এইচআইভি পজিটিভ মায়েদের জন্য সুখবর
৩ সেপ্টেম্বর ২০১০যে সব মানুষ এইডসে আক্রান্ত বা যারা এইচআইভি পজিটিভ, তাদের অনেক ধরণের বিধি নিষেধ মেনে চলাফেরা করতে হয়৷ তারা চাইলেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে এইচআইভিতে আক্রান্ত মায়েরা এক বছর পর্যন্ত তাঁদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে৷ তবে মাকে নিয়মিত এন্টিরেট্রভাইরাল অষুধ সেবন করে যেতে হবে৷ এর ফলে মায়ের এইচআইভি ভাইরাস শিশুকে সংক্রমন করবে না৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ পরিস্কারভাবেই জানিয়েছে, যে কোন শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে এবং এর পরের ছয় মাস বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও খাওয়াতে হবে৷
এই প্রতিবেদন আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় এইচআইভি পজিটিভ মায়েদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে৷ কারণ এতদিন তাঁরা জানতেন, শুধুমাত্র প্রথম তিন মাসই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে৷ এর বেশি নয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনের কথাও তাঁরা সঠিকভাবে জানতে পারছেন না৷ প্রশ্ন করা হয়েছে তিন মাস, ছয় মাস, নাকি এক বছর ? কোনটি সত্যি৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এইচআইভি অ্যান্ড ইনফ্যান্ট ফিডিং' বিভাগের প্রধান ড. নাইজেল রোলিন্স৷ প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা সত্যি তবে এর পাশাপাশি – তিন ধরণের ব্রেস্ট ফিডিং-এর কথা আমরা বলছি৷ প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো - অন্য কোন কিছু নয়, এমনকি পানি পর্যন্ত নয়৷ এর পরের ছয় মাস বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো৷ তবে মাকে সবসময়ই এন্টিরেট্রভাইরাল অষুধ সেবন করে যেতে হবে৷ এর ফলে শিশুর এইচআইভিতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে৷''
উগান্ডার মানুষরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনের খবর ঠিকভাবে পায়নি৷ অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছে৷ বিশেষ করে এইচআইভি পজিটিভ মায়েরা৷ মারিয়া সেবাদুক্কা এইচআইভি পজিটিভ এবং তাঁর একটি সন্তান এখনো বুকের দুধ পান করছে৷ তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি খুবই বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি৷ কারণ, আমরা দু'ধরণের খবর পাচ্ছি৷ অনেক স্বাস্থ্য কর্মী বলছে আমরা যেন কোন অবস্থাতেই বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়াই৷ কেউ বলছে তিন মাস, কেউ বলছে এক বছর৷ কোনটা সত্যি ?''
উগান্ডার পরিস্থিতি সম্পর্কে ড. রোলিন্স বললেন, ‘‘উগান্ডার বিষয়টি একটু জটিল৷ কারণ, সেখানে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিল, জন্মের পর প্রথম তিন মাসই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে৷ এর পরে নয়৷ অথচ আমরা কখনোই এ ধরণের কিছু বলিনি৷ আমরা শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর ওপর জোর দিয়েছি প্রথম ছয় মাস৷ উগান্ডায় ‘তিন মাস' শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত৷ আমরা শুধু পরামর্শ দিতে পারি৷ আমাদের গবেষণার ফলাফল জানতে পারি৷ জাতীয় পর্যায়ে তা কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের৷''
আরেকটি বিষয় হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবসময়ই বলে এসেছে – প্রতিটি এইচআইভি পজিটিভ মাকে আলাদাভাবে দেখতে হবে৷ একেক জনের রোগের জটিলতা, ভাইরাসে আক্রান্তের কারণ, অষুধ সেবনের সময়সীমা একেক রকম৷ এদের সঙ্গে সময় নিয়ে কথা বলতে হবে৷ সবার কাউন্সিলিং এক রকম হবে না৷ সব সিদ্ধান্তও এক রকম হবে না৷ কারণ, সবার গর্ভকালীন অবস্থা এবং পরিস্থিতি এক রকম নয়৷
ধরা যাক একজন মহিলা পাঁচ বছর ধরে এইচআইভি পজিটিভ৷ এরপর তিনি গর্ভবতী হলেন৷ তখন কী তিনি তাঁর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন ? ড. রোলিন্স জানান, ‘‘হ্যাঁ, পারবেন৷ এটাই আমরা বলতে চাচ্ছি৷ যদি তিনি এন্টিরেট্রভাইরাল থেরাপি নিয়ে থাকে অথবা সে যদি নিয়মিত অষুধ সেবন করে থাকেন, তাহলে তিনি তাঁর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন৷ এর ফলে তাঁর শিশুর এইচআইভিতে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে দুই শতাংশেরও কম৷ এর সঙ্গে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া বা অপুষ্টিতে শিশুর মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকবে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ