1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থবহ সংলাপের পরিবেশ কোথায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ অক্টোবর ২০২৩

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল৷ তাদের পাঁচ দফা সুপারিশে সংলাপকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4XYbX
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের প্রধান দুই দলই তাদের নিজস্ব এক দফা নিয়ে অনড় অবস্থানে আছে৷ বিএনপি চায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর শাসক দল চায় শেখ হাসিনার অধীনে এখন সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে তার অধীনে নির্বাচন৷
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সংলাপের সম্ভাবনা এখনও দেখছেন না বিশ্লেষকরা (প্রতীকী ছবি)ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে একটি অর্থবহ সংলাপের পরিবেশ আছে কী না৷ আর না থাকলে তার জন্য কী করা দরকার?

চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) একটি যৌথ প্রতিনিধিদল৷ তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরছেন৷

‘দুই দলই এখন এক দফায় আছে’

তার প্রথমটিই হলো একটি অর্খবহ সংলাপ এবং পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন৷

দ্বিতীয় সুপারিশে তারা নির্বাচনের সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অনুরোধ করেছে৷ সেই সঙ্গে নাগরিকদের ভিন্ন মতকেও সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে৷

তৃতীয়ত, অহিংসার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷ 

চাতুর্থত, সব রাজনৈতিক দলকে অর্থবহ ও সমান রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে, যেন তা স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে৷

সবশেষে নাগরিকেরা যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ 

বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি অর্থবহ সংলাপ ওই পাঁচটি শর্তই পূরণ করতে পারে৷ কিন্তু অর্থবহ সংলাপের জন্য যে পরিবেশ দরকার তা এখন নেই৷ আর সেই পরিবেশ তৈরি না হলে সংলাপ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না তারা৷ 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের প্রধান দুই দলই তাদের নিজস্ব এক দফা নিয়ে অনড় অবস্থানে আছে৷ বিএনপি চায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর শাসক দল চায় শেখ হাসিনার অধীনে এখন সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে তার অধীনে নির্বাচন৷ কিন্তু শর্তহীন সংলাপ না হলে সেই সংলাপে কোনো ফল আসবেনা বলে মত বিশ্লেষকদের৷ 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘দুই দলই এখন এক দফায় আছে৷ বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন৷ আর আওয়ামী লীগ চায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন৷ দুই দল যদি এভাবে দুই প্রান্তে অনড় থাকে তাহলে তো কোনো অর্থবহ সংলাপ করা সম্ভব নয়৷ যদি সংলাপ হয়ও তা কোনো ফল বয়ে আনবেনা৷ দুই পক্ষ যদি তাদের এই অনড় অবস্থান ছেড়ে দিয়ে বিকল্প কিছু বের করতে পারে তাহলে অর্থবহ সংলাপ সম্ভব৷ আর এটা হলে বাকি যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব৷''

তার কথা, ‘‘বিএনপির জন্য একটি বড় ইস্যু হবে মামলা৷ শীর্ষ পর্যায়ে যারা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা যদি দণ্ড মওকুফ না পান তাহলে ওই পর্যায়ের অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না৷ আবার তৃণমূলের মামলা প্রত্যাহার না হলে বিএনপি নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারবে না৷ এ ধরনের অনেক সংকট আছে বিএনপির৷ এর সমাধানও হয়তো তারা চাইবে৷ আর এইসব বিষয় বাদ দিয়ে বিএনপি সংলাপে আসবে কী না আমি জানিনা৷''

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘তারা যে অর্থবহ সংলাপের কথা বলেছেন, তার মানে আমি মনে করি শর্তহীন সংলাপ৷ যেখানে কোনো পূর্ব শর্ত থাকবে না, খোলা মনে আলোচনা হবে এবং উদ্দেশ্য হবে মহৎ, রাজনৈতিক অচলবস্থার নিরসন৷ জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে পুলুরাল সেইফগার্ড চিন্তা করে সেটা করতে হবে৷''

তার মতে, ‘‘এখন রাজনৈতিক অচলবস্থা একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে৷ এই অবস্থায় আমি মনে করি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং গ্যারান্টি প্রয়োজন৷ তা না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয়না৷''

গ্যারান্টির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘গ্যারান্টি মানে হলো রিজেনবল আন্ডারস্ট্যান্ডিং, লাস্টিং এবং সেটা বাইন্ডিং৷ দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে৷ অনড় অবস্থানে থাকলেতো আর সমঝোতা হয়না৷''

সংলাপের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সংলাপের জন্য মধ্যবর্তী অবস্থা দেখছিনা৷ দুই পক্ষই তাল গাছ আমার বলে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে আছে৷ শাসক দল সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কথা বলছে আর বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে৷''

তার কথা, ‘‘এই পরিস্থিতিতে যদি অর্থবহ সংলাপ না হয় তাহলে দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাবে৷ লেজিমেটিসির সংকট কাটবেনা এবং বর্তমান পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে মোড় নিতে পারে৷''

এদিকে, সংলাপের ব্যাপারে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগের অবস্থানেই আছে৷ আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে সংলাপ হবেনা৷ আর বিএনপি বলছে, সংলাপ হতে হবে এই সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘এই সরকার সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অর্থবহ সংলাপের কোনো পরিবেশ রাখেনি৷ গতকালও (শনিবার) তারা বলেছে যেকোনো প্রকারের একটা নির্বাচন তারা করবে৷ আর সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলো জনগণের অংশগ্রহণ৷'' 

‘আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং গ্যারান্টি প্রয়োজন’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সংলাপ চাই৷ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংলাপ হলে সেটা অর্থবহ সংলাপ হবে৷ কিন্তু সরকার সেটাকে পাত্তা দিচ্ছেনা৷ আমাদের আন্দোলনকে পাত্তা দিচ্ছেনা৷ সরকারই চায়না অর্থবহ সংলাপ হোক৷ কারণ তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না৷''

এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি সংবিধানের অধীনে যে কোনো বিষয় নিয়ে সংলাপ করা যেতে পারে৷ আমরা যেকোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকে কথা বলতে পারি৷ সংবিধানের বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে কথা হবেনা৷''

তার কথা, ‘‘সংবিধানের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা হতে পারে৷ তারা যদি নির্বাচনে আসে তাহলে এই সরকারের অধীনে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন আরো ভালো করার জন্য কোনো সাজেশন থাকলে সেটা নিয়ে কথা হতে পারে৷ তবে বিএনপি যে বলছে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে৷ সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা বা সংলাপ হবেনা৷''