1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবৈধ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৩ জানুয়ারি ২০১৭

ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক ডিভিশন বেঞ্চ৷ রাজনৈতিক দলগুলি এই রায়কে স্বাগত জানালেও রায় কার্যকর করা নিয়ে কেউ কেউ সন্দিহান৷

https://p.dw.com/p/2VCTG
Oberstes Gericht Delhi Indien
ছবি: picture-alliance/dpa

ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া অবৈধ বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুরের নেতৃত্বে সাত জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত এক ডিভিশন বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই রায় দেন গত সোমবার৷ তিন জন বিচারক অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন৷ জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩(৩) ধারা অনুসারে রায়ে বলা হয়েছে, কেবল প্রার্থীরই নয়, ভোটারদেরও ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার জিগির তুলে নির্বাচনী প্রচারকরা যাবে না৷এমনকি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টও যদি নিজের সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তা হলেও সেটা হবে বেআইনি৷

উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন৷অন্য রাজ্যগুলি হলো পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড. গোয়া ও মনিপুর৷ঐসব রাজ্যে সাধারণত ধর্ম ও জাতপাতের ভিত্তিতেই ভোট পড়ে৷আগেও শীর্ষ আদালতের অনুরূপ এক রায়ে শুধু প্রার্থীর ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষার কথাই বলা হয়েছিল, ভোটারদের নয়৷ নতুন রায়ে ভোট প্রার্থীর সঙ্গে ভোটাদাতাদের মধ্যে প্রচারকেও এর আওতায় আনা হয়েছে৷

বেঞ্চের বিচারকদের মতের বিভাজন ছিল ব্যক্তির ধর্ম বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা নিয়ে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য, ব্যক্তিবিশেষের সবারই নিজস্ব ধর্মাচরণের অধিকার আছে, সেখানে রাষ্ট্রের নাক গলানোর অধিকার নেই৷ রাষ্ট্রকে এটা সর্বদাই মাথায় রাখতে হবে৷ অন্যথায় সেটা হবে অবৈধ কাজ৷ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বা ভোটের কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না৷  নির্বাচন এক ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ অবশ্যই হতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ, বলেছেন প্রধান বিচারপতি টি.এস ঠাকুর৷ বেঞ্চের সংখ্যালঘিষ্ঠদের পক্ষে বিচারপতি ডি. চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য, এখনও ধর্ম, জাতপাত এবং ভাষার ভিত্তিতে দেশের জনগণের একটা বড় অংশ বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার৷ এটাই ভারতীয় সমাজের এক নির্মম বাস্তবতা, সেটাকে অস্বীকার করা কঠিন৷ সংবিধানেও তাঁদের ন্যায় বিচারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে৷

রাজনৈতিক দলগুলি যা বলছে

মোটামুটিভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি মুখপাত্র বলেছেন, বিজেপি সর্বদাই রাষ্ট্রবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ রায়ে সেকথাই বলা হয়েছে, মূলত নতুন কিছু বলা হয়নি৷ কাজেই এই রায় স্বাগতযোগ্য৷ কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, ধর্ম, জাতপাত ও আঞ্চলিকতা দেশের মূল্যবোধের বিপরীত যে মূল্যবোধের ওপর দেশ ও সংবিধান প্রতিষ্ঠিত৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেটাই বলা হয়েছে৷ রায়কে স্বাগত জানানো হলেও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতে, এই রায়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে, যেখানে জাতপাতভেদে বৈষম্য করা হয়ে থাকে, সেটাকে আরও স্পষ্ট করা উচিত৷ কমিউনিস্ট পার্টি নেতা ডি. রাজা মনে করেন, রায় যথার্থ হলেও ভাষা ও জাতপাতের বিষয়ে আরো সতর্ক হলে ভালো হতো, কারণ, দলিত, আদিবাসীসহ সমাজের একটা অংশ এখনও বঞ্চনা ও হিংসার শিকার৷ তৃণমূল কংগ্রেস এই রায় নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি৷

শীর্ষ আদালতের রায় বাস্তবে রাজনৈতিক ময়দানে কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টি.এস কৃষ্ণমূর্তি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাইলে প্রার্থীপদ নাকচ করার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি৷ সেটা দিলে তবে কাজ হতে পারে৷'' বর্তমানে নির্বাচন কমিশন বড়জোর আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে৷ এই রায় কার্যকর করার বিষয়ে সুশীল সমাজই বা কী বলছে ? ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের প্রবীণ অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ মনে করেন, জনমতই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার যে ধারা আছে ভোটের রাজনীতিতে দেখেছি বারংবার তা আক্রান্ত হতে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা কিছুটা প্রতিহত হবে৷'' তাঁর মতে, ‘‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করছে তাঁরা যদি ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পারে, তাহলে জনমত সেদিকেই যাবে৷ এই রায় তাঁদের হাতে হবে একটা বৈধ হাতিয়ার৷'' পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সময় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবার জন্য প্রকাশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, সেটা হয়ত এর ফলে বন্ধ করা সম্ভব হবে৷ ফুরফুরা শরিফের ইমামদেরকেও রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে কাজে লাগিয়েছিল নির্লজ্জভাবে৷ সবথেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়বে কি বিজেপি? এর উত্তরে অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘পড়বে বৈকি৷ তবে বিজেপি খুব ধুরন্ধর দল৷ খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে অন্য পথে তা করতে পারে৷ তবে হ্যাঁ, রাম মন্দির ইস্যু হয়ত তুলবে না৷ দলিতদের কাছে টানতে তাঁদের বিরুদ্ধে বঞ্চনা বা বৈষম্যের কথা যেসব দল বলছে, তারা চাইছে জাতপাতের রন্ধ্র দিয়ে কাজ হাসিল করতে৷ মোটকথা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে বৈধতা তৈরি হলো, সেটা অবশ্যই ঐতিহাসিক, সন্দেহ নেই৷

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে মুম্বাইয়ের সান্দাক্রুজ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে জেতেন বিজেপির অভরাম সিং৷ তাঁর হয়ে প্রচারে নেমে বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রয়াত প্রমোদ মহাজন এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা প্রধান প্রয়াত বালা সাহেব ঠাকরে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিতে বলেন ভোটদাতাদের৷ ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার অভিযোগে অভিরামের নির্বাচনকে অবৈধ বলে খারিজ কোরে দেন মুম্বাই হাইকোর্ট৷ সেই রায়ের বিরুদ্ধে অভিরাম সুপ্রিম কোর্টে আপীল করেন৷ একই ধরণের আরও কয়েকটি আর্জির একসঙ্গে শুনানির পর সুপ্রীম কোর্ট এই চুড়ান্ত রায় দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য