1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান নাই কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ‘জেগে উঠেছে’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক), সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)৷

https://p.dw.com/p/4d9JS
বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবন থেকে আটকেপড়াদের উদ্ধারকাজ চলছে
বেইলি রোডে এক ভবনে আগুন লাগার পর রোববার থেকে বহুতল ভবনের রেষ্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছেছবি: Mahmud Hossain Opu/picture alliance/AP

রোববার রাত থেকে বহুতল ভবনের রেষ্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ এই অপরিকল্পিত অভিযান কোনো কাজে আসবে কী না৷ আরো যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেখানে অভিযান হচ্ছে না কেন? এসব ভবনের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা কি রেহাই পেয়ে যাবে? আর এই অভিযান কতদিন চলবে?

প্রথমে শুরু করে ডিএমপি৷ রোববার বিকাল থেকে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অনেককে আবার সতর্ক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের এই অভিযানে আগুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে কী না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান৷

অন্যদিকে সোমবার অভিযান শুরু করেছে রাজউক৷ তারা ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক' ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে৷ আর ওই ভবনের  ছাদের খাবার জায়গা ভেঙে ফেলেছে৷ ১৫ তলা ভবনটিতে অফিসের অনুমোদন থাকলেও সেখানে রেস্তোরাঁ, কাপড় এবং ওষুধের দোকান দেয়া হয়েছে৷ আর ছাদ খোলা রাখার কথা থাকলেও সেখানে রুফটপ রেস্তোরাঁ করা হয়েছে৷

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনও সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে৷ ওই ভবনে অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ তবে সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের আগেই  খবর পেয়ে ওই ভবনের হোটেলগুলো বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ৷

‘আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?’

অবশ্য শুধু এই হোটেল রেস্তোরাঁ কেন্দ্রিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স দিয়েছে৷ আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি৷ ভবন মালিক রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন তুলেছে৷ রাজউক এত দিন কিছু বলেনি৷ আমরা তো মাত্র ভাড়া নিয়েছি৷ আমাদের রেস্তোরাঁর সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব আমাদের৷ কিন্তু ভবনের সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব তো মালিকের৷ আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? এই সব হোটেল রেস্তোরাঁকে কারা অনুমোদন দিলো? আমরা তো বহুবার বলেছি আমাদের সঙ্গে কথা বলে অনুমোদন দেন৷ কিন্ত তারা তা না করে নানা সুবিধা নিয়ে অনুমোদন দিয়েছে৷'' রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ঢাকায় এক হাজার এবং সারাদেশে ৬০ হাজার বলে জানান তিনি৷

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ পরিদর্শনে রাজধানী ঢাকায় দুই হাজার ৬০৩টি ভবন আগুনের অতি ঝুঁকিতে আছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান৷ অতি ঝুঁকির তাালিকায় ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন আছে৷

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম  জানান, ‘‘আমরা যে অভিযান শুরু করেছি তা পুলিশ পাওয়া সাপেক্ষে অব্যাহত থাকবে৷ আমাদের ১২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট আছে৷ তারা সবাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন৷ তবে অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের পুলিশ পেতে হবে৷''

ঢাকার রেস্তোরাঁই কি শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে, না আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘না আরো ঝঁকিপূর্ণ ভবন আছে৷ সেই সব ভবনেও আমরা অভিযান চালাবো৷ আমরা নিরপত্তা ব্যবস্থা দেখব৷''

তবে তালিকায় এরকম কতগুলো ভবন আছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মোটামুটি একটা তালিকা আছে৷ তবে আমরা তো তালিকা আগে প্রকাশ করব না৷ এটা গোপনীয় তথ্য৷''

ড্যাপের সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮ ভাগ ভবন অবৈধ৷ আর বাকি ১২ ভাগ কোনো না কোনো ভাবে ব্যত্যয় করেছে৷ রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে৷

এদিকে ডিএমপির অভিযানও চলবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক থানার ওসিরা তৎপর হয়েছেন৷ প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল রেস্তোরাঁকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি৷ তারপর অভিযান চালাচ্ছি''

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ না, আমরা মূলত কোনো স্থাপনায় ঝঁকিপূর্ণ কোনো বস্তুও উপস্থিতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি৷ যা মানুষের প্রাণ হানির মত কারণ হতে পারে৷  আইনে আমরা যেটুকু পারছি সেটুকু করছি৷ আরো অনেক অনিয়ম আছে৷ তা দেখার জন্য আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে৷ সবাই দেখলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷''

তবে এই ধরনের যে যার মতো অভিযানের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান৷ তিনি বলেন, ‘‘ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা আছে৷ সেটা ধরে সরকারের ছয়-সাতটি সংস্থা যারা এর দায়িত্বে আছে তাদের সমন্বিত অভিযান দরকার৷ তা না হলে এই অভিযান তেমন কাজে আসবে না৷''

তার কথা, ‘‘এখন শুধু রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু হয়েছে৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ তো আরো অনেক ভবন আছে৷ সেখানে অভিযান নেই কেন? আর রেষ্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কর্মচারীদের আটক করা হচ্ছে৷ এটা অন্যায়৷ কারণ তারা তো কাজ করতে এসেছেন৷ওই ভবনের মালিক রেস্তোরাঁ মালিক তাদের তো আটক করা হচ্ছেনা৷ বেইলি রোডের ভবনের মালিককে তো এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷''

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা অনেক বড়৷ সেখানে হাত দিতে হবে৷ এইসব ভবন, হোটেলের পারমিশন কারা দিয়েছে? এখানে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তরা জড়িত৷ তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা কেন? তাদের বিরুদ্ধে অভিযান কবে হবে? কে চালাবে?''

ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, তারাও সোমবার থেকে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন৷ তিান বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে হোটেল-রেস্তোরাঁ, এরপর হাসপাতাল, ক্লিনিকে অভিযান চালাবো৷ পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনায়ই তালিকা ধরে অভিযান হবে৷''

রাজউকের কাছে সর্বশেষ ঢাকায় কত ভবন তার হিসাব নেই৷ তবে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) আওতায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ভবনের সংখ্যা ছিলো ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৪টি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য