ইউক্রেন প্রসঙ্গে কেরি-লাভরভ
৫ মার্চ ২০১৪রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনার কথাটা জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোরঁ ফাবিউস – অবশ্য যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে ‘উত্তেজনা উপশমের' কোনো লক্ষণ না দেখা যায়৷ যুগপৎ ব্রাসেলসে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যেও কথাবার্তা হবে৷
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মঙ্গলবার শুধুমাত্র রুশ সাংবাদিকদের জন্য একটি ঘরোয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে ইউক্রেন সংকটে তাঁর, অর্থাৎ রাশিয়ার অবস্থান ব্যক্ত করেন: যেমন তিনি একমাত্র শেষ পন্থা হিসেবেই বলপ্রয়োগ করবেন; অথবা ইয়ানুকোভিচের বিদায় ইয়ানুকোভিচ নিজে না মানলেও, রাশিয়া মেনে নিয়েছে – রাশিয়ার আপত্তি হলো ইউক্রেনের নতুন সরকারে, ইত্যাদি৷
ওদিকে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-ও ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘‘বৈধ স্বার্থ''-কে মেনে নিয়েছেন, ‘‘যদিও তা পুটিনকে সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয় না''৷ রাশিয়ার সঙ্গে যাবতীয় সামরিক সহযোগিতা আপাতত বন্ধ রাখা ছাড়া ওবামার দৃশ্যত বর্তমানে আর কিছু করণীয় নেই, কেননা ইউরোপীয়রা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে – কম করে হলেও – দোনামোনা করবে৷
‘পাড়া-প্রতিবেশী'
প্রেসিডেন্ট ওবামা মঙ্গলবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির বাসিন্দা হিসেবে ম্যার্কেল রুশ ভাষা ভালোই বলেন, যেমন সাবেক পূর্ব জার্মানিতে রুশ গুপ্তচর সেবার সাবেক কর্মী হিসেবে পুটিনেরও জার্মান ভাষাটা ভালোই রপ্ত৷ মার্কিন ভাষ্যকাররা টেলিভিশনে প্রকাশ্যেই বলছেন – এবং সঙ্গত কারণেই – যে, পুটিনের উপর কোনো পশ্চিমি, ইউরোপীয় অথবা বিশ্বনেতার যদি কোনো প্রভাব থেকে থাকে, তবে তিনি হলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এছাড়া ম্যার্কেলের হয়ে যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনৈতিক রণাঙ্গণে নেমেছেন, তিনি হলেন সামাজিক গণতন্ত্রী রাজনীতিক ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার, যাঁর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে গত দশ বছরের সুসম্পর্ক৷ স্টাইনমায়ার তাঁর দু'জন ইউরোপীয় সতীর্থের সঙ্গে ইউক্রেন সংকট সমাধানের যে প্রচেষ্টা নেন, তাকেই ভিত্তি করে এগোতে চায় মস্কো৷
ইউরোপীয় কূটনীতি
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুবিধা হলো এই যে, ইউরোপীয় দেশ এবং নেতৃবর্গের সব সময়ে একই মনোভাব পোষণ কিংবা ব্যক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না: যেমন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ ইতিমধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনা দেখছেন এবং দেখিয়েছেন৷ কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আজ বুধবার যে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিবর্গ প্যারিসে মিলিত হচ্ছেন – যদিও সবাই এক টেবিলে নয় – তা গোড়া থেকেই অপ্রয়োজনীয় কিংবা নিষ্ফল৷
বলতে কি, যে ফ্রান্স স্বয়ং রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ভয় দেখাচ্ছে, সেই ফ্রান্সই আবার এই বুধবার ‘‘ভ্লাদিভস্তক'' হেলিকপ্টারবাহী পোতের প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রার খবর দিয়েছে৷ ফ্রান্স ২০১১ সালের একটি অর্থকরী চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়াকে এই হেলিকপ্টারবাহী পোত সরবরাহ করছে: বলতে কি, এটাই হলো ন্যাটোর তরফে রাশিয়াকে বৃহত্তম অস্ত্রবিক্রয়৷
এই একটি ঘটনাই নির্দেশ করছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের পুবের প্রতিবেশীর সখ্যতা অথবা বৈরিতা, সবই একটু অন্য ঢঙের৷ যেমন বার্লিন হলো রাশিয়ার বৃহত্তম অর্থনৈতিক সহযোগী৷ কাজেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সর্বাগ্রে আপত্তি জানিয়েছে জার্মান শিল্প সমিতি৷ ইউরোপীয় দেশগুলির মুশকিলই হলো ঠিক তাই: তারা রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষতি না করে৷ একমাত্র আশা এই যে, ক্রেমলিনের দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরোপের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কটা ঠিক একই রকম গুরুত্বপূর্ণ৷ কাজেই রাশিয়া ইউরোপের মনোভাবকে পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয় না৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)