আফগান উদ্বাস্তু আজ সার্বিয়ার ‘খুদে পিকাসো’
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ ‘খুদে পিকাসো’-কে সার্বিয়ান পাসপোর্ট পর্যন্ত দিতে চেয়েছেন, বিশেষ করে দশ বছরের আফগান উদ্বাস্তু সার্বিয়ার এক ক্যানসার রোগীর জন্য অর্থ সংগ্রহে সাহায্য করার পর৷
সার্বিয়ায় আটকে পড়া উদ্বাস্তু
দশ বছর বয়সের আফগান কিশোর ফরহাদ নুরি তার পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে গত আট মাস ধরে বেলগ্রেডের কাছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আটকা পড়ে রয়েছে, কেননা তাদের পশ্চিম ইউরোপে যাবার প্রচেষ্টা এ যাবৎ ব্যর্থ হয়েছে৷ তবে ফরহাদের একটি গুণ আছে: সে অসাধারণ ছবি আঁকতে পারে, যা তাকে অন্তত স্থানীয় পর্যায়ে খ্যাতি এনে দিয়েছে৷ ছবিতে ফরহাদের আঁকা আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
স্মার্টফোন থেকে ছবি
স্মার্টফোনের ছোট স্ক্রিনে ফটো দেখে দেখে প্রতিকৃতি আঁকে ফরহাদ৷ তার বিশেষত্ব হলো ড্রয়িং আর শেডিং৷ সার্বিয়ায় পৌঁছানোর পর সে এনজিও-দের তাগিদে আর্ট ক্লাসে ঢোকে৷ সেখানে তার আঁকার প্রতিভা দেখে কিছুদিনের মধ্যেই তার নাম হয়ে যায় ‘লিটল পিকাসো’৷
সার্বিয়ার হিরো
টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ফরহাদ নুরি৷ তুরস্ক আর গ্রিস হয়ে তাঁর পরিবার সার্বিয়ায় পৌঁছায়৷ ‘‘শিবিরে আমার ছবি আঁকতেই ভালো লাগে, মানুষের মুখ, আমার নিজের অনুভূতি’’, গত মার্চ মাসে এপি সংবাদ সংস্থাকে বলে ফরহাদ৷
কোথায় দেশ?
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ সম্প্রতি ফরহাদ ও তার পরিবারবর্গের সঙ্গে দেখা করার পর তাদের সার্বিয়ার নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছেন৷ ‘‘আমি জানি, তুমি কতটা পথ পার হয়ে এসেছো আর তুমি সুইজারল্যান্ড যেতে চাও’’, ভুচিচ ফরহাদকে বলেন৷ ‘‘তবে তুমি যদি এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নাও, তাহলে আমরা তোমাকে এখনই নাগরিকত্ব দিতে রাজি৷’’ ফরহাদও ভুচিচকে একটি উপহার দিয়েছে – তার নিজের হাতে আঁকা ভুচিচের ছবি৷
ফ্রেন্ড ইন নিড
ফরহাদ অপরকেও সাহায্য করতে জানে৷ সম্প্রতি বেলগ্রেডের একটি কাফেতে তার প্রথম একক প্রদর্শনী হয় ক্যানসার রোগ থেকে সেরে ওঠা এক সার্ব কিশোরের থেরাপির জন্য টাকা তুলতে৷ অন্যদের সাহায্য করা যে কতোটা জরুরি, সেটাই দেখাতে চেয়েছিল ফরহাদ – সাংবাদিকদের বলেছে সে৷
‘অসাধারণ প্রতিভা’
ফরহাদের দাতব্য প্রদর্শনীতে তার আঁকা খুশি ঝলমল একটি হাতির ছবির পাশে ফরহাদ৷ বিভিন্ন এনজিও মিলে এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে, সাহায্য করেছেন সার্বিয়া সরকার৷ সার্বিয়ার উদ্বাস্তু সংস্থার এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ফরহাদের ‘‘অসাধারণ প্রতিভা৷’’
দীর্ঘ যাত্রা
বাবা, মা আর দুই ভাই-এর সঙ্গে বেলগ্রেডে তার প্রদর্শনীতে বসে ফরহাদ৷ নুরি পরিবার দু’বছর আগে আফগানিস্তান ছাড়ে ইউরোপে যাবায় আশায় ও শেষমেষ সার্বিয়া পৌঁছায়, যদিও তারা আরো পশ্চিমে যেতে চেয়েছিল৷ সার্ব প্রেসিডেন্ট ভুচিচ তাদের শুধু নাগরিকত্বের প্রস্তাবই দেননি, ফরহাদের বাবার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবেন বলেও জানিয়েছেন৷
ফরহাদের আঁকা সালভাডোর ডালির প্রতিকৃতি
ডালি জানলে হয়তো খুশি বৈ অখুশি হতেন না৷ আপাতত ফরহাদ ছবি আঁকছে আর স্বপ্ন দেখছে, সে একদিন সুইজারল্যান্ডে চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি আর ভাষাশিক্ষার পাঠ নিতে পারবে৷ শুধু তার শিল্পীজীবনই নয়, তাঁর গোটা জীবনটাই যে সামনে পড়ে!