ইউরোপীয় প্ল্যাঙ্ক স্পেস মিশন
১৭ জানুয়ারি ২০১১ইউরোপীয় প্ল্যাঙ্ক স্পেস টেলিস্কোপ মিশন ১০ হাজারেরও বেশি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা নাক্ষত্রিক জঠরের কথা প্রকাশ করেছে৷ আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে এদের অধিকাংশই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বড়৷ প্ল্যাঙ্ক দলের সদস্য এবং জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জর্জ হেলাউ বলেন, ‘‘এটা বুঝে ওঠা কঠিন যে, ঐরকম প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতে কীভাবে এতো গ্যাস কেন্দ্রীভূত হতে পারে৷'' জর্জ হেলাউ প্যাসাডেনাতে, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ইনফ্রারেড প্রসেসিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেন্টারের পরিচালকও বটে৷
প্ল্যাঙ্ক স্যাটেলাইটের প্রথম বৈজ্ঞানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে ১১ জানুয়ারি৷ অ্যামেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২১৭তম বৈঠকে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷ প্ল্যাঙ্ক স্যাটেলাইটের মিশন শুরু হয় ২০০৯ সালের মে মাসে৷ স্যাটেলাইটটি মহাকাশে তার পরিকল্পিত চারটি সার্ভের মধ্যে প্রায় তিনটি শেষ করেছে৷ যে সব গ্যালাক্সি বা ছায়পথে নক্ষত্র সৃষ্টি হয়, সেগুলো সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জানতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে প্ল্যাঙ্কের এই সার্ভে৷ তাছাড়া, এখনও যেসব অস্পষ্ট ব্যাপার রয়েছে, যেমন, বিশেষ করে অন্ধকার এবং নক্ষত্রের কাঠামো তৈরিকারক গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এই সব ব্যাপারে জানতেও, বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে প্ল্যাঙ্কের এই সার্ভে৷
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পথিক গুহ প্ল্যাঙ্কের এই সার্ভে সম্পর্কে বললেন, ‘‘প্রথমত অনেকদিন পরে এতো তথ্য একসঙ্গে পাওয়া গেলো আর কি৷ এখানে একটা জিনিস জানিয়ে রাখা দরকার যে, এটা প্ল্যাঙ্ক সন্ধানী উপগ্রহের প্রাথমিক তথ্য৷ বিস্তারিত তথ্য এবং বিশ্লেষণ পেতে আরো দু'বছর লেগে যাবে, এতো তথ্য একসঙ্গে সংগ্রিহিত হয়েছে৷ ২০০৯ সালের মে মাসে এটিকে পাঠানো হয়েছিল, এর মূল কাজ হচ্ছে ব্রক্ষ্মাণ্ড সৃষ্টির পরে, তার তাপ বা তার প্রতিক্রিয়াও বলা যায়, সেটা তাপের হিসেবে বা আলোক তরঙ্গের হিসেবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে৷ এটার গভীরে তাকালে অনেক কিছু জানা যায়, ব্রক্ষ্মাণ্ড কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, এখন ব্রক্ষ্মাণ্ডের অবস্থা কী, এইসব৷''
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কারো কারো ধারণা, অন্ধকারের বিষয়টি হয়তো গ্যালাক্সির কাঠামো সৃষ্টি থেকে বিকশিত হবার পথটি প্রশস্ত করে৷ আমাদের কাছে খুব ভালোভাবে পরিচিত, কিন্তু এখনও তাদের সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, এইরকম অনেক কিছুর ব্যাপারেই নতুন ব্যাখ্যা দিতে পারবে প্ল্যাঙ্কের এই সার্ভে৷
এই ধরণের অনুসন্ধানী উপগ্রহ কেন পাঠানো হয় ? এই প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক পথিক গুহ বললেন, ‘‘বিভিন্নরকম তারা কীভাবে তৈরি হয়, গ্যালাক্সি কীভাবে তৈরি হয়, এই যেমন প্ল্যাঙ্ক মিশন যে তথ্য আমাদের পাঠিয়েছে, সেখান থেকে সবচেয়ে বেশি বোঝা গেছে, গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ প্রথম কীভাবে তৈরি হচ্ছে, তারা কীভাবে তৈরি হচ্ছে - এই জিনিসগুলো জানা খুব জরুরি এই জন্যে যে, ব্রক্ষ্মাণ্ডের জন্ম, এখনকার অবস্থা এবং সেগুলো বুঝতে আমাদের খুব সাহায্য করে৷ এইগুলো সবই জানা যায়, ব্রক্ষ্মাণ্ডের জন্ম মুহূর্তের অব্যাবহিত পরে৷ আলোর তরঙ্গ বা তাপের তরঙ্গ যেভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলোর বিশ্লেষণ৷ প্ল্যাঙ্কের কাজ ছিল সেই বিশ্লেষণগুলো খুব সুক্ষ্ম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা৷ এইজন্যে এটিকে পাঠানো হয়েছিল৷ তো সেই উপগ্রহ প্রাথমিক পর্যায়ে যে তথ্য পেয়েছে, সেটার একটা মোটামুটি আউট লাইন বিজ্ঞানীরা সম্মেলনে প্রথম প্রকাশ করেছেন৷ সেখান থেকেই সারা পৃথিবীতে খুব হৈচৈ হচ্ছে৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন