নোট বাতিলের ১০০ দিন পর কী ভাবছে মানুষ?
৮ নভেম্বর আচমকা প্রধানমন্ত্রী মোদী পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেন৷ এরপর থেকে দেশজুড়ে রাজনীতি উত্তাল৷ বিধানসভা থেকে সংসদ ভবন – সর্বত্র আছড়ে পড়েছে বিক্ষোভের ঢেউ৷ কিন্তু এ ঘটনার চার মাস পর এখন পরিস্থিতি কেমন?
অভিজিৎ বসাক, ব্যবসায়ী
দিল্লি শহরে ঘুরে ঘুরে ঢাকাই জামদানি ও মসলিন শাড়ি বিক্রি করেন অভিজিৎ৷ ভারতের নোট বাতিলের জেরে গত কয়েক মাস ধরে চরম অসুবিধায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁকে৷ অভিজিতের কথায়, ‘‘ঢাকা থেকে শাড়ি কিনে ভারতের শহরে শহরে ঘুরে শাড়ি বিক্রি করি, প্রতি বছরই৷ এতদিন ভালোই বিক্রি হতো৷ কিন্তু এখন শাড়ি বিক্রির হাল এমন যে, দু-বেলা খাওয়ার পয়সা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷’’
শতবন সিং, অটোচালক
ইন্ডিয়া গেট-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় সচিবালয় মেট্রো স্টেশন চত্বরে রোজই দেখা মেলে শতবন সিংয়ের৷ পাঞ্জাবের বাসিন্দা, তবে কয়েক দশক ধরে দিল্লিতেই থাকেন৷ সরকারের নোট বাতিলের ভালো-মন্দ নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘অতশত বুঝি না৷ তবে আমাদের মতো মানুষদের প্রথমদিকে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল৷ এখন অবশ্য অসুবিধা হচ্ছে না৷ কারণ এখন ডিজিটাল মানি ট্রান্সফার করে বহু যাত্রী ভাড়া মেটাচ্ছেন৷ তাই স্বাভাবিক ছন্দেই চলছে জীবন৷’’
রাহুল সরকার, সাংবাদিকতার ছাত্র
রাহুলের বাড়ি কলকাতায়৷ তিনি দিল্লিতে বেড়াতে এসেছেন৷ বিমুদ্রাকরণ সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন না৷ এর জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া রয়েছে৷ আসলে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে, ‘সব কালো টাকা উদ্ধার হবে৷’ কিন্তু কালো টাকার দেখা নেই৷ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও এর কোনো ভালো দিক খুঁজে পাননি৷ এটা নরেন্দ্র মোদীর অপরিকল্পিত ও হঠকারি সিদ্ধান্ত৷’’
সুরেন্দ্র মিনা, ডাক্তারির ছাত্র
রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা সুরেন্দ্র চীনের একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন৷ এখন দক্ষিণ দিল্লির একটি কোচিং সেন্টার থেকে ডাক্তারির পরবর্তী পাঠ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি৷ তাঁর মতে, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত আসলে রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কিছুই নয়৷ প্রায় সাড়ে তিন মাস নোটের সমস্যায় জেরবার হয়েছে দেশের মানুষ৷ এখন সমস্যা কিছুটা মিটলেও যে উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা, তা কতটা সফল কারও জানা নেই৷’’
মৌসুমী মুখার্জি, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা
মৌসুমী মুখার্জি জানান, ‘‘নোট বাতিলের ফলে মারাত্মক কোনো অসুবিধার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি আমাকে ও আমার পরিবারকে৷ ব্যবসায় মন্দা, বাজারে কম কেনাকাটার একটা প্রভাব পড়লেও সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের কেউ না খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছায়নি৷ তাই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিমুদ্রাকরণের এই সিদ্ধান্তকে একশ শতাংশ সমর্থন জানাতে আপত্তি নেই আমার৷’’
সুচন্দ্রা রায়, সাংবাদিকতার ছাত্রী
সুচন্দ্রা সরকারের নোট বাতিলের ভালো-মন্দের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে চান৷ ওঁর কথায়, ‘‘বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ নোটের জোগানের ব্যবস্থা না করে, কোনোরকম আগাম প্রস্তুতি না নিয়ে আচমকা দেশের ১২৫ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ এতে করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজের গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ৷’’
মলয় ঘড়া, এমব্রয়ডারি কারিগর
এক কাশ্মিরী মালিকের অধীনে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন মলয়৷ শালের ওপর নকশা করা ওঁর কাজ৷ দীর্ঘ আট বছর ধরে দিল্লিতে৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছেন তিনি৷ জানিয়েছেন, ‘‘ধনীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ কিন্তু আমাদের মতো ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ – এমন অবস্থা যাঁদের, সেইসব মানুষের পেটে টান পড়েছে৷ বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন৷ আর পুরোনো নোট বদল করার কাজে বেআইনি ভাবে লাগানো হয়েছে আমাদের মতো শ্রমিকদের অনেককেই৷’’
সৌভিক হালদার, স্কুল শিক্ষক
সৌভিক সবে চাকরি পেয়েছেন৷ তিনি জানান, ‘‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক একটা দেশে সাধারণ মানুষের ওপর জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া মোটেই মেনে নেওয়া যায় না৷ তা-ও আবার নোট বাতিলের মতো বিষয়৷ কোটি কোটি মানুষ অসহায় ভাবে দিনযাপন করছেন এর ফলে৷ দেশের উন্নতির হার কমেছে৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে৷ চার মাস পর এখনও বেশিরভার ব্যাংকের এটিএএম কার্যত ‘ক্যাশ-লেস’ হয়ে রয়েছে৷ এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত৷’’