এবার ''পরিবেশ বান্ধব'' পোশাক তৈরির দিকে নজর
২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯সম্প্রতি এর একটি নমুনা দেখা গেছে গত সপ্তাহে প্যারিসে অনুষ্ঠিত পোশাক শিল্পের বাণিজ্য মেলায়৷ দু'বছর পর পর অনুষ্ঠিত এ মেলায় অংশ নেয়া ৬৬০ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০ টি ছিল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সুতায় তৈরি পোশাকে সমৃদ্ধ৷ আয়োজকরা বলছেন, গত মেলাগুলোর তুলনায় এ বছর এটা অনেক বেড়েছে৷
পৃথিবীর শীর্ষ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ চীন, বাংলাদেশ এবং ভারতসহ পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান প্রাকৃতিক সুতা, ন্যায্য বাণিজ্য প্রচলন ও পরিচ্ছন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থার দিকে জোরে-শোরেই এগিয়ে যাচ্ছে৷ যদিও তাদের বিরুদ্ধে পানি অপচয়, মাটি দূষণ এবং শিশু শ্রমের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে৷
গত মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে বছরে ৩০ মিলিয়ন প্রাকৃতিক তন্তু উৎপন্ন হয় এর মধ্যে ২৫ মিলিয়নই হচ্ছে সূতি৷ এফএও বলছে, ১৯৬০ সালের শুরু থেকে কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি তন্তুর ব্যবহার বেড়ে গেছে এবং প্রাকৃতিক তন্তু বেশ বড় বাজার হারিয়েছে৷
বাংলাদেশের বৃহত্তম পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘নরম্যান গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ' এর মার্কেটিং ম্যানেজার সাজেদুর রহমান তালুকদার বলেন, আমরা আগামী বছরের মধ্যে পরিবেশ বান্ধব এবং ন্যায্য বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু করবো৷ এটা বর্তমান বাজারের চাহিদা৷
দক্ষিণ কোরিয় কোম্পানি লুডিয়ার মতে, পরিবেশ বান্ধব সুতা দিয়ে প্রস্তুত পোশাক বর্তমানে একটি মর্যাদার বিষয় হতে পারে কারণ এটা প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি দামি হবে৷ তবে আগামী দুই তিন বছর পরে ভোক্তারা এর জন্য একটু বেশি দাম দিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে৷
ইউএস ডেনিম মিলস এর পাকিস্তান কারখানার ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার সাইদ আদিল হায়দার বলেন, এটা বেশ ব্যয়বহুল এবং সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে এ ব্যাপারে স্বীকৃতি পাওয়া৷ তিনি বলেন, আমরা মাটি, শস্য এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে চাই না৷ সুতরাং পরিবেশ বান্ধব পোশাক তৈরি করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব৷ তিনি বলেন, বাজার বদলে যাচ্ছে৷ এখন আমাদের প্রধান বিষয় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পণ্য বানানো৷ দু'বছর আগে তাঁর শিল্প প্রতিষ্ঠান যখন পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদন করা শুরু করে তখন কারো তেমন আগ্রহ ছিলনা৷ কিন্তু এখন প্রতিদিনই এ ধরণের পণ্যের চাহিদা আসছে৷
পোশাক শিল্পে শীর্ষ অবস্থানে থাকা চীনেও প্রাকৃতিক সূতার তৈরি পোশাকের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে৷ চীনে পোশাক শিল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় ২০ মিলিয়ন কর্মী৷ গত বছর সেখানে পোশাক খাতে নিট বিক্রি হয়েছিল ৪০০ বিলিয়ন ইউরো সমপরিমাণ অংকের৷ চীনে নিযুক্ত টেক্সওয়ার্ল্ড এর প্রতিনিধি ইয়ান ইয়র্ক বলেন, ইউরোপীয় ভোক্তাদের কাছ থেকে চীন বর্তমানে আরো বেশি পরিমাণ প্রাকৃতিক সূতার তৈরি পোশাকের অর্ডার পাচ্ছে৷ তিনি বলেন, চীনের ধনী ব্যক্তিরাও বর্তমানে পরিবেশ বান্ধব পোশাকের ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ তারা এমন পোশাক চান যা নতুন ধাঁচের, দামি এবং একইসাথে পরিবেশ অনুকূল৷ চীনের কুইংডাও শহরে অবস্থিত হেম্প ফরটেক্স এর প্রধান এইচ এল ডিং বলেন, পাঁচ বছর আগেও হয়তো কেউ শন এর নাম শোনেনি৷ কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আগামীতে প্রাকৃতিক সূতি এবং শন এর তৈরি সূতার পোশাকের দিকেই সবাই ঝুঁকে পড়বে৷
৩০ বছরের পুরনো তাইওয়ানের পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান চিয়া হার জানিয়েছে, তিন বছর আগে তারা প্রাকৃতিক সূতা দিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করে, কারণ ইউরোপে এটা খুব জনপ্রিয়৷ তাদের মতে, এ সময়ে পরিবেশ-বান্ধব সুতার তৈরি পোশাকের বিক্রি প্রায় একশ' গুণ বেড়েছে৷