1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ

১০ নভেম্বর ২০২৩

আমদানিনির্ভর পণ্যের সরবরাহ কমে গেলে বাজারে সংকট দেখা দেয়, দাম বেড়ে যায়৷ দেশে উৎপাদিত পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সেসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়- এমন অভিযোগও দীর্ঘদিনের৷

https://p.dw.com/p/4Yg1O
Bangladesch | Dhaka Karwan Market
ছবি: Samir Kumar Dey/DW

যেসব পণ্যের দাম বাড়তেই থাকে, সেগুলো আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও কখনো কখনো কমতে শুরু করে দাম৷ তবে এভাবে বাজার সাময়িকভাবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি, তাই সংকটের স্থায়ী সমাধানের আশাও জাগেনি৷

এমন পরিস্থিতিতে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তারা বলছেন, শুল্কহার কমিয়ে আমদানির ক্ষেত্র বাড়াতে হবে৷ মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতেও পদক্ষেপ নিতে হবে৷

ঘাটতি থাকায় প্রতি বছরই পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ৷ ভারত থেকে সবথেকে বেশি পেঁয়াজ আসে৷ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বা নতুন করে রপ্তানি শুল্ক বসালে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়৷

বছরজুড়েই ডিমের দাম আকাশছোঁয়া৷ কোল্ডস্টোরেজে আলু থাকার পরেও তা বাজারে না ছেড়ে দাম বাড়িয়েছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে৷ দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় ডিম ও আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ আমদানির ডিম ও আলু বাজারে আসার পর বাজারে এসবের দাম কিছুটা কমেছে৷

বেআইনিভাবে খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুত সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা না মানলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে এ বছর ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন' করেছে সরকার৷ তবে ওই আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না৷

সাপ্লাইচেইন ঠিক রাখতে আমদানি করা হয় - এমন দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পণ্য আমদানি হলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে৷ যারা সুযোগ নেয়, আমদানি করলে তারা চাপে পড়ে৷ কখনো কখনো কৃষিপণ্যের দাম বাড়লে সেগুলো আমদানির সিদ্ধান্ত নেই৷''

‘‘কৃষিপণ্যের দামের বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে কৃষকদের ক্ষতি না হয়৷ এজন্য কৃষিপণ্য আমাদানির আগে একটু অপেক্ষা করি৷ যখন দেখি সম্ভব হচ্ছে না, তখন আমাদানির সিদ্ধান্ত হয়৷ আমদানির ক্ষেত্রে আইনগত বিধিনিষেধ আছে৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলেই কৃষিজাত পণ্য আমদানি করতে পারে না৷ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়৷ কৃষি মন্ত্রণালয় অনেক সময় দেখে কৃষকদের ক্ষতি হবে কিনা৷”

বাংলাদেশে প্রতিযোগিতার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে নেই: গোলাম রহমান

আমদানি শুল্ক কমানোর এখতিয়ারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে- এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আলু, ডিম আমদানি হচ্ছে৷ পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করা আছে কিন্তু গ্লোবাল মার্কেটে পেঁয়াজের দাম বেশি, আমাদের ওপরও তার প্রভাব আছে৷ মোটামুটি প্রয়োজনীয় যেগুলো, সেগুলোর আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে৷’’

ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখন কেউ চান্স নিতে চায়, যার যার মতো করে সুযোগটা নেয়৷ সেটাকে হয়ত সিন্ডিকেট বলা হয়, যখন দাম পায়৷ দেখা যায়, আলু ফেলে দিচ্ছে রাস্তায়, দুধের দাম পাচ্ছে না বলে দুধ ফেলে দিচ্ছে, সেটা তো কোনো সিন্ডিকেট না; যার যার মতো করে ফেলে দিচ্ছে৷ আমরা কি তখন বলি তারা সিন্ডিকেট করে আলু ফেলে দিচ্ছে? ব্যবসায়ীরা যারা সুযোগ নিতে চায়, তারা নেয়৷ তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে কেউ যাতে সিন্ডিকেট করতে না পারে৷'' 

আমদানি-রপ্তানির চিত্র

সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন চাল ও গম মজুদ আছে৷ এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৫ টন চাল ও ৬৭৪ টন গম৷ গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিআর, কাবিখারসহ সরকারি কর্মসূচিগুলোতে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে৷ সরকারি গুদামে এখন ২২ লাখ ৭২ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদের সক্ষমতা রয়েছে৷

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩৮১ দশমিক ৪৫ লাখ টন চাল ও ১০ দশমিক ৮৬ লাখ টন গম উৎপাদন হয়৷ আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪১৫ দশমিক ৬৯ লাখ টন চাল ও ১১ দশমিক ৬০ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে ৬৯ হাজার ৪৯৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম৷ আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৩৪০ মিলয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা তার আগের অর্থবছরের থেকে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি৷

কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মহামন্দায় ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় কমিয়েছে বাংলাদেশ৷ এর ফলে যেসব পণ্য কম আমদানি হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে৷

২০২২-২৩ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের থেকে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম দুধ ও গুড়া দুধ আমদানি হয়েছে৷ বাজারে সব ধরনের দুধের দাম এখন সবথেকে বেশি৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ কম গম আমদানি হওয়ায় বাজারে আটা ও ময়দার দাম এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷

উত্তরণের পথ কী?

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বিদিশা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূল্যস্ফিতির কারণ হচ্ছে, যে পণ্যগুলো আমদানি করতে হয়, সেগুলোর সঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য মূল্যমান নির্ভর করবে৷ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় আমদানিতে মূল্যমানের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়৷ দেশের বাজারে কিছু পণ্য রয়েছে, কোনো কারণে সরবরাহ কমে গেলে বা চাহিদা বেড়ে গেলে বাজারে মূল্য বেড়ে যায়৷’’

সরবরাহ-ব্যবস্থা অনেক সময় প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ করে না- এমন মত প্রকাশকরে বিদিশা বলেন, ‘‘এর কারণে মূল্যস্ফীতি হলে তা ব্যাখ্যার বাইরে থেকে যায়, দেশে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় চলে এসেছে৷ সরবরাহ ব্যবস্থায় কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে যত বেশি মানুষ থাকবে, তত বেশি তারা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে৷ ক্রেতা-বিক্রেতাকে যত কাছাকাছি আনা যাবে, সরবরাহ-ব্যবস্থা তত স্মুথ হবে৷''

‘‘অনেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন৷ অনেক সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়৷ বাজার-ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করলে এগুলো হওয়ার কথা ছিল না৷ বাজার ব্যবস্থাপনাকে খুব শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার৷ বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থাকে যারা বিঘ্নিত করছে, তাদেরকে শক্তভাবে নজরদারি এবং শাস্তির মধ্যে আনতে হবে৷ চাঁদাবাজিসহ ব্যবসার কিছু অনাকাঙ্খিত খরচ থাকে৷ এই জায়গাগুলো কমাতে হবে৷ আমদানি শুল্ক কমাতে পারলে সেটাও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে৷’’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলেই কৃষিজাত পণ্য আমদানি করতে পারে না: টিপু মুনশি

ক্যাব-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘‘ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো, বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা৷ বাংলাদেশে প্রতিযোগিতার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে নেই৷ নানাভাবে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশে শুল্কহার প্রতিবেশী যেকোনো দেশের থেকে অনেক বেশি এবং অনেক পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ৷ এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়৷ যদি শুল্কহার সহনীয় পর্যায়ে থাকে আর আমদানির পথটা অবাধ থাকে, তাহলে কিন্তু বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ে৷''

গোলাম রহমান জানান, করোনা শুরুর আগে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. জায়েদি সাত্তারের একটা গবেষণায় বলা হয়েছে, আমদানি নিষিদ্ধের কারণে বা উচ্চ শুল্কের কারণে এক বছরে বাংলাদেশের ভোক্তাদের ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে৷

‘‘দেশে মজুত আইন আছে, এটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করলে কেউ মজুত করে সংকট সৃষ্টি করতে পারবে না৷ ওই আইন প্রয়োগ করে ব্যবসায়ীকে তাদের অপকর্মের জন্য দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার নজির খুব বেশি নেই৷ বাজার অভিযান করে মাঝেমাঝে কিছু জরিমানা করা হয়৷ কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীরা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি৷’’

গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশে মূদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে৷ পণ্যের অভাবে কিন্তু এটা হয়নি৷ পৃথিবীর সব দেশ মূদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে সফল হয়েছে৷ তারা মুদ্রানীতি, সুদনীতি, রাজস্ব নীতি, সরকারের আয়-ব্যয় নীতি ব্যবহার করে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনেছে৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনও বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য