‘অন্ধকার’ থেকে বের হতে চায় সিঙ্গাপুর
১২ জুলাই ২০১০তবে এগুলো কার্যকর হবে ২০১২ সালে৷ এখন দাবি উঠেছে, এই সময়টি কমিয়ে আনতে হবে৷
ঘটনাটি গত মাসের ২২ তারিখের৷ একটি লরি উল্টে গেলো৷ এর পেছনের খোলা অংশে গাদাগাদি করে বসে ছিলো অনেক শ্রমিক৷ দুর্ঘটনায় তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়৷ তাঁরা সবাই চীন দেশের, কাজ করতে এসেছিলেন সিঙ্গাপুরে৷ আহত হন ১৪ জন৷ ট্রাকের পেছনে যাত্রী বহনের এই দৃশ্য বাংলাদেশে প্রায়ই চোখে পড়লেও দেখা যায় সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও৷ দেশটির প্রভাবশালী সংবাদপত্র বিজনেস টাইমস বলছে, এটা আলোকিত সিঙ্গাপুরের অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্র৷
সিঙ্গাপুরে যাদের এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়, তারা সবাই বিদেশি শ্রমিক৷ বেশিরভাগই আবার বাংলাদেশ ও ভারতের৷ কোম্পানিগুলো খরচ কমাতে বাস ভাড়া না করে লরিতে তুলে কর্মস্থলে নিয়ে যায় শ্রমিকদের৷ আর দুর্ঘটনার বলি হয় শ্রমিকরা৷ সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিদিন অন্তত ২ লাখ শ্রমিক লরি বা ট্রাকের পেছনে চড়ে কর্মস্থলে যায়৷ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গত বছর নিহত হয়েছেন ১৬৬ জন শ্রমিক৷ ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ২১০৷
শ্রমিক পরিবহণের এই পদ্ধতি নিয়ে সিঙ্গাপুরে বেশ কিছুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে৷ কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আর ক'জন শ্রমিক প্রাণ দিলে তবে কর্তৃপক্ষের চোখ-কান খুলবে৷ আরেকজন বললেন, শ্রমিক হত্যার এই খেলা কোম্পানিগুলোকে বন্ধ করতে হবে৷ অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে এই দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় সরকারের টনক নড়ে৷ সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে গত বছর নতুন কিছু বিধি-বিধান জারি করা হয়৷ এতে বলা রয়েছে, লরিগুলোর পেছনের রেলিংয়ের উচ্চতা বাড়াতে হবে৷ তা আরো মজবুত করতে হবে৷ ওপরে আচ্ছাদন দিতে হবে৷ আর নতুন বিধি-বিধান কার্যকর হবে ২০১২ সালে৷
তবে ২২ জুনের দুর্ঘটনার পর আইনপ্রণেতাসহ অনেকে বলছেন, এতদিন অপেক্ষা করা যায় না৷ তা আরো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে৷ পার্লামেন্টে জনশক্তি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হালিমা ইয়াকুব বলেন, ‘‘২০১২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে চলবে না৷ আরো আগে তা করতে হবে৷'' শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তেমনই একজন জলোভান হোয়ামও এই কথায় একমত৷ তিনি বলেন, ‘‘যত দেরি হবে, তত বেশি প্রাণ ঝরে যাবে৷ সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে৷''
গত সেপ্টেম্বরে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিলটি পার্লামেন্টে তোলার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, শুধু শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবলেই চলবে না৷ ব্যবসায়ীদের দিকটিও ভাবতে হবে৷ এই ভাবে শ্রমিক পরিবহণ করায় কোম্পানিগুলোর খরচ অনেক কমে আসে৷ এ কারণেই কোম্পানিগুলোকে বিধি-বিধান বাস্তবায়নে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে৷ তবে পার্লামেন্ট সদস্য হালিমা বলেন, বিধি-বিধান যতদিন কার্যকর না হবে, ততদিন কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের রক্ষায় কোনো মনোযোগ দেবে না৷
এত চাপের মধ্যে নত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে পরিবহণ মন্ত্রণালয়ও৷ পরিবহণমন্ত্রী রেমন্ড লিম বলেন, তারা বিধিবিধান আরো আগে কার্যকরের কথা ভাবছেন৷ শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে মানুষ পরিবহণে লরি ব্যবহার বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি৷ হালিমাও বলেন, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে৷ লরি তো মালামাল পরিবহণের জন্য, মানুষ পরিবহণ কেন হবে? আর বিদেশি শ্রমিক মানে কিছু সংখ্যা নয়, তারাও মানুষ এটা আমাদের বুঝতে হবে৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক