যে সাইকেল চালাতে হয় না
২৫ মে ২০১৬২০১৬ সালের আসল ট্রেন্ড হল ই-বাইক৷ ই-বাইককে আর প্রবীণদের সাইকেল বলে গণ্য করা হচ্ছে না৷ বার্লিনে একটা ই-বাইকের দোকান খোলা হয়েছে৷ দোকানটি খুলেছেন মাথিয়াস লিঙ্গনার, দু'বছর আগে, নাম রেখেছেন ‘উইংহুইলস'৷ এখানে শুধু ই-বাইক পাওয়া যায়৷ ইতিমধ্যে সেই ই-বাইকও ভোল পাল্টে ফ্যাশনেবল হয়েছে৷ ইলেকট্রিক মোটরটি আরো ছোট হয়েছে, অ্যাকুমুলেটর, মানে স্টোরেজ ব্যাটারিটি ফ্রেমে ঢাকা পড়েছে৷ মাটিয়াস বললেন, ‘‘ইতিমধ্যে নানা নতুন প্রযুক্তি বেরিয়েছে, যার ফলে ইলেক্ট্রোমোবিলিটি, মানে ইলেকট্রিক কার ইত্যাদি বেড়ে চলেছে৷ বহু সুন্দর সুন্দর ই-বাইক বাজারে এসেছে৷ তাদের ডিজাইন যেমন সুন্দর, তেমনই পাওয়ার বেশি৷ এগুলো ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে চলে; নাম রাখা হয়েছে এস-পেডেলেক্স৷''
আরো কত ধরনের ই-বাইক! যেমন সিটি বাইক অথবা মাউন্টেইন বাইক – যার অ্যাকুমুলেটরটা বিশেষভাবে লুকনো৷ কোনো ই-বাইককে স্মার্টফোনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় – কেননা ই-বাইকের জগতেও এখন কনেক্টিভিটির ভীষণ চল৷ মাটিয়াস লিঙ্গনার তাঁর স্মার্টফোন দিয়ে জানতে পারেন, সাইকেলটা কোথায় রাখা আছে; অথবা তিনি কোন স্পিডে বাইক চালাচ্ছেন; অথবা ব্যাটারিতে আর কতটা চার্জ আছে৷
২০১৫ সালে জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি ই-বাইক বিক্রি হয়েছে৷ ক্রমেই আরো বেশি মানুষ ই-বাইক কিনছেন কেননা তারা সাধারণ সাইকেল চালিয়ে ঘেমে-নেয়ে অফিসে পৌঁছাতে চান না৷ তবে সাধারণ প্যাডেল চালানো সাইকেলও বাজারে থাকবে, বলে মাটিয়াসের ধারণা৷ তিনি বলেন, ‘‘সাইকেল কিংবা ই-বাইক চালিয়ে সর্বত্র যাওয়া যায়; যেখানে-সেখানে সাইকেল রাখা যায়, জায়গার কোনো অভাব হয় না৷''
সাইকেলের জয়যাত্রা
ইউরোপের বহু বড় শহরে সাইকেলের জয়যাত্রা৷ নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরকে তো সাইকেলের রাজধানী বলা হয়ে থাকে৷ সেখানে নাকি বাসিন্দার চেয়ে সাইকেলের সংখ্যাই বেশি! ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনও সাইক্লিস্টদের প্রতি বিশেষভাবে সদয়: এখানে আছে ট্র্যাফিক লাইটে অপেক্ষা করার সময় পা রাখবার জায়গা, অথবা সাইকেলচালকদের উপযোগী ময়লা ফেলার টিন৷ জার্মানির ম্যুনস্টার শহরে মোটরওয়ের মতো সাইকেলের জন্য আলাদা করে সাইকেলওয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এই সাইকেলওয়েতে দিনে ২০ হাজার সাইকেল চলে৷ লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন স্বয়ং সাইকেল চালান৷ সেখানেও নাকি দশ বছরের মধ্যে সাইকেলের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷
বার্লিন বাইসাইকল উইক-এর অঙ্গ হিসেবে একটি সাইকেল প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তা ফারেজ গাব্রিয়েল হাদিদ৷ তাঁর কাছে সাইকেল শুধু পরিবহন কিংবা স্পোর্টসের যন্ত্র নয়৷ সাইকেল ইতিমধ্যে স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ফারেজ বলেন, ‘‘সমাজে শরীর ও মন সম্পর্কে একটা নতুন চেতনা দেখা দিয়েছে বলে আমার ধারণা, সাইকেল চালানো যার অঙ্গ৷ মানুষ যেন সাইকেলকে নতুন করে চিনতে শিখছে৷''
পুরনো আমলের সাইকেলের মতে দেখতে নস্টালজিয়া সাইকেলগুলোর চাহিদাও খুব৷
গাড়ির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কার্গো বাইক৷ কাঠ কিংবা ঐ ধরনের কোনো প্রকৃতিদত্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি এই সাইকেল৷ অভিনব ফ্রেম, চমকে দেওয়ার মতো মডেল, সিট যে আরামদায়ক হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই – ডিজাইন হলো আসল কথা৷ আনুষঙ্গিকের ক্ষেত্রেও যা প্রযোজ্য৷ ফারেজ বলেন, ‘‘মাথার হেলমেটের ক্ষেত্রে নতুন অনেক কিছু বেরিয়েছে৷ অথবা মোবাইল রাখার কেস, বাইক অ্যাপ৷ আরেকটা ট্রেন্ড হলো মিনিমালিজম ছেড়ে আবার রঙচঙের দিকে যাওয়া, যা দেখলে পাঁচ-দশ বছর আগে লোক নাক কুঁচকোত৷ হাওয়া যে অন্যদিকে ঘুরছে, তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷''
রেসিং সাইকেলই হোক আর ট্রেলার লাগানোই হোক, বার্লিনে এই গ্রীষ্মে সব কিছুই দেখা যাবে, বলে ধরে নেওয়া যায়৷