1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্তে ভিড় করছে রোহিঙ্গারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ নভেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা হত্যা-নির্যাতনের মুখে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান নিচ্ছে৷ বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে তাদের কেউ কেউ আটক হয়ে পুশব্যাকের শিকার হচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/2SmJX
Myanmar Armee an der Grenze zu Bangladesch
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পাহারায় মিয়ানমারের পুলিশছবি: AP

তবে মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্যাতিতদের আশ্রয় দিতে মানবিকভাবে বাধ্য৷’’

গত পাঁচদিনে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলায় অন্তত ৬৯ জন মুসলিম রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ২০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ  সীমান্তে আটকা পড়েছে৷

মঙ্গলবার টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ৮৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি৷ আটকের পর তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়৷ তারা যে দু'টি নৌকায় করে এসেছিলেন তাও জব্দ করা হয়৷

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মিয়ানমারের নাগরিকরা মঙ্গলবার নাফ নদীর সীমান্ত অতিক্রম করে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া ও ওয়াব্রাং এলাকা দিয়ে নৌকা যোগে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন৷ যে ৮৬ জন মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করে ফেরৎ পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ২৫জন শিশু, ৪০জন নারী ও ২১ জন পুরুষ রয়েছেন৷ তারা সবাই মিয়ানমারের আকিয়াবের খৈয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা৷''

‘‘বাংলাদেশের উচিত নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়া’’

তিনি আরো জানান, ‘‘সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সতর্ক রয়েছে৷ তবে যারা অনুপ্রবেশ করেছিল তাদের প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা দিয়ে ফেরত পঠানো হয়৷''

এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান অব্যাহত রেখেছে৷ গত পাঁচ দিনে ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০০ জন রোহিঙ্গা রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশ সীমান্তে আটকা  পড়েছে৷ তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷ তারা বলছেন, তারা নিরাপদে বাঁচার একখণ্ড জায়গা চান৷

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামে গুলিবর্ষণ করার ঘটনা স্বীকার করেছে৷ সেখানকার মানুষজন নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাদের দেশের নাগরিক বলেই স্বীকার করে না৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে৷ আর বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্যাতিত নাগরিকদের আশ্রয় দিতে মানবিকভাবে বাধ্য৷ মিয়ানমারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আছে৷ কিন্তু আমরাও নির্যাতিত মানুষকে ফিরিয়ে দিতে পারি না৷''

‘‘রোহিঙ্গাদের এই সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে দেখতে হবে’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উচিত হবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়া এবং একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলা৷''

আর বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিট (রামরু)-র গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বড় একটি অংশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলাম৷ তাই বাংলাদেশ যদি মানবিক রাষ্ট্রের পরিচয়কে তুলে ধরতে চায় তাহলে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ব্যবসা বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বাড়ছে, তারপরও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের এই সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে দেখতে হবে৷ বিশ্বে নানা কারণে স্টেটলেস মানুষের সংখ্যা বাড়ছে৷ এটা নিয়ে জাতিসংঘের আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন৷''

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর সেদেশের সরকার ও সরকারি বাহিনীর এই নিপীড়ন, নির্যাতন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে৷ আর বাংলাদেশও এসব নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে আগে আশ্রয় দিয়েছে৷ কক্সবাজারের তিনটি রিফিউজি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৩ হাজার৷ তবে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থীর সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি হতে পারে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য