আরজি কর মামলা : সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডে সর্বস্তরের প্রতিক্রিয়া
আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় রায় দিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বান দাস। সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়ায় খুশি নন কেউ। ছবিঘরে সবার প্রতিক্রিয়া...
অভয়ার মা-বাবা যা বললেন...
রায়ের পর নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছেন, ''আমরা বিচার পাইনি। আমার মেয়ে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিল, সেকানে এই কাণ্ড হলো। সিবিআই তা প্রমাণ করতে পারলো না যে এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা? এটা বিরলতম না হলে কোনটা হবে?'' মা বলেছেন, ''আমার ক্ষতি কেউ পূরণ করতে পারবে না। প্রমাণ হলো, সন্তান মেধাবী হলেই হবে না, বাবা-মা কে প্রভাবশালী হতে হবে। সঞ্জয় রায় একমাত্র খুনি নয় বলে প্রথম থেকেই আমরা মনে করি।''
রায়ের পরই প্রতিবাদ মিছিল
সিনিয়র, জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি জানিয়ে দেয়, এই রায় তারা মানছে না। এরপর শিয়ালদহ আদালত চত্বর থেকে মৌলালি পর্যন্ত মিছিল করে যান তারা। মঙ্গলবার হেদুয়া থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে। সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। তারা চান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তি।
'লড়াই শেষ হয়নি'
জুনিয়র ডাক্তার আবির তালুকদার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এটা লড়াইয়ের শেষ হতে পারে না। অনেক পথ চলতে হবে। অন্য দোষীদের সামনে আনতে হবে।''জুনিয়র চিকিৎসকদের নেতা আশফাকউল্লার বক্তব্য, ''আমরা রায় মেনে নিতে পারছি না। আমরা মনে করি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। এই যুদ্ধ চলছে, চলবে। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। শুধু সঞ্জয় নয়, আরো অনেকে জড়িত। তাদের ধরতে হবে।''
'বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নেই'
আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার সৌরভ রায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম রায়ে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি থাকবে। অন্য দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য সিবিআইকে বলা হবে। এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে ঘোষণা করা হবে। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। আমাদের দাবি পূরণ হলো না। ন্য়ায়বিচার পেলাম না।
'যেরকম প্রমাণ দেয়া হয়েছে, সেরকম শাস্তি'
জুনিয়র ডাক্তার দেবজ্যোতি দাশগুপ্ত ডি ডাব্লিউকে বলেছেন, ''যেরকম প্রমাণ দিয়েছে, সেরকম রায় হয়েছে। আমরা সকলের শাস্তি চাই। আমরা আইনের উপর ভরসা রেখে আন্দোলন করেছি। অন্যদের শাস্তি চাইছি।''
সঞ্জয়ের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া
সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী বলেছেন, ''আমরা বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বিরল থেকে বিরলতম মামলা হলেও যদি মানসিকতা বদলের সুযোগ থাকে, তখন ফাঁসি দেয়া হয় না। যখন বিকল্প শাস্তি নেই, তখনই ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হবে। জেলে মানুষের সংশোধন হতে পারে। আমার মনে হয়, সঞ্জয় উচ্চ আদালতে যাবে। সঞ্জয় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল।''
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''আমি ফাঁসি চেয়েছিলাম। বিচারক তার রায় দিয়েছেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের হাত থেকে তদন্তভার নিয়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের হাতে কেসটা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির নির্দেশ পেতাম। আমরা তিনটি কেসে ৫৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিয়েছি। ''
কী বললেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য?
আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “এটা স্বাভাবিক রায়। যথেষ্ঠ কঠিন সাজা। মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ঠিকই করেছেন বলে আমার মনে হয়। মৃত্যুদণ্ড থাকাই উচিত নয়। বিচারক সমস্ত তথ্য প্রমাণ ঘেটে এই রায় দিয়েছেন।”
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
রবিন দে ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''খুবই সুপারফিশিয়াল রায়। সকলেই জানেন, অনেকে মিলে এই জঘন্য কাজটা করেছে। ফরেনসিক ল্যাবরেটারি বলেছে, একাধিক মানুষের সিমেন পাওয়া গেছে। কিন্তু সে ব্য়াপারে কোনো রায় এলো না। অসমাপ্ত বিচার বলে মনে হয়। উচ্চ আদালতে নিশ্চয়ই আবেদন জানানো হবে।''