অমর্ত্য সেনকে সেন্সর!
১৩ জুলাই ২০১৭নামে যদিও ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড, যাদের কাজ প্রতিটি চলচ্চিত্র দেখে, সেটি কোন বয়সের উপযুক্ত, সেই সার্টিফিকেট দেওয়া৷ কিন্তু কাজে তারা সেন্সর বোর্ডের থেকেও দড়৷ এই সেন্সরশিপের শিকার হলেন নোবেল পুরস্কার জয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিশ্রুত অধ্যাপক অমর্ত্য সেন৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর ছাত্র কৌশিক বসুর কথাবার্তার ভিত্তিতে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন অ্যামেরিকা প্রবাসী চলচ্চিত্রকার এবং নিজেও অর্থনীতির একজন অধ্যাপক সুমন ঘোষ৷ সেই কথোপকথনে ভারতের চলতি পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে অমর্ত্য সেনের বক্তব্যে প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছিল গোরক্ষা বিতর্ক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কথা৷ সেই নিয়েই আপত্তি তুলেছে সার্টিফিকেশন বোর্ড৷ পরিচালক সুমন ঘোষকে জানিয়েছে, ‘গরু', ‘হিন্দুত্ব', ইত্যাদি আপত্তিকর শব্দগুলি ‘বিপ' আওয়াজে ঢেকে দিতে হবে৷ তবেই ‘আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান' নামে ওই তথ্যচিত্রটিকে ভারতে মুক্তির ছাড়পত্র দেওয়া হবে৷
এই চূড়ান্ত অপমানজনক সেন্সরশিপের মুখে দাঁড়িয়ে সুমন ঘোষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে তিনি একটি শব্দও আড়াল করবেন না৷ ডয়চে ভেলেকে সুমন জানালেন, এমনটা যে হতে পারে, তা তাঁর প্রত্যাশিত ছিল না৷ কিন্তু তিনি পিছিয়ে আসছেন না৷ আজকাল প্রেক্ষাগৃহে কোনো ছবির মু্ক্তি পাওয়া ছাড়াও একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে, যেখানে বিনা বাধায় ছবিটি দেখানো যায়৷ তিনি প্রথমে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাবেন৷ তাতে যদি কাজ না হয়, তা হলে অনলাইনেই ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করবেন৷ না, এই নিয়ে আদালতে যাওয়া, বা মামলা করার কথা তিনি ভাবছেন না৷ প্রসঙ্গত, সুমনের এই তথ্যচিত্রটি এর আগে ইউরোপে এবং অ্যামেরিকায় দেখানো হয়েছে এবং অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে৷
বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল এই সেন্সরশিপের ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, বিচলিত৷ কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, ‘‘স্পর্ধা যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে, এটা তারই লজ্জাজনক নজির৷'' অভিনেতা এবং কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি এর আগে সুমন ঘোষ পরিচালিত একটি কাহিনিচিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি বলেছেন, এ হলো চূড়ান্ত মূর্খামি৷ অমর্ত্য সেনের বক্তব্য সেন্সর করতে চাওয়া মূর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘটনার খবর পেয়েই টুইট করে জানান, বিরোধিতার প্রতিটি কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে৷ এবার অমর্ত্য সেন!
পরের টুইটেই মমতা লেখেন, যদি অমর্ত্য সেনের মতো লোকও স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে না পারেন, তা হলে সাধারণ নাগরিকের কী হবে!
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, চাইলেই সব কিছু মুছে দেওয়া যায় না৷ প্রসঙ্গ থাকলে প্রশ্ন উঠবেই৷ আর সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন বলেছেন, এই ঘটনা ভারতকে বিশ্বের দরবারে লজ্জিত করল৷ কারণ এতে প্রমাণ হবে, ভারতে বাকস্বাধীনতা বলে কিছু নেই৷
উল্লেখ্য, ভারতের বিজেপি সরকারের অমর্ত্য বিরোধিতা এই প্রথম নয়৷ কারণ বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতির কট্টর সমালোচক অমর্ত্য সেন একাধিক প্রসঙ্গে নির্ভয়ে বিরোধিতা করেছেন সরকারি নীতির৷ তাঁর সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা কমিটি থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয় মোদী সরকার৷ তারপরেও বিমুদ্রাকরণ থেকে গোরক্ষার নামে গুন্ডামি, একাধিক ইস্যুতে বিজেপি সরকারের প্রবল সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক সেন৷ কিন্তু সেই রাগে এভাবে তাঁকে সেন্সর করার চেষ্টা হবে, এটা স্তম্ভিত করেছে মানুষকে৷
বন্ধু, এই অপমানজনক সেন্সরশিপের মুখে দাঁড়িয়ে সুমন ঘোষের কী করা উচিত? লিখুন নীচের ঘরে৷