অযোধ্যা মামলার রায় নিয়ে নানা মত
১ অক্টোবর ২০১০রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমির মালিকানা নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার প্রধান একটা দিক নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে৷ সেটা হলো, রামের জন্মস্থানকে চিহ্নিত করে তাকে আইনি বৈধতা দেয়া৷ আইনজ্ঞদের মতে, রাম ঐতিহাসিক চরিত্র নয়৷ শুধু ধর্মীয় একটা বিশ্বাসমাত্র৷ ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভিতরে চুপিসারে কেউ রামের বিগ্রহ বসিয়ে এসেছে, কাজেই সেটা রামের মন্দির৷ এটার আইনি বৈধতা পাওয়া উচিত নয়৷ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি মনে করেন, রাম জন্মভূমি প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত হয়নি৷ আইনি বৈধতা দিতে গেলে যে-সব সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগে, তাকে উপেক্ষা করে ধর্মীয় বিশ্বাসকেই ব্যবহার করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়৷
বিচারপতি ধরমবীর শর্মার ব্যাখ্যা, পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ, ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ, মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ লিপি এবং ৩৬১টি গেজেটের তথ্যাদির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়৷ শুধু তাই নয়, মন্দির ভেঙে মন্দিরের যে পিলারে হিন্দু দেবদেবির ছবি আছে, তা ব্যবহার করা হয় মসজিদ নির্মাণে৷ বলা বাহুল্য, সেটা ইসলাম ধর্ম বিরুদ্ধ৷ কোন কোন আইনজীবী বলছেন, রায়ে বিভ্রান্তি আছে৷ মুসলিমদের ৫০০ বছর আগেকার ঘটনা যদি উপেক্ষা করা না যায়, তাহলে হিন্দুদের ৬০ বছরের ঘটনা কি করে উপেক্ষনীয় হতে পারে?
এই রায়ে দেশের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি.চিদাম্বরম সংবাদ মাধ্যমকে আজ বলেন, দেশের প্রতিক্রিয়া শোভন ও মর্যাদাপূর্ণ৷ এখন কেন্দ্রের ভূমিকা স্থিতাবস্থা ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা৷ এই রায়ের সঙ্গে বাবরি মসজিদ ভাঙার কোন যোগ নেই৷ এটা ফৌজদারি আইনি মামলা৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, রায়ের বড় অসঙ্গতি হলো, রামকে একজন লিটিগেন্ট বা আবেদনকারী হিসেবে নেয়া হয়েছে৷ ধর্ম বিশ্বাসই যদি মূল ভিত্তি হয়, তাহলে মধ্যযুগে গ্যালিলিও যখন বলেছিলেন সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে, তখন তাঁকে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত দেবার জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়৷ কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে তা কি চলে? তবে এই রায়ে অশান্তি হবার আশঙ্কা কম৷ ভারত অনেক পাল্টে গেছে৷ বাজার অর্থনীতি দৌলতে ভোগবাদি বিরাট এক মধ্যবিত্ত শ্রেণী উঠে এসেছে৷ তাঁরা গোলমাল চায়না৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন