটা পরিবার৷ এই পরিবার আমরা একসঙ্গে চলতে চাই৷ আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যা কিছু আছে, সরিয়ে ফেলতে চাই৷ যারা বিপথে গেছে, তাদেরকে পথে আনতে চাই৷ যাতে করে একসঙ্গে আমরা কাজ করতে পারি৷''

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে আসার পথে শুনলাম, এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত হচ্ছে৷ মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, সম্পদ জ্বালিয়ে নষ্ট করছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে, অফিস-আদালতে আক্রমণ করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আহমাদিয়া সবার ওপর আক্রমণ করছে৷ এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ, এগুলো আমাদের বিষয় না৷''

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা৷ প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা৷ প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন, তাদের রক্ষা করা এবং আমাদের একটা শৃঙ্খলায় ফিরে আসা উচিত৷ এগুলো হলো অগ্রগতির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আমাদের যে যাত্রা শুরু হলো, সে যাত্রার শত্রু৷ কাজেই এই শত্রুকে যাতে রোধ করা যায়, তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে হোক, তাদের আইনশৃঙ্খলার হাতে দিয়ে হোক, এটা মনে রাখতে হবে৷ তাদের মেরে ফেলা ঠিক না৷ আইনশৃঙ্খলা নিজের হাতে নেওয়া ঠিক না৷ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন হতে হবে, তাদের হাতে সোপর্দ করতে হবে, এতে আমরা নিশ্চিত থাকব যে, এর একটা বিহিত হবে৷ এমন হলো আমরা দিয়ে দিলাম, তারা টাকা নিয়ে ছেড়ে দিলো, এটা যেন না হয়৷''

এসএইচ/জেডএইচ (ডেইলি স্টার)