1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলামরক্কো

ইতিহাস লিখে সেমিতে মরক্কো

মাহবুব সরকার ঢাকা
১০ ডিসেম্বর ২০২২

পর্তুগালকে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নাম লেখানোর ইতিহাস গড়ল মরক্কো। আল-থুমামা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দলটির জয় ১-০ গোলে। ভাগ্য নির্ধারণী একমাত্র গোলটি করেন ইয়াহিয়া আত্তিয়াত।

https://p.dw.com/p/4KmIn
প্রথমার্ধে পর্তুগাল ৬৫.৮ শতাংশ বল দখলে রাখলেও ম্যাচে মরক্কো ছিল দুর্দান্ত
প্রথমার্ধে পর্তুগাল ৬৫.৮ শতাংশ বল দখলে রাখলেও ম্যাচে মরক্কো ছিল দুর্দান্তছবি: Ariel Schalit/AP Photo/picture alliance

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে বেঞ্চে রেখে একাদশ সাজান পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো স্যান্তোস। সাবেক ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড সুপারস্টারের পরিবর্তে একাদশে এসে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা গঞ্জালো রামোস এ ম্যাচের আগে পাদপ্রদীপের আলোয় ছিলেন। কিন্তু ৬৯ মিনিটে মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বেনফিকা ফরোয়ার্ড। সেন্টার ব্যাক পেপে, রাইট ব্যাক দিয়েগো দালোত, মিডফিল্ডার বের্নার্দো সিলভা, উইংয়ে ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও জোয়াও ফেলিক্স শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলো ছাড়িয়ে গেছেন। বাকিরা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি; এ কারণেই হয়তো সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খুনে মেজাজের পর্তুগালকেও মাঠে দেখা গেলনা। তারপরও গোল হজমের পর থেকে একের পর আক্রমণ গড়ে গেছে ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা।

পঞ্চম মিনিটে জোয়াও ফেলিক্সের ডাইভিং হেড দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়েছেন মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বুউনো। সপ্তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ভালই জবাব দেয় মরক্কো। ৩১ মিনিটে জোয়াও ফেলিক্সের ভলি ফিরিয়ে দেয় মরক্কো রক্ষণভাগ।

প্রথমার্ধে পর্তুগাল ৬৫.৮ শতাংশ বল দখলে রাখলেও ম্যাচে মরক্কো ছিল প্রায় নিখুঁত। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নদের ৫ শটের বিপরীতে উত্তর আফ্রিকার দেশটি শট সংখ্যা ছিল ৭। যার দুটি ছিল অন-টার্গেট, টার্গেটে পর্তুগাল একটি শট নিতে পেরেছে। বিরতির পর বলের ওপর দখল বাড়ানো পর্তুগাল অন্যান্য পরিসংখ্যানেও এগিয়ে ছিল। কিন্তু দিন শেষে এসব পরিসংখ্যান গৌণ, ফুটবলে গোলটাই মুখ্য। সে দৃষ্টিকোণ থেকে শতভাগ সফল মরক্কো।

৪২ মিনিটে ইয়াহিয়া আত্তিয়াতের হেড প্রতিহত করতে আসা সেন্টার ব্যাক রুবেন দিয়াস ও গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তার ভুল বোঝাবুঝির ফায়দা তুলে এগিয়ে যায় মরক্কো (১-০)। যোগ করা সময় মিলিয়ে ম্যাচের বাকি প্রায় ৫৬ মিনিট সর্বস্ব উজাড় করেও পতন রুখতে পারেনি পর্তুগাল। শেষপর্যন্ত এ গোলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্ন যাত্রায় কানাডা ও বেলজিয়ামকে আল-থুমামা স্টেডিয়ামেই হারিয়েছে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল। এ ভেন্যুতে মরক্কোর এটি হ্যাটট্রিক জয়।

তিন বছর আগে মিসরে আফ্রিকান নেশনস কাপে বেনিনের কাছে হারা দলটি বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে এক ম্যাচ দূরে! ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে গ্যালারিতে আসা মরক্কান সমর্থকদের উচ্ছ্বাস, উৎসব ছিল উপভোগ্য। ১৯৮৬ সালে এই পর্তুগালের বিপক্ষেই বিশ্বকাপে মরক্কোর প্রথম জয় আসে। সেই পর্তুগালের বিপক্ষে আরেক ইতিহাস রচনা করল দেশটি। ম্যাচে মরক্কো লিড নেয়ার পর দ্রুতই পাল্টা জবাব দেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। বক্সের ওপর থেকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড প্লে-মেকারের করা ফ্লিক বুইনোকে ফাঁকি দিলেও ক্রসবারে বল প্রতিহত হয়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে পর্তুগাল। সময়ের সঙ্গে ফার্নান্দো সান্তোসের দলের আক্রমণ বেগবান হলেও তার সুফল আসেনি। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারের নায়ক গোলরক্ষক ইয়াসিন বউনো। ৮৩ মিনিটে দূরের পোস্টে জোয়াও ফেলিক্সের দারুণ শট রুখে দেন ৩১ বছর বয়সি সেভিয়া গোলরক্ষক। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে রোনাল্ডো হতাশ করেন মরক্কো গোলরক্ষক।

বিশ্বকাপে দলটির বিপক্ষে কোন দলই গোল করতে পারেনি! গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি ছিল আত্মঘাতী। কাজটা পর্তুগালের জন্যও অসম্ভব করে তুলল মরক্কোর রক্ষণ ও গোলরক্ষক। যোগ করা সময়ে ওয়ালিদ চেদ্দিরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর গোল না খাওয়ার রেকর্ড ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। কিন্তু দলগত প্রচেষ্টায় একজনের অভাব ঢেকে দিয়ে ইতিহাস রচনা করে মরক্কো। রক্ষণ সামলে দ্রুত পাল্টা আক্রমণে গিয়ে দুটি

দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিল মরক্কো। দুটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন পর্তুগাল গোলরক্ষক কস্তা। আগেই অল-ইউরোপিয়ান সেমিফাইনালের পথ বন্ধ করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। মরক্কো উঠে এসে বিশ্বকাপে আফ্রিকার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখল।