ইউরোপ এবং জার্মানির আরো সহায়তা চেয়েছেন সু চি
২১ ডিসেম্বর ২০১০গতকাল প্রকাশিত হয়েছে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব৷ আজ প্রকাশিত হচ্ছে এর শেষ পর্ব৷
ডয়চে ভেলে: গত সপ্তাহে চীনের গণতন্ত্রপন্থী কর্মী লিউ জিয়াওবোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ আপনি নিজে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে এই বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সু চি: নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, তাঁকে এই বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ গত প্রায় সাত বছর ধরে গৃহবন্দি থাকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে লিউ জিয়াওবো সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না৷ ফলে আমি তাঁর সম্পর্কে শুধু ততোটুকুই জানি যা কিছু বেতার থেকে শুনেছি৷ কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, নোবেল কমিটি তাঁকে বাছাই করার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷
ডয়চে ভেলে: ইউরোপের মানুষ ভাবছে তাঁরা বার্মার জন্য কী করতে পারেন? এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
সু চি: প্রথমত এটা সবচেয়ে সহায়ক হবে যদি ইউরোপের সব দেশ এক সুরে কথা বলতে পারে৷ এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই মনোভাব এবং মতের ভিন্নতা রয়েছে৷ আমি মনে করি সেটাও বার্মার বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করে দেয়৷ এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে যদি ইউরোপের সবগুলো দেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ব্যাপারে একযোগে আহ্বান জানায়৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু এবং এনএলডি'সহ সবার সাথে সমঝোতার ব্যাপারে৷
ডয়চে ভেলে: এ ব্যাপারে ইউরোপের কোন দেশটিকে আপনি সবচেয়ে সক্রিয় দেখতে চান?
সু চি: যেহেতু আপনি জার্মানি থেকে আমার সাথে কথা বলছেন, আমি চাইবো জার্মানি এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় হোক৷
ডয়চে ভেলে: আগের সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে, বার্মা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একটা জনমত গড়ে তুলতে আপনার কিছুটা সময় লাগবে৷ এ ব্যাপারে এখন আপনার মনোভাব কী?
সু চি: এখন পর্যন্ত আমি মনে করি না যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জনগণের উপর কোন প্রভাব ফেলেছে৷ তবে এক্ষেত্রে সম্ভবত আরো কিছু মতামত শোনা এখনও বাকি আছে৷ তাই আমাদের সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময় হলো আমি মুক্তি পেয়েছি৷ তাই আমি এখনও এ বিষয়ে এগুনোর সময় পাইনি৷ আমি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল - আইএমএফ, এবং সম্ভবত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক - এডিবি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি৷
ডয়চে ভেলে: বার্মায় পশ্চিমা গোষ্ঠী কতটুকু প্রভাবশালী? এক্ষেত্রে পশ্চিমের তুলনায় ভারত এবং চীনের ভূমিকাকে কীভাবে দেখেন?
সু চি: আমি মনে করি বার্মার ক্ষেত্রে পশ্চিম এবং ভারত ও চীনের ভূমিকা সম্পূর্ণ আলাদা৷ আমি মনে করি না যে বার্মার উপর প্রভাব কিংবা প্রধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কিছু রয়েছে৷ বিষয়টি এমন নয় যে, আমরা নিজেরাই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে নিতে পারি না৷ অবশ্য এটা ঠিক যে, ভারত এবং চীন আমাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশী হওয়ায় দূরবর্তী দেশগুলোর চেয়ে তাদের কিছু বেশি সুবিধা রয়েছে৷
ডয়চে ভেলে: এর অর্থ কি এমনটি যে, বার্মার ব্যাপারে পশ্চিম যা করে তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়?
সু চি: না, তা নয়৷ বরং পশ্চিম কীভাবে এবং কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার উপর সেটার গুরুত্ব নির্ভর করে৷ আর সেকারণেই আমি আগেই বলেছি যে, পশ্চিমের দেশগুলো যদি তাদের প্রচেষ্টাস সমন্বিত করতে পারে তাহলে সেটা বেশি ভালো৷ এমনকি শুধুমাত্র পশ্চিমা দেশগুলোই নয় বরং যদি জাতিসংঘ সহ গোটা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী একক প্রচেষ্টায় সমন্বয় করে তাহলে সেটা আমাদের সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে৷ আর তারা সবাই যদি একই দাবি জানায় সেটাই হবে অগ্রগতি৷
ডয়চে ভেলে: ভারত এবং চীনের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?
সু চি: আমরা চাই, তারা আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হোক৷ শুরুতে আমরা চাই ভারত এবং চীন আমাদেরকে এই সুযোগ দিক যে আমরা যেন আমাদের অবস্থান তাদের কাছে তুলে ধরতে পারি৷ ভারত এবং চীনের সাথে আমাদের খুব অল্পই যোগাযোগ রয়েছে৷ তাছাড়া চীনা সরকারের চেয়ে আমাদের বরং ভারত সরকারের সাথেই একটু বেশি যোগাযোগ রয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে আমি মনে করি যে, চীনের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগই নেই৷ আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাই৷ আমরা চাই, তারা আমাদের কথাও শুনুক এবং এটা বুঝুক যে, আমরা তাদেরকেও প্রতিবেশী হিসেবে চাই৷ আমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব চাই৷ এমনকি বার্মায় গণতন্ত্রের জন্য কাজ করলেও আমরা তাদের শত্রু নই৷
ডয়চে ভেলে: আগামী সপ্তাহগুলোতে আপনার পরিকল্পনা কী?
সু চি: আমি পৃথিবীতে সেই মানুষটিকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পাই যাঁর কাছে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট খাতাটা থাকে৷ আমি পরের সপ্তাহের অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো নিয়ে এখনও তাঁর সাথে বসিনি ......৷
সাক্ষাৎকার: টোমাস ব্যার্টলাইন
ভাষান্তর: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক