1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সত্য, ন্যায় আর বিশ্বাসের প্রতীক মহাত্মা গান্ধী

২ অক্টোবর ২০০৯

গুজরাটের পোরবন্দরে তাঁর জন্ম৷ সালটা ১৮৬৯৷ তারিখ দোসরা অক্টোবর৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অহিংসাকে ব্রত করে তিনি যে অবদান রেখেছেন, তার প্রতিদানে সমগ্র ভারতবাসী তাঁকে ‘জাতির জনক' আখ্যা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/Jw0Z
ছবি: AP

‘মহাত্মা' – এই সমাসবদ্ধ শব্দটিকে যদি ভাঙা যায় তবে তার অর্থ হয় ‘মহান আত্মা যাঁর'৷ গোটা বিশ্বের কাছে এই নামেই যে মানুষটির পরিচয়, তাঁর জীবনব্রত ছিল মানুষের আত্মিক উন্নতি৷ সে এক দুঃসময়ের দিনকাল, যখন তিনি জন্মেছেন৷ পরাধীন দেশ, পরাধীন জাতি অন্য কোনরকম চিন্তার অবকাশ পায় না সে সময়৷ ১৮৯১ সালে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাঠ সম্পন্ন করে দেশে ফিরলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী৷ ১৮৯৩ সালে এক বছরের চুক্তিতে গেলেন আরও এক ব্রিটিশ উপনিবেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওকালতি করতে৷ সেখানে গিয়ে তিনি বুঝলেন চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনে পিছপাও নয় ব্রিটিশ শাসকরা৷ শুধুমাত্র গায়ের রঙ কালো বলে ভারতীয়রা চরম লাঞ্ছনা আর অসাম্যের শিকার সেখানেও৷ যেমনটি ছিল পরাধীন ভারতবর্ষেরও ছবিটা সেদিন৷ দীর্ঘ একুশ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে নিজের লড়াই চালিয়ে গেলেন তিনি৷

Mahatma Gandhi
এই ছিল তাঁর সারল্য, তাঁর জনারণ্যে মিশে থাকা সাধারণ ভারতবাসীর চেহারা৷ছবি: AP

দেশে ফিরলেন ১৯১৫ সালে৷ তার পরের পনেরোটা বছর সত্য আর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় শুরু হল তাঁর জীবনের আরও একটি সংগ্রামময় অধ্যায়৷ এই পনেরো বছরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন ছোটখাটো চেহারার স্বল্পভাষী মানুষটি৷ তাঁর নেতৃত্বে অথবা তাঁরই দিকনির্দেশনায় একের পর এক আন্দোলন দেখেছে ভারতবাসী৷ সত্যের প্রতি আগ্রহ থেকেই তাঁর ‘সত্যাগ্রহ' আন্দোলন আসমুদ্র হিমাচলের মানুষকে এক অবস্থানে নিয়ে এসেছে৷ ধীরে ধীরে সকলের কাছে তিনিই হয়ে উঠেছেন ‘বাপু' বা ‘বাপুজি'৷ এই ‘বাপু' শব্দটির অর্থ পিতা৷ সেই অর্থে সমস্ত জাতি তাঁকেই পিতার সম্মান দিয়েছে৷ পালন করতে চেয়েছে তাঁরই নির্দেশ৷ অনুকরণ করেছে তাঁর সরল সাদাসিধা জীবনযাপন৷ তাঁর স্বপাক আহার কিংবা নিজেই চরকায় সুতো কেটে তাই দিয়ে তৈরি করা খদ্দরের পোশাক পরা শীর্ণ খর্ব অথচ আত্মবিশ্বাসে গরিমাময় গান্ধীজির মূর্তি ক্রমশ প্রতিভাত হয়েছে৷ যেন হয়ে উঠেছে ভারতাত্মার মূর্ত প্রতীক৷

দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর আন্দোলনের দীর্ঘ একুশ বছর এবং তারপর ভারতেও সুদীর্ঘকাল, এই দীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্পর্শে বারবার তাঁকে জেলবন্দী করেছে ব্রিটিশ প্রশাসন৷ সারা জীবনে বিভিন্ন সময়ের জেলখাটা ধরলে মোট সাতটি বছর তাঁকে কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্তরালে৷ কিন্তু ন্যায় ও সত্যের জন্য জেল খাটাকে কোনরকম নীচু চোখে দেখতেন না তিনি৷ গান্ধীজির যুক্তি ছিল, ‘আমি নিজে যদি জানি আমি যে কাজ করছি তা সঠিক, তার সঙ্গে রয়েছে আমার নিজের আত্মার সমর্থন, তবে এই কারাবন্দী হওয়া আমার পক্ষে সম্মানের৷'

Mahatma Gandhi Indien, 59th Republic Day
দেশের সাধারণ মানুষ আজও তাঁকে আত্মার আত্মীয় হিসেবেই জ্ঞান করে৷ছবি: AP

অহিংসা, সত্য আর সমানাধিকার৷ ব্রিটিশ সিংহকে পর্যদুস্ত করতে গান্ধীর এই আন্দোলনের পথ যে কতদূর সঠিক ছিল তা ক্রমশ বুঝেছে উপমহাদেশ৷ উপমহাদেশের স্বাধীনতার উজ্জ্বল পথে তাঁর দর্শন যে কতখানি গভীরে প্রোথিত ছিল, তার সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে ইতিহাস৷

১৯৪৭ সালে টুকরো হয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে ভারত, পাকিস্তান৷ এর পরের বছর ১৯৪৮ সালের তেরোই জানুয়ারি দেশভাগের করুণ পরিণতিতে ব্যথিত গান্ধীজি তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তপাত থামাতে আটাত্তর বছর বয়সে অনশনে বসেছেন৷ টানা পাঁচদিনের অনশনের পর দেশনেতাদের অনুরোধে অন্নজল গ্রহণ করেন তিনি৷ এর মাত্র কয়েকদিন পরেই ১৯৪৮ সালের তিরিশে জানুয়ারি এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী নাথুরাম গডসের গুলিতে নিহত হন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী৷

মহাত্মা গান্ধীর জীবন এবং তাঁর আদর্শ আজও এই বিশ্বের প্রান্তে প্রত্যন্তে এক সর্বজনগ্রাহ্য দর্শন৷ আজও সন্ত্রাসের কলুষ বাতাবরণ যখনই এই বিশ্বের কোথাও মাথাচাড়া দেয়, মানুষের মনে পড়ে যায় এই অকারণ হিংসা আর হানাহানি যে কোথাও পৌঁছে দিতে পারে না মানবজাতিকে, একথা প্রথম স্পষ্ট ভাষায় তিনিই বলে গিয়েছিলেন৷ আর সে কারণেই মানবজাতির সংকটময় মুহূর্তগুলিতে এই মানুষটির আত্মবিশ্বাস আর অন্তরের দৃঢ়তা যোগায় শক্তি, সাহস৷ দেখায় সেই পথ, যে পথের অন্তে আছে সম্মান, আছে সত্য আর বিশ্বাসের উজ্জ্বল আলোকময় পুরস্কার৷

প্রতিবেদন-সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা-সঞ্জীব বর্মন