1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অলিম্পিকে বাংলাদেশ : সাইদুর থেকে সাগর

রাহেনুর ইসলাম ঢাকা
২৭ জুলাই ২০২৪

‘‘জয় নয়, অংশগ্রহণই বড়''-অলিম্পিকের জনক পিয়েরে দ্য কুবার্তিঁর মূলমন্ত্র এটা। তাই বলে জনসংখ্যার হিসাবে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশের অলিম্পিকে সাফল্য শূন্যই থাকবে?

https://p.dw.com/p/4iohg
প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন
অলিম্পিকে যে খেলাগুলোতে বাংলাদেশ অংশ নেয়, সেগুলোর বেশির ভাগেই একজন অ্যাথলেটের জন্য শুধু খেলে জীবিকা চালানো একপ্রকার অসম্ভব। ছবি: FABRICE COFFRINI/AFP/Getty Images

 

জনসংখ্যা অবশ্য অলিম্পিক সাফল্যের মাপকাঠি নয়। তবে বাস্তবতাটা হচ্ছে এত বেশি জনসংখ্যা নিয়ে আর কোনো দেশ পদকহীন নেই। জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় ৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গো (জনসংখ্যার হিসেবে ১৮ তম) আর মিয়ানমারই (২৬তম) কোনো পদক পায়নি অলিম্পিকে।

১৯৮৪ সালের লস এঞ্জেলেস অলিম্পিক দিয়ে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'-এ পথচলার শুরু বাংলাদেশের। সেবার একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে অংশ নেন সাইদুর রহমান ডন। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নিজের হিটে আটজনের মধ্যে অষ্টম হয়েছিলেন তিনি। টাইমিং ছিল ১১.২৫ সেকেন্ড। ২০০ মিটারে নিজের হিটে ২২.৫৯ সেকেন্ড টাইমিংয়ে আটজনের মধ্যে হন সপ্তম।

২০১৬ অলিম্পিকে সর্বশেষ ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেয় বাংলাদেশের কোনো পুরুষ অ্যাথলেট। সেবার মেসবাহ আহমেদ নিজের হিটে সাতজনের মধ্যে চতুর্থ হন ১১.৩৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে। অর্থাৎ, ৩২ বছর পরও ১০০ মিটারে সাইদুর রহমানের টাইমিং পেরিয়ে যেতে পারেননি মেসবাহ! এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে?

‘ওয়াইল্ড কার্ড' নিয়েই বেশিরভাগ বাংলাদেশি অংশ নিয়েছেন অলিম্পিকে। এবারও ২০১৬ সালের পর প্রথমবার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে কোনো বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন ইমরানুর রহমান। ফলাফল কী হবে, আগে থেকেই অনুমেয়। সবশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ১০.৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে বাংলাদেশের সেরা হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী এই অ্যাথলেট। তার সেরা টাইমিং ১০.১১ সেকেন্ড, যা করেছিলেন লন্ডনে ঘরোয়া একটি প্রতিযোগিতায়।

অলিম্পিকে নিজের সেরা টাইমিং করলেও পদক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইমরানুরের। কারণ, ছেলেদের ১০০ মিটারে ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় নিয়ে পদক পাওয়ার স্বপ্ন দেখাটাই বোকামি। ইমরানুরসহ বাংলাদেশের মোট পাঁচজন ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন প্যারিস অলিম্পিকে।

১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রবিউল ইসলাম (২৮ জুলাই), ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সামিউল ইসলাম রাফি (৩০ জুলাই), ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনিয়া খাতুন (৩ আগস্ট) আর আর্চারির রিকার্ভ এককে সাগর ইসলাম।

পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে কেবল সাগর ইসলামই সরাসরি পেয়েছেন অলিম্পিকের সুযোগ, অন্যরা ওয়াইল্ড কার্ডে। সরাসরি সুযোগ পাওয়ায় সাগরকে নিয়ে চড়েছিল আশার পারদ। কিন্তু বৃহস্পতিবার র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে হতাশ করেছেন তিনি। হয়েছেন ৪৫তম।

অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ৬৪ আর্চারের এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রতিপক্ষ নির্ধারণের জন্য র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডের আয়োজন করা হয়। র‌্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকে থাকা আর্চাররা দুর্বল প্রতিপক্ষ পেয়ে থাকেন। ৪৫ নম্বরে থাকায় সাগরের দুর্বল প্রতিপক্ষ পাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

 সাগর পেয়েছেন সব মিলিয়ে ৬৫৩ পয়েন্ট। অথচ গত জুনে তুরস্কে অলিম্পিক বাছাইয়েও র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে সাগরের স্কোর ছিল ৬৬০ পয়েন্ট। প্যারিসের প্রচণ্ড বাতাস ও রোদের মধ্যে যে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি সেটা সহজেই বোঝা গেছে।

৬৮৬ স্কোর করে র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে প্রথম হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কিম উজিন। তার সঙ্গে ৩৩ পয়েন্টের এই বিশাল ব্যবধানই বলছে অলিম্পিকের মতো সমুদ্রে এসে বাংলাদেশের সাগরদের মতো খেলোয়াড়দের হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা।

টোকিও অলিম্পিকে সাগরের মতো সরাসরি সুযোগ পেয়েছিলেন রোমান সানা। তিনি নিজের ইভেন্টে  রিকার্ভ এককের র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৭ আর চুড়ান্ত ফলে হয়েছিলেন ৩২তম। তার স্কোর ছিল ৬৬২। টানা দুই অলিম্পিকে দুই শিষ্যকে সরাসরি টিকিট পাইয়ে দেওয়ায় খুশি কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিক। তবে বাংলাদেশ যে এখনই অলিম্পিক পদক পাওয়ার মতো অবস্থানে আসেনি সেটাই অলিম্পিকে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এই জার্মান কোচ, ‘‘ বাংলাদেশের কারো পদক আনার সম্ভাবনা আপাতত নেই, এবা বাস্তবতা মানতে হবে। অলিম্পিক তো অনেক বড় টুর্নামেন্ট, এমনকি এশিয়ান গেমস থেকেও পদক আনতে হলে যে প্রস্তুতি আর বিনিয়োগ দরকার, সেটি করতে হবে।''

আসল দিকটাই তুলে ধরেছিলেন ফ্রেডেরিক। শুধু ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসাই অন্যান্য খেলাগুলোর পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। স্পন্সররাও এই খেলার দিকে ঝুঁকেছে বেশি। সরকার এই খেলাতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে।  সুযোগ-সুবিধা ও খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা ক্রিকেটেই কিছুটা ‘সম্মানজনক'।

সাঁতার, ফুটবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিক্সের মতো খেলাগুলো সরকার বা স্পন্সরদের কাছ থেকে খুব বেশি সাহায্য পায় না। এজন্য অ্যাথলেটরাও এই খেলাগুলোতে আসতে আগ্রহী নন। দরিদ্র এই দেশে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সন্তানকে খেলাধুলা শেখানোর আগ্রহও তেমন নেই অভিভাবকদের। কারণ, অলিম্পিকে যে খেলাগুলোতেবাংলাদেশ অংশ নেয়, সেগুলোর বেশির ভাগেই একজন অ্যাথলেটের জন্য শুধু খেলে জীবিকা চালানো একপ্রকার অসম্ভব। আর অলিম্পিকের আগে দায়সারা ২-৩ মাসের ক্যাম্প করে গেলে সাফল্য আসবেই বা কীভাবে?

তাহলে কি বছরের পর বছর এভাবেই চলতে থাকবে? একেকটা অলিম্পিক আসবে-যাবে আর ইমরানুর, সাগরদের মতো প্রতিভারা হারিয়ে যেতে থাকবেন অলিম্পিকের মতো মহাসমুদ্রে?

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক