1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদে মহাসড়কের আতঙ্ক মোটরসাইকেল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ এপ্রিল ২০২২

এবার ঈদ যাত্রায় সড়কে মোটরসাইকেলের দাপট বাড়বে৷ সেটা আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি হতে পারে৷ তাতে প্রাণহানি বাড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে৷ মোটরসাইকেলকে বাংলাদেশে গণপরিবহণ বিবেচনা করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4AVte
BdTD | Bangladesh | Mann mit Gesichtmasken
ছবি: AFP/M. U. Zaman

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, গত ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ৪৩ শতাংশ ছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার৷ এবার  সেটা আরো অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷

কিন্তু বিআরটিএ মনে করছে নাগরিকদের কাছে চাহিদা আছে বলেই মোটরসাইকেল ব্যবহার বাড়ছে৷ ঈদে মোটরসাইকেলের কারণেই অনেক বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে পারবেন৷ বিআরটিএ এর নিয়ম নীতি মেনে চললেই দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে৷

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, গণপরিবহণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা যানজটের কারণেই মানুষ মোটরসাইকেল নির্ভর হয়ে পড়ছে৷ তাদের মতে মোটরসাইকেল গণপরিবহণ হতে পারে না৷ এর দায় সরকার এড়াতে পারে না৷

বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে মার্চে সারা দেশে ৫৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭৯ জন৷ এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন ২২১ জন৷ শতকরা হিসেবে ৩৭.৫২ ভাগ মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়৷ চলতি মাসে এই অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘এরই মধ্যে ঈদের ট্রেন, বাস ও লঞ্চের টিকিট নিয়ে নৈরাজ্য আমরা দেখেছি৷ অনেক মানুষ গণপরিবহণে বাড়ি যেতে পারবেন না৷ তারা বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেলকেই বেছে নেবেন৷ আর মোটরসাইকেল অন্য যে কোনো যানবাহনের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ৷ মহাসড়কে এই মোটরসাইকেল অন্য যানবাহনের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করে৷''

সাইদুর রহমান

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, গত দুই বছরে ঢাকাসহ সারাদেশে নতুন ১০ লাখ মোটরসাইকেল যুক্ত হয়েছে৷ এখন রাস্তায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ লাখ৷ এর মধ্যে অন্তত ২৫ লাখ মোটরসাইকেল ঈদ যাত্রায় অংশ নেবে বলে তাদের আশঙ্কা৷

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে মোটরসাইকেলের কমপক্ষে ১২ লাখ ট্রিপ হতে পারে ঈদে৷ ঢাকার বাইরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ৭০ লাখ ট্রিপ হতে পারে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরো ৪০ লাখ ইজি বাইক৷ ফলে এবার ঈদযাত্রা সবার জন্য আগের তুলনায় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা আছে৷''

ঈদে যাওয়া আসা হিসেবে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমানসহ সব ধরনের যানবাহন মিলে ৬০ কোটি ট্রিপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তারমধ্যে ৪০ কোটি ট্রিপ হবে সড়ক পথে৷ সড়ক পথের এই ট্রিপের ১০ শতাংশ হবে মোটরসাইকেলে৷

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘মহাসড়কে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে শতকরা ৫০ ভাগ দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব৷''

মোজাম্মেল হক চৌধুরী

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘গণপরিবহণের অপর্যাপ্ততার কারণেই মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরতা বাড়াছে৷ মানুষ যানজট এড়াতেও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে৷ কিন্তু এটা বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহার হয়না৷ কারণ মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ ভাগ বেশি৷''

তিনি বলেন, ‘‘জাপানে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল কমিয়ে ১০ লাখ করা হয়েছে৷ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় মোটরসাইকেল কমিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনা কমে গেছে৷ কিন্তু আমাদের দেশে উৎসাহিত করা হয়৷ রাইড শেয়ারিং-এ মোটরসাইকেলকে অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা দুঃখজনক৷ ঈদের আগে এখন মোটরসাইকেল কেনায় ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে৷ কিস্তিতে দেয়া হয়৷ দেশতো মোটরসাইকেলে ভরে যাবে৷''

ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক ড. শুভ প্রসাদ দাস জানান, তারা সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত যেসব রোগী পান তাদের অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন৷ তিনি বলেন, ‘‘জরিপে ৩৭ ভাগ বলা হলেও বাস্তব চিত্র এরচেয়ে আরো ভয়াবহ৷ এটা ৫০-৬০ ভাগ হবে৷ মোটরসাকেল দুর্ঘটনায় যাদের মাথায় আঘাত লাগে তাদের অধিকাংশকেই বাঁচানো যায় না৷''

ড. শুভ প্রসাদ দাস

তিনি বলেন, তাদের হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কমপক্ষে ২০০ জন ভর্তি হন৷ তাদের মধ্যে ৯০-১০০ জনের অপারেশন লাগে৷ বাকিদের প্লাস্টার করে ম্যানেজ করা যায়৷ তিনি জানান, ‘‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত যারা বেঁচে যান তাদের বড় একটি অংশ পঙ্গু হয়ে যায়৷ হাত-পা কেটে ফেলতে হয়৷'' এখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত নারীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে বলে জানান তিনি৷

বিআরটিএর রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব ই রাব্বানী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘চাহিদা আছে বলেই মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে, এটা খারাপ কিছু নয়৷ এই ঈদে যারা গণপরিবহণে যেতে পারবেন না তারা মোটরসাইকেলে যাবেন, এটাইতো স্বাভাবিক৷ তা না হলে তারা কীভাবে যাবেন? আর মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং-এর অনুমতি আইনের আওতাই দেয়া হয়েছে৷''

কিন্তু লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও হেলমেট ছাড়াই অনেকে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে৷ এ ব্যাপারে তার জবাব হলো, ‘‘বিআরটিএ এর তো আইন আছে, নির্দেশনা আছে৷ সেগুলো মেনেই মোটরসাইকেল চালাতে হবে৷ আইনের বাইরে গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ট্রাফিক পুলিশ আছে৷''

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে গত ঈদুল ফিতরে সারাদেশে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত, ৬২২ জন আহত হন৷ তার মধ্যে ১৪৪ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত  হন৷ যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫.২৮ শতাংশ৷ ওই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ৪৩.০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার৷ তাদের আশঙ্কা করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় এবারের ঈদে মোটরসাইকেল যাত্রা তিন গুণ বেড়ে যাবে, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়বে তিন গুণ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য