1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগসূত্র ইস্তানবুল !

২৮ জানুয়ারি ২০১০

ইউরোপে বোধহয় দ্বিতীয় আর কোনো শহর নেই, যেখানে রজনী ইস্তানবুলের থেকেও দীর্ঘ, তার থেকেও তরুণ৷ আর তাই বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে ছোট-বড় সবাই ভিড় করে ইস্তানবুলে৷ ভিড় করে সেখানকার বাহারি পানশালা, কাফে, রেঁস্তোরা এবং ক্লাবে৷

https://p.dw.com/p/LiUo
ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যেকার সেই ‘বসপোরাস সেতু’ছবি: AP

তুরস্কের অন্যতম প্রধান শহর ইস্তানবুল

ইস্তানবুলের পুরোনো নাম কন্সটান্টিনোপল৷ এ শহর খুবই প্রাচীন৷ আদিকালে এর নাম ছিল বাইজেন্টিয়াম৷ ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই নামেই সে ছিল পরিচিত৷ সম্রাট কনস্টানটিন সেই বছরেই রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে এর নাম করেন কনস্টান্টিনোপেল৷ পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্য তথা বাইজেন্টিয়াম সাম্রাজ্যের রাজধানী হয় এ শহর ৩৯৫ সাল থেকে৷ ১৪৫৩ সালে তুর্কীরা কনস্টান্টিনোপেল দখল করার পর এ শহরেই ঠাঁই গাড়েন তুর্কি সুলতান৷ নাম হয় ইস্তানবুল৷ ১৯২৩ সাল পর্যন্ত এই ইস্তানবুলই কিন্তু ছিল তুরস্কের রাজধানী৷ আর বর্তমানে ইস্তানবুলকে বলা হয় তুরস্কের সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল৷ সেখানে সারা রাত ধরে চলে একের পর এক মিউজিক, মিউজিক-এর তালে তালে নেচে ওঠে নর-নারী, সৃষ্টি হয় ম্যাজিক !

Kultuhauptstadt Istanbul - Eröffnungsfeuerwerk
ইস্তানবুলের সেই বিখ্যাত হাজিয়া-সোফিয়াছবি: picture alliance / dpa

ইস্তানবুল শহরের একটি ক্লাব ‘সর্টি'

খোলা আকাশের নীচে এই ক্লাবটির ‘ডিজে' তুরস্কের জনপ্রিয় সব গানের ‘রিমিক্স' বাজিয়ে চলেছে৷ একটার পর একটা৷ তার সঙ্গে চলছে নাচ৷ এমনকি এই রাত দুটো পর্যন্তও৷ ‘সর্টি' নামের এই ক্লাবটি কিন্তু বেশ নাম করা ইস্তানবুলে৷ এখানে যারা আসে, তারা বেশ ধনী৷ ‘ফেরারি' বা জলপথে বড়-বড় মটোরবোট জাঁকিয়ে সন্ধে ঘনাতেই ‘বসপোরাস' ব্রিজের ধার ঘেঁসে এই ক্লাবটিতে এসে যায় এরা৷ নৌকো থেকেই লাফিয়ে নেমে পড়ে একেবারে নাচের জায়গায়৷ যেমনটি নেমেছে মেহমেট৷ সে জানায়, ‘‘সাধারণত এখানে ধনী মানুষদেরই সমাগম হয়ে থাকে৷ এই ধরুন ‘হাই সোসাইটি'-র লোকজন, যাঁরা চলনে-বলনে একেবারে ফ্যাশনদুরস্ত, একেবারে ‘আপ-টু-ডেট'৷ এছাড়া, আসেন নারীরা৷ তাদের পায়ে ‘হাই হিল' জুতো, পরনে আধুনিক সব পোশাক৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের লক্ষ্য ধনী পুরুষ৷ আমিও আসি৷ জায়গাটা একটু নাক-উঁচু মনে হলেও এখানে আসতে আমার ভালই লাগে৷ নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়৷ তাদের সাজ-সজ্জা, ‘মেক-আপ' দেখতেও বেশ মজা লাগে৷'' তবে মজা শুধু তারাই পায়, যারা এই ক্লাবে ঢোকার টিকিট কিনতে পারে৷ কারণ, এই ক্লাবে ঢুকতেই যে লাগে ৫০ লিরা৷ অর্থাৎ, প্রায় ২৫ ইউরো৷

Bosporus-Brücke Istanbul
একটি ঝলমলে দিনে ‘বসপোরাস সেতু’ছবি: AP

পেট-পুজো করার চর্চাটা ইস্তানবুলের একটা ঐতিহ্য

তুরস্কের নানা রকম খাবার তো জার্মানিতেও পাওয়া যায়৷ তবে এখানে এলেই বোঝা যায়, তুর্কি-খাবারের মেনু আসলে কতোটা রকমারি, কতোটা মনমুগ্ধকর হতে পারে৷ শহরের সবচেয়ে পুরোনো এবং নাম করা খাবার দোকান শহরের ৬৭ মিটার উঁচু মিনারটির অদূরে অবস্থিত৷ না, এটা কোন সাজানো-গোছানো রেঁস্তোরা নয়৷ বরং রাস্তার ওপর একটার পর একটা বেঞ্চ পেতে খাওয়ার চলই এখানে বরাবরের৷ সেখানেই আলাপ হয় ইরানি বংশোদ্ভূত নুশিনের সঙ্গে৷ তাঁর কথায়, ‘‘তুর্কি খাবার এক কথায় ‘অসাধারণ'৷ অথচ এখানে আসার আগে, সে কথা আমি জানতামই না৷ আমি নানা দেশের বহু খাবার চেখে দেখেছি৷ কিন্তু, এখানকার রান্না-বান্নার জবাব নেই৷ তুর্কিরা অনেক খাবারেই নানা রকম সবজি এবং পালং শাক দিয়ে থাকে৷ তাই তাদের ঝোলগুলোও খুব সুস্বাদু হয়৷'' জানা দরকার, তুরস্কে খাওয়া-দাওয়া শুরুর আগে এক ধরণের পানীয় দেওয়া হয়৷ দামি হলেও, এ ধরণের পাতলা মৌরির রস মিশ্রিত মদ খেতে কিন্তু দারুণ৷

Flash-Galerie Bausünden in Istanbul
জমজমাট শহর ইস্তানবুলছবি: picture-alliance/ZB

যে ক্লাবে তরুণ প্রজন্মের ভীড়

ইস্তানবুলের ‘বেয়োগলু' অঞ্চলটিতেই ক্লাবের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ এখানে সাজ-পোশাক বা মেয়েদের দেখতে নয়, মানুষ আসে মূলত নাচতে৷ ‘আরাফ' নামের ক্লাবটিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কম-বয়সি ছেলে-মেয়েরা এখানে একদম গিজ-গিজ করছে৷ তার ওপর এখানে না আছে কোন ‘ড্রেস-কোড', না আছে কোন নিয়ম-কানুন৷ এমনকি ক্লাবটিতে কোন পাহাডরাদারও নেই৷ নাচতে নাচতেই এক অ্যামেরিক্যান জানায়, ‘‘এখানে প্রায় সব রকমের, সব ঘরানার মিউজিক বাজানো হয়৷ আর টিকিট কাটার বালাই না থাকায়, পানীয় কেনার জন্য পয়সা বাঁচে৷ তাতে মজাও হয় বেশি৷''

Kultuhauptstadt Istanbul - Eröffnungsfeuerwerk
রাতের অন্ধকারে আলোর রোশনাই !ছবি: AP

‘আরাফ'-এর কয়েক গজের মধ্যে হলেও, সংগীত ঘরানার দিক থেকে ‘মেশিন ক্লাব' একেবারে আলাদা৷ ভিন্ন এ ক্লাবটি গাড়ির গ্যারাজের মতো একটা ছোট্ট জায়গায়৷ আর নামের সঙ্গে মিলিয়েই এখানে বাজানো হয় মূলত ‘টেকনো' এবং ‘ডিসকো' মিউজিক৷ আমার না হলেও, অল্প-বয়সি এলিফ কিন্তু এ ধরণের মিউজিক খুব পছন্দ করে৷ এলিফ বলে, ‘‘এই দেখুন এখন ‘ইলেক্ট্রো' আর ‘টেকনো' বাজছে৷ এই মিউজিকই আমার প্রিয়৷ এছাড়া, এখানকার ডিজে আমার বন্ধু৷ তাই এখানে বেশ নিয়মিতই আসি৷ কতো নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়৷ অদ্ভুত সব লোকজনের সঙ্গে গল্প হয়৷''

প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক