1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিধানে শব্দের ইতিহাস ও বিবর্তন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইনে বাংলা ভাষার  নতুন এক অভিধান আনতে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়৷ শব্দের উৎপত্তি ও ইতিহাসের সঙ্গে তার ক্রমবিবর্তনের রূপ থাকবে এই অভিধানে৷ এই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল৷

https://p.dw.com/p/3Pt3L
Kalkutta Jadavpur  Universität Bengali Wörterbuch
ছবি: DW/P. Samanta

দুই বাংলায় অভিধান রচনার কাজ কম হয়নি৷ বিভিন্ন আঙ্গিকে অভিধান প্রকাশিত হয়েছে৷ এই সব গবেষণার একটা ভিন্ন রূপ সামনে আনতে উদ্যোগ নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা৷ তাঁরা একটি নতুন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছেন, যার নাম ‘শব্দকল্প'৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকদের নিয়ে একটি দল তৈরি হয়েছে৷ তাঁরা বাংলা শব্দভাণ্ডারের বিকাশের ধারা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস' বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে নয়া অভিধান৷ অধ্যাপকরা বলছেন, এটি বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক অভিধান৷ ভারতীয় কোনো ভাষায় এ ধরনের কাজ হয়নি৷

এই কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ‘‘একটি জীবন্ত ভাষার প্রবাহকে নথিবদ্ধ করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য৷ এক একটি শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও বিবর্তন তুলে ধরা হবে৷ অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি যে ভাবে অনলাইনে শব্দভাণ্ডার তুলে ধরে, এটা বাংলা ভাষায় তেমনই একটি অভিধান৷'' এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি বিভিন্ন লেখা সংগ্রহ করে শব্দের তালিকা প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে৷ এই পর্যায়টি বিপুল ও শ্রমসাধ্য৷

চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্যের সময় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বাংলা ভাষায় যা রচিত হয়েছে, তার মধ্যে যা মুদ্রিত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলি সংগ্রহ করার কাজ চলছে৷ পুঁথি, পাণ্ডুলিপির লেখনি নেওয়া হচ্ছে না বটে, তবে উনিশ শতকের গোড়া থেকে যা কিছু মুদ্রিত অবস্থায় রয়েছে, তা গবেষণার অধীনে থাকছে৷ অর্থাৎ মধ্যযুগীয় কোনো সাহিত্য বিংশ শতকে প্রকাশিত হলেও তার শব্দভাণ্ডার থাকছে অভিধানে৷ এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট লেখকের লেখা বাছাই করা হচ্ছে না৷ কাশীরাম দাস, রবীন্দ্রনাথ কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যেমন থাকছেন, তেমন অচেনা লেখকের অজানা রচনায় ব্যবহৃত শব্দও অভিধানে যোগ করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে বই যেমন থাকছে, তেমনই থাকছে পত্রপত্রিকাও৷ অর্থাৎ, সাহিত্য গুণ বিচার করে লেখা সংগ্রহ করা হচ্ছে না৷ যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক শব্দ আহরণই লক্ষ্য৷

সুকান্ত চৌধুরী

এই বিপুল মুদ্রিত রচনা সম্ভার থেকে শব্দের তালিকা তৈরি করা মানুষের পক্ষে কার্যত দুঃসাধ্য৷ তাই পুরো প্রক্রিয়া চলছে কম্পিউটারের মাধ্যমে৷ অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, ‘‘সংগৃহীত লেখাগুলি কম্পিউটারের কাছে পাঠযোগ্য ফরম্যাটে পরিবর্তিত করা হচ্ছে৷ এরপর সেই ফাইল আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটারে৷ কম্পিউটারকে তিনটি তথ্য দেওয়া হচ্ছে- রচনার নাম, লেখকের নাম, ও মুদ্রণের সময়৷ এর ভিত্তিতে যন্ত্রগণক শব্দের তালিকা তৈরি করে দিচ্ছে৷ কোন শব্দ কতবার কীভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, তার তালিকা পেয়ে যাচ্ছি৷''

এই পর্যন্ত কম্পিউটারের কারিকুরি, তার পরই লাগবে মানুষের বুদ্ধি৷ একই বানানবিশিষ্ট একটি শব্দ বাংলায় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়৷ অর্থের এই প্রভেদ কম্পিউটার ধরতে পারে না৷ বাক্যভেদে একই শব্দ বিশ্লষণের কাজ গবেষকরাই করবেন৷ যদিও এই পর্যায়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি৷ আপাতত শব্দ সংগ্রহের কাজই চলছে৷ অধ্যাপক জানান, ঢাকার বাংলা আকাদেমি গোলাম মোর্শেদের সম্পাদনায় তিন খণ্ডের যে অভিধান প্রকাশ করেছে, এটা তারই সম্প্রসারিত রূপ৷

প্রাক্তন উপাচার্য ও ভাষাবিদ পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে৷ সুকুমার সেন বা গোলাম মোর্শেদের বই মুদ্রিত আকারে রয়েছে, এটা আরও ব্যপক আকারে অনলাইনে পাওয়া যাবে৷ ভাষাচর্চার পক্ষে এটা খুবই ইতিবাচক৷'' বছর চার-পাঁচেকের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী গবেষকদের দল৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় চলা ‘শব্দকল্প'-র জন্য ভবিষ্যতে দরকার পড়বে আর্থিক সাহায্যও৷ এই প্রকল্পের জন্য যত টাকাই খরচ হোক না কেন, বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষী মানুষ বিনামূল্যে অনলাইন অভিধান দেখার সুযোগ পাবেন৷