1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন্যা সহিষ্ণু ধান পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ

১৮ ডিসেম্বর ২০০৯

নতুন উদ্ভাবিত বন্যা সহিষ্ণু তিন প্রজাতির ধানের পরীক্ষা নিরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন বাংলাদেশের গবেষকরা৷ তারা বলছেন, সফলভাবে এ ধান প্রবর্তন করা গেলে প্রতিবছরের বন্যা মোকাবিলা করে ভাল ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা৷

https://p.dw.com/p/L753
ফাইল ফটোছবি: dpa

বাংলাদেশের প্রায় ২০ ভাগ অঞ্চল প্রতিবছর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এবং সাধারণ প্রজাতির ধানগুলো বন্যার পানির নীচে ৩ দিনও টিকে থাকতে না পারার কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ টন ফসলহানির শিকার হয় চাষিরা৷

রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)-এর কর্মকর্তারা আশা করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিকূল প্রকৃতির মোকাবিলা করতে এসব ধান লক্ষ লক্ষ চাষিকে সহায়তা করবে৷

গবেষকরা বলছেন, এসব ধান টানা ১৫ দিন পানির তলায় ডুবে থাকলেও মরে যাবে না৷ অর্থাৎ বন্যা উপদ্রুত বাংলাদেশে প্রতি বছরের অনেক বন্যাতেই টিকে থাকতে পারবে এই প্রজাতির ধান৷

ঢাকার অদূরে অবস্থিত বিআরআরআই এর কর্মর্তারা জানিয়েছেন, সরকার খুব শিগগিরই এ ধান অনুমোদন করবে এবং আগামী মৌসুমেই চাষিরা এর আবাদ শুরু করতে পারবে৷

বিআরআরআই এর প্রধান গবেষক খন্দকার ইফতাখার উদ্দৌলা বলেন, ‘‘প্রতিবছরের বন্যায় প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়৷ আমরা যদি এর মধ্য দিয়ে হেক্টরপ্রতি এক বা দুই টনও বেশি ফসল পাই তাহলে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের বিবেচনায় স্থায়ীভাবে স্বনির্ভর দেশের আরও কাছাকাছি চলে আসবে৷''

গবেষকরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে আরও অবনতিশীল অবস্থার দিকে যাবে৷ এ পরিস্থিতিতে ধানের ফলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷

ইফতাখার উদ্দৌলা বলেন, ‘‘ধান বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ৷ জনগণ খাদ্য ক্যালরির প্রায় ৭০ ভাগই পায় ধান থেকে এবং দেশের চাষিদের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে৷''

গবেষকরা জানান, ‘বিআর-১১ সাব ১', ‘স্বর্ণা সাব ১' এবং ‘আইআর-৬৪' নামের এই তিন প্রজাতির ধান ম্যানিলা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এগুলো পানির তলায় ১৭ দিনও টিকে থেকেছে৷

এরমধ্যে ‘স্বর্ণা সাব ১' ইতোমধ্যেই ভারতে সফলভাবে আবাদ হচ্ছে৷ বাকি দুটো ধান বাংলাদেশে বহুল আবাদ হওয়া প্রজাতির ধান ব্যবহার করে উদ্ভাবিত হয়েছে৷

এই গবেষকরা ধানের জিনগত পরিবর্তন না করেও সঙ্করায়নের মাধ্যমে কয়েক প্রজাতির সাধারণ ধানের মধ্যে বন্যাসহিষ্ণু জিন সৃষ্টি করতে পেরেছেন৷ আইআরআই এর তত্ত্বাবধানে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশকে তহবিল যুগিয়েছে৷

এছাড়াও লবণাক্ত পানিতে ধানের ফলন নিয়ে গবেষণাতেও অগ্রগতি সাধন করেছেন বাংলাদেশের গবেষকরা৷ সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ আবাদি জমি ইতোমধ্যেই হুমকির মুখে পড়েছে৷

এই সেপ্টেম্বর মাসের আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্যানুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে আগামী দশকগুলোতে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ চরম হুমকির মুখে পড়বে৷ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন এতে লবণাক্ত পানি দেশের আরও অভ্যন্তরে চলে যেতে পারে এবং তার ফলে ধানসহ অন্যান্য প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ৷

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক