আলোকচিত্রীর লেন্সে নির্জন, নিস্তব্ধ বার্লিনের রূপ
১০ জুলাই ২০২০বার্লিনের জনপ্রিয় চত্বর আলেক্সান্ডারপ্লাৎস প্রায় জনশূন্য৷ শুধু হাতে গোনা কিছু লোকজন দেখা যাচ্ছে৷ সেবাস্টিয়ান ভেল্স আলোকচিত্রী হিসেবে করোনা সংকটের সময়ে শহরের পরিবেশ ক্যামেরাবন্দি করেছেন৷ প্রাণবন্ত এক শহর আচমকা থমকে যাবার পর প্রথমে তিনি শুধু হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভেল্স বলেন, ‘‘এমন সংকটজনক পরিস্থিতিতে আমার মধ্যে একটা তাগিদ, একটা তাড়না জেগে উঠেছিল৷ প্রথমদিকে শুধু মানসিক চাপ অনুভব করতাম৷ মনে হলো, এই রে এবার কী হবে! এমন অনুভূতি দেখা দিলে আমি সাধারণত ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়ি৷''
করোনা মহামারির ফলে বিশ্বজুড়ে অনেক শহরই অচল হয়ে পড়েছিল৷ অনেক শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছিল৷ তবে জার্মানির রাজধানীতে শুধু মানুষের মধ্যে যোগাযোগ নিষিদ্ধ ছিল৷ সেইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল, জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেবাস্টিয়ান বার্লিনের এই রূপের ছবি তুলে গেছেন৷ নিজের শহরের নতুন এই দিক আবিষ্কার করে তিনি টের পেয়েছেন, কীভাবে সবকিছু ধীরে ধীরে আরো খালি হয়ে গেছে৷ ভেল্স বলেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বাইরে গিয়ে ছবি তুলেছি৷ তাই চরম ব্যস্ততায় দিন কেটেছে৷ কঠিন পরিশ্রমের কারণে বার্লিন শহরকে নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি৷ সারা জীবন বসবাস করা সত্ত্বেও কিছুটা নতুনভাবে শহরটি আবিষ্কার করেছি৷''
বার্লিনের ‘চেকপয়েন্ট চার্লি'-তেও সেই পরিবর্তন টের পাওয়া গেছে৷ একদা বিভক্ত শহরের এই সীমান্তে সাধারণত অনেক মানুষের ভিড় দেখা যায়৷ সারা বিশ্বের পর্যটকদের সমাগমের বদলে জায়গাটি জনমানবহীন হয়ে উঠেছিল৷ ভেল্স বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘অবশ্যই সবকিছুর গতি কমে গেছে৷ দিন হোক বা রাত, প্রকাশ্যে সবসময়েই প্রায় একই সংখ্যক মানুষ দেখা যাচ্ছে৷ ফলে পরিবেশ যেন সময়হীন হয়ে উঠেছে৷ কাজের দিন ও সপ্তাহান্তের মধ্যে তফাত থাকছে না, রাশ আওয়ার বা অফিস যাবার ব্যস্ততা আর চোখে পড়ছে না৷ যেন রোজই রবিবার, অথচ সপ্তাহান্তের পরিবেশও নেই৷ এ এক অজানা, অদ্ভুত অনুভূতি৷''
সেবাস্টিয়ান ভেল্স স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছবি তোলেন৷ নিজের অনুভূতির ভিত্তিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোটিফ খুঁজে পান৷ বার্লিনের মানুষ তাঁদের নতুন এই দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিজেদের কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন, তাঁর ছবিতে সেই চিত্রও উঠে আসছে৷ ভেল্স বলেন, ‘‘আমার ধারণা, বার্লিনের মানুষের মনে তেমন কোনো উদ্বেগ নেই৷ তাঁরা সেভাবেই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন৷ তবে সবসময়ে মনে রাখতে হচ্ছে, যে কোনো মানুষের কাছে এলে সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ অথবা আমি অন্যদের সংক্রমিত করতে পারি৷ সেই বিপদ যে এখনো কাটে নি, সে বিষয়ে বার বার নিজেকে সচেতন করতে হচ্ছে৷ কখনো কখনো সেটা বেশ কঠিন৷''
বার্লিন শহরে বিধিনিয়ম কিছুটা শিথিল করার পরেও সেবাস্টিয়ান ছবি তোলা বন্ধ করেননি৷ কারণ, তিনি জানতেন, পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে আরো অনেক সময় লাগবে৷
ডরোটেয়া প্রেচ/এসবি