1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আকাশ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একদিকে কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ চলছে৷ অন্যদিকে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কার্বন শুষে নেবার প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে৷ ভারতের এক কোম্পানি ড্রোনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে৷

https://p.dw.com/p/4Glji
মানববিহীন ড্রোন আকাশ থেকেই বৃক্ষরোপন করতে পারে৷ বীজ বপনের এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন অরণ্য সৃষ্টি বা ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গল আবার চাঙ্গা করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷

DW Eco India Sendung | Drohne
মানববিহীন ড্রোন আকাশ থেকেই বৃক্ষরোপন করতে পারে৷ বীজ বপনের এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন অরণ্য সৃষ্টি বা ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গল আবার চাঙ্গা করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷ছবি: DW

মেরু অঞ্চলে বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি. তাপপ্রবাহর মতো ঘটনা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধাক্কা আমাদের হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিশাল ভূমিকা রয়েছে৷ আমাদের বায়ুমণ্ডলে যত বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকবে, জলবায়ুও তত উষ্ণ হবে৷

বেড়া চলা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাছপালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সেগুলি সিওটু শুষে নেয়৷ সেইসঙ্গে জীবজগতের জন্য অক্সিজেনও সৃষ্টি করে৷ গোটা বিশ্বে বছরে দেড় হাজার কোটি পর্যন্ত গাছ কাটা হয়৷

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতির ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত ক্রান্তীয় অঞ্চলে বন নিধনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ ভারতে কৃষিকাজ, গবাদি পশু পালন ও গাছ কাঠার কারণে প্রতি বছর গ্রীষ্মমন্ডলীয় জঙ্গলের বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংস হচ্ছে৷

ভারতে কিছু কোম্পানি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে চায়৷ যেমন ‘সিডকপ্টার' নামের কোম্পানি উদ্ভাবনী বনায়ন প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে আগ্রহী৷ কোম্পানির মানববিহীন ড্রোন আকাশ থেকেই বৃক্ষরোপন করতে পারে৷ বীজ বপনের এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন অরণ্য সৃষ্টি বা ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গল আবার চাঙ্গা করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷

সিডকপ্টারের সর্বশেষ প্রকল্পের নাম ‘হরা বাহারা'৷ এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ১০০ কোটি বৃক্ষরোপণের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷ সিডকপ্টারের প্রযুক্তির পেছনে এক স্টার্টআপ কোম্পানির অবদান রয়েছে৷ কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা সুরজ পেড্ডি বলেন, ‘‘বিগত কয়েক বছর ধরে কার্বন নির্গমনের উপর নজর দিলে দেখবেন, গত দশকে কী মাত্রায় সেটা বেড়ে গেছে৷ অদূর ভবিষ্যতেও একই হারে বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস৷ সেই পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য সমান মাত্রার প্রযুক্তির প্রয়োজন৷ ইউএভি সিডিং সেটা সম্ভব করার অন্যতম উপায়৷''

প্রতিটি ড্রোন দশ কিলো পর্যন্ত বীজের গোলক বহন করে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫,০০০ বীজ থাকে৷ নির্দিষ্ট এলাকার উপর সেটি উড়তে উড়তে মাটির উপর গোলকগুলি নিক্ষেপ করে৷ তারপর সেই বীজ থেকে গাছ জন্মানোর কথা৷

সিডকপ্টারের প্রযুক্তি বিশাল মাত্রায় বৃক্ষরোপণ সম্ভব করে৷ মানুষের তুলনায় ড্রোন অনেক বেশি বীজ বপন করতে পারে৷ একটি মাত্র ড্রোন দিনে দশ হেক্টরের বেশি জমির উপর কাজ করতে পারে, যা ৪০ জন মানুষের পরিশ্রমের সমান৷

আরেকটি সুবিধা হলো, মানুষের জন্য চরম দুর্গম জায়গায়ও ড্রোন পৌঁছতে পারে৷ সুরজ পেড্ডি বলেন, ‘‘ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অসাধারণ, যেমন রাজস্থানের মরুভূমি, উত্তরাখণ্ডের তরাই, পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ এলাকা৷ অর্থাৎ মানুষ অনেক জায়গায় পৌঁছতে পারে না৷ বর্তমানে তেমন কার্যকলাপ চলছে না৷ সিডকপ্টার মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের সে সব এলাকায় সহজেই পৌঁছে যেতে পারে৷''

বীজ বপণে ড্রোন!

আকাশ থেকে বীজ বপনের আগে ড্রোন এলাকার উপর জরিপ চালায়৷ তারপর স্থানীয় পর্যায়ে বীজের গোলক প্রস্তুত করা হয়৷ গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই প্রকল্প মানুষের ক্ষমতায়ন করতে চায়৷ প্রকল্পের ম্যানেজার শাহিল স্বরূপ বলেন, ‘‘১৪টি সক্রিয় জেলার ৯০০ অরণ্যে প্রভাব বিস্তার করে পরিবর্তন আনাই মূল আইডিয়া৷ গ্রাম পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতি এবং বনায়ন এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য৷''

শুধু বীজ বপন করেই সিডকপ্টারের কাজ শেষ হয় না৷ চারাগাছের উপরেও নজর রাখা হয় এবং এক ‘ডেটা হাব' সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গলের সুষম বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়৷ সুরজ পেড্ডি বলেন, ‘‘একবার ছবি তোলার পর আমরা নির্দিষ্ট অ্যালগোরিদম চালিয়ে ইমেজারি বিশ্লেষণ করে গাছের সর্বোচ্চ বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশগত মানদণ্ড সৃষ্টি করি৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বুঝতে পারি, জঙ্গলের ঠিক কোন অংশের দেখাশোনা করা উচিত, কোথায় গাছের উচ্চতা কম এবং বীজের গোলকের ঠিক কোন মাত্রা সেখানকার জন্য উপযুক্ত৷''

সিডকপ্টার বৃক্ষরোপণের কাজে সফল হচ্ছে৷ তবে সেই গাছ বেড়ে ওঠা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেবার কাজ শুরু করতে আরও সময় লাগবে৷ এছাড়া অন্য সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে৷ পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ক্রিস অ্যাডামস মনে করেন, ‘‘শুধু একটি কোম্পানির কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য পূরণ করতে তারা ভারতের এক এলাকায় বাড়াবাড়ি সংখ্যায় গাছ লাগানোর কথা বলে৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি দূর করা তাদের লক্ষ্য নয়৷ ফলে এমন উদ্যোগ অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কখনো কখনো কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপে বিচ্যুতি ঘটায়৷''

বনায়ন আসলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্যে একাধিক কৌশলের একটি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত৷ ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীকে কার্বন নিউট্রাল করতে হলে কার্বন নির্গমন কমানো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত৷ এমনকি কিছু কোম্পানি নির্গমন কমানোর বদলে নিজেদের পরিবেশবান্ধব প্রমাণ করার লক্ষ্যে প্রচারের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করছে৷

আপাতত সিডকপ্টার টেকসই পদ্ধতিতে বৃক্ষরোপণ করে চলেছে৷ কিন্তু আমাদের জঙ্গল রক্ষার কাজেও এটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যাতে সেই জঙ্গল ও আমাদের ইকোসিস্টেম আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে৷ ফলে জীববৈচিত্র্যও আরও শক্তিশালী হবে এবং সেই প্রবণতা স্থানীয় সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা বয়ে আনবে৷

হা থান লে নুয়েন/এসবি