‘আফ্রিকার জননী'’ মিরিয়াম মাকেবা
১১ নভেম্বর ২০১০মিরিয়াম মাকেবা তাঁর সংগীতের মাধ্যমে সারা জীবন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন৷ গেয়েছেন স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, শান্তি ও সম্প্রীতির গান৷ তাঁর মাতৃভূমি দক্ষিণ আফ্রিকায় তখনকার বর্ণবৈষম্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে সবসময় উচ্চকন্ঠ ছিলেন মিরিয়াম মাকেবা৷
মিরিয়াম মাকেবার জন্ম ১৯৩২ সালের চার মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে৷একেবারে অল্প বয়স থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ৷ স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোরাস সংগীতে অংশ নেন৷ পঞ্চাশ দশকে জ্যাজ সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি৷ ১৯৫৯ সালে বর্ণবৈষম্য বিরোধী একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘কাম ব্যাক আফ্রিকা'য় অংশ গ্রহণের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসকগোষ্ঠীর রোষের কবলে পড়েন মিরিয়াম মাকেবা৷ নির্বাসনে যেতে হয় তাঁকে৷ ষাটের দশকে তাঁর হিট গান ‘পাটা পাটা' তাকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি৷ ঐ প্রথম একজন আফ্রিকান সংগীত শিল্পীর গান অ্যামেরিকার হিট গানের তালিকায় প্রথম দশটি গানের মধ্যে স্থান পায়৷
‘পাটা পাটা' গানটি তাঁকে বিশ্বখ্যাতি এনে দিলেও এ ধরনের চটুল গানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল খুব কম৷ বরং নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে গান গাইতেই ভালবাসতেন তিনি৷
অ্যামেরিকায় হ্যারি বেলাফন্টে, জেমস ব্রাউন, পল সাইমন ও আরো বহু খ্যাতিমান সংগীত শিল্পীর সাথে অনুষ্ঠান করেছেন তিনি৷ গ্র্যামি পুরস্কার সহ আরো বহু সম্মাননায় ভুষিত হয়েছেন এই খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী৷ বর্ণবাদবিরোধী সংগীতের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীক৷
১৯৯০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার অনুরোধে পরে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন মিরিয়াম মাকেবা৷ দু'হাজার আট সালের দশ নভেম্বর প্রিয় স্বদেশভুমি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বহু দূরে দক্ষিণ ইটালির এক ক্লিনিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই স্বনামধন্যা ব্যক্তিত্ব, ‘আফ্রিকার জননী’৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর৷ মৃত্যুর আগের দিনও তিনি সতেজ, স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠে গান গাইছিলেন ইটালিতে মাফিয়া বিরোধী একটি কনসার্টে৷
প্রতিবেদন: মারুফ আহমদ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক