উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় হরতাল-অবরোধ
৬ এপ্রিল ২০১৩২৪ ঘণ্টার এই হরতাল শেষ হবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায়৷ আর ২২ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে বিকেল ৪টায়৷ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে বিকেল ৪টায় শুরু হবে সমাবেশ৷ এর আগে সকাল ১০টায় মতিঝিলে অনুষ্ঠিত হবে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে একটি ইসলামি সংগঠনের লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশ৷ একই দিনে এক পক্ষের হরতাল, অবরোধ আর সমাবেশ এবং অপর পক্ষের লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশ, ফলে দেশবাসী গভীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে নজর রাখছে এসব কর্মসূচিতে৷ সবার প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণভাবে যেন শেষ হয় এসব কর্মসূচি৷ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে আগামী রবিবার থেকে টানা হরতাল ঘোষণার আভাস আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে হেফাজতে ইসলামী৷ তাই সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস থেকেই নগরবাসী যে আরো বড় দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন তা আগে থেকেই অনুমান করা যায়৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, লংমার্চ, হরতাল-অবরোধ কোন কর্মসূচিই জনগণ চায় না৷ এই ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায় দেশের মানুষ৷ তিনি আরও বলেন, সব কর্মসূচিই প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷ কিন্তু পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়ার কারণে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন জনগণ৷
হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী শুক্রবার সকালেও সরকারকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, লংমার্চ তাদের রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি নয়৷ ইমানী দায়িত্ব থেকে তারা এই আন্দোলন করছেন৷ তাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়৷ আর এ আন্দোলন থেকে জামায়াত-শিবিরের সুবিধা পাওয়ার কোন সুযোগও নেই৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দল সমঝোতায় না এলে দেশের পরিস্থিতি দিনদিন আরো অন্ধকারময় হয়ে উঠবে৷ তিনি বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি তা এক কথায় ভয়াবহ৷' বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতের এই লংমার্চে বিএনপির-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থন দেয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে৷ বছর তিনেক আগে গঠন করা অখ্যাত এই হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ তাই এখন চলে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে৷ সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, জামায়াত চক্র হেফাজতের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নাশকতা ঘটাতে পারে৷ তাই তাদেরই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে জামায়াত-শিবির চক্র তাদের মধ্যে ঢুকে কিছু করতে না পারে৷ তিনি বলেছেন, লংমার্চ যদি কোনো পর্যায়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা আইন বহির্ভূত কোনো কাজে তারা সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে তাহলে যথাসময়ে যথাস্থানে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ তিনি জানান, হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড সরকার যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে৷
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, লংমার্চে সরকারের লোকজনই গোলযোগ সৃষ্টি করবে, সে কারণেই তারা নাশকতার সংশয়ের কথা বলছেন৷ তিনি বলেন, লংমার্চে কোনো ধরনের সমস্যা হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷ এর জন্য জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে৷
সাধারণ মানুষ বলছেন, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে দেশ৷ এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে এক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনি জটিলতার কারণে এখনই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়৷ গণজাগরণ মঞ্চ জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছে৷ এই মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা আরো কঠোর আন্দোলনের পথ বেছে নেবে৷ তাই সময় যত গড়াচ্ছে ততোই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ দেশে কী হতে যাচ্ছে? সামনের দিনগুলো কী অন্ধকারাচ্ছন্ন? এসব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে এখন মানুষের মনে৷