1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ আগস্ট ২০১৬

গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে জঙ্গি দমন৷ কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ এখন শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই রয়েছে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ ইউনিট৷

https://p.dw.com/p/1Jhla
Bangladesh Polizei tötet 9 mutmaßliche Islamisten in Dhaka
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany

বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী ইউনিটগুলো প্রধানত তিনটি স্তরে কাজ করে – ইন্টেলিজেন্স, প্রতিরোধ এবং অপারেশন৷ একই সঙ্গে জঙ্গি সংক্রান্ত মামলাগুলোর তদন্তও করছে বিশেষ ইউনিট৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুলশান হামলা এবং কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মামলাগুলো এখন আর সিআইডি বা ডিবি তদন্ত করছে না৷ এগুলোর তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট৷

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যাত্রা শুরু করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে৷ এই ইউনিটে ৬ শতাধিক জনবল রয়েছে৷ অর্থাৎ একজন ডিআইজি-র নেতৃত্বে ৬ শতাধিক কর্মকর্তা ও ফোর্স নিয়ে কাজ করছে ইউনিটটি৷

এই ইউনিটে আছে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম, ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ৷ এছাড়া আছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং বিশেষ ডগ স্কোয়াড৷

সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করাই এ ইউনিটের মূল উদ্দেশ্য৷ ইন্টেলিজেন্স কালেকশন, অপারেশন পরিচালনা, মামলা রুজু, মামলা তদন্ত এবং তদন্ত পরবর্তী সন্ত্রাসীদের পর্যবেক্ষণে রাখার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ ইউনিটের কার্যক্রমে৷

স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স গ্রুপ

এর আগে, গত বছরের অক্টোবর মাসেই অবশ্য জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ সদর দপ্তর গঠন করেছে একটি স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স গ্রুপ (এসটিজি), যারা কিনা ইতিমধ্যেই সারা দেশে প্রায় তিন হাজার জঙ্গির তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে৷

গত বছরের ১০ অক্টোবর সারা দেশের এক হাজারেরও বেশি চৌকস পুলিশ সদস্য নিয়ে এই এসটিজি গঠন করা হয়৷ জেলা পর্যায়ে এসটিজি-র প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা৷ এছাড়া মহানগর ও বিভাগীয় শহরে এসটিজি-র প্রধানের দায়িত্বে আছেন পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা৷

পুলিশ সদর এই ইউনিটের কাজ সমন্বয় করে৷ অন্যদিকে নব গঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এবং এসটিজি জঙ্গি দমনে সমন্বয় রেখে কাজ করে৷ পুলিশ সদর দপ্তরে তারা প্রতিমাসে দু'বার করে বৈঠক করেন৷

সোয়াট

জঙ্গি দমনে এই দু'টি বিশেষায়িত ইউনিটের সঙ্গে অপারেশন বা অভিযানে মূল ভূমিকা পালন করে গোয়েন্দা পুলিশের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম স্পেশ্যাল হুইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস (সোয়াট)৷ সোয়াট-এর সদস্যরা দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের হাতে আছে ক্রিস সুপার ভি সাবমেশিনগান-এর মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র৷ আছে অত্যাধুনিক বুলেট প্রুফ ভ্যান৷ সোয়াট টিমের সব সদস্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যান্টি টেররিজম অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ এছাড়া ২০ সদস্যের একটি টিমকে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার রেপলিং বিষয়ক প্রশিক্ষণও দিয়েছে৷

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ এবং বিজয় দিবসসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষ্ঠানে সোয়াট-এর মহড়া চলে আসছে গত ছ'বছর ধরে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল এই সোয়াট বাহিনী৷ তবে সোয়াট-এর বড় ধরনের সফলতা দেখা যায় কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানার অভিযানে৷

কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় একযোগে অভিযান চালায় সোয়াট, মিরপুর ক্রাইম ডিভিশন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ৷ এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬'৷ এক ঘণ্টার এই অপারেশনে ন'জন জঙ্গি নিহত হয়৷ অভিযানের পুরোভাগে ছিলেন সোয়াট টিমের সদস্যরা৷

বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা

হলি আর্টিজানে হামলার আগে, মে মাসে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, ‘‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল৷ কারণ গত তিন বছরে দেশে ৩৭টি জঙ্গি হামলার মধ্যে ৩৪টির কারণ ইতিমধ্যেই উদঘাটন করেছে পুলিশ৷''

সাইট ইন্টেলিজেন্স-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বাংলাদেশে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ১১টি হামলায় মোট ৩৪ জন নিহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজানে হামলায় বিদেশিসহ ২৪ জন নিহত হন৷ একইদিনে ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিতকেও হত্যা করা হয়৷

তাছাড়া চলতি মাসেই জেএমবি ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত হত্যা এবং হামলার তালিকা প্রকাশ করে৷ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০০২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৫ বছরে মোট ১৭৮টি হত্যা ও হামলার দায় স্বীকার করেছে জেএমবি৷ এরমধ্যে তারা ২০টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷

মনিরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার

স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স গ্রুপ (এসটিজি)-এর তথ্য অনুসারে, গত বছর বাংলাদেশে ৬৫১টি মামলায় ২ হাজার ৬৩১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর মধ্যে ৫০৮টি মামলায় ২ হাজার ৭৫২ জন জঙ্গিকে অভিযোগ-পত্রভুক্ত আসামি করা হয়েছে৷ জঙ্গি-সংক্রান্ত ১২২টি মামলার তদন্ত চলছে৷ আর তদন্ত শেষে ২১টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে খবর৷

গুলশান হামলা ও অপারেশন

তবে গুলশান হামলার সময় অপারেশনের সফলতা এবং গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে ইন্টারনেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নিয়েও৷ কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেও গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এবং তার আশেপাশের এলাকার ইন্টারনেট ও টেলিকম সিস্টেম তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা যায়নি৷ কাজে আসেনি জ্যামার৷ ফলে হামলাকারী জঙ্গিরা বাইরে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়৷ একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে তারা এই যোগাযোগ করে এবং নিহতদের ছবি বাইরে পাঠায়৷

পরে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলেও, হামলার ধরণ সম্পর্কে প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য পর্যাপ্ত ছিল না বলে অভিযান প্রস্তুতি ও করণীয় ঠিক করতে সময় লাগে৷

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান যা বললেন

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-এর প্রধান এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০৯ সালে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাশের মধ্য দিয়ে মূলত জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে৷ এরপর জঙ্গিবিরোধী নানা উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট তার সর্বশেষ পদক্ষেপ৷ এটা এখন ঢাকায় কাজ করছে৷ কিন্তু সারাদেশে এর কাজ ছড়িয়ে পড়বে৷''

তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের তৎপরতা এবং নানা কৌশলের ব্যাপারে আমরা অবগত আছি৷ তথ্য সংগ্রহ করছি নিয়মিত৷ তাদের ‘ডাটাবেজ' তৈরির কাজও চলছে৷ আমাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট এখন তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ তাই অভিযান পরিচালনায় আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে৷''

তবে মনিরুল বলেন, ‘‘জঙ্গি দমন একা পুলিশ বা গোয়েন্দার পক্ষে করা সম্ভব না৷ এ কাজে নাগরিকসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন৷ বর্তমানে আমরা নানা ধরনের অ্যাপসও ব্যবহার করছি৷ আমাদের জঙ্গি দমন টিমের সদস্যরা দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এতে অবশ্য আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই৷ বিশ্বব্যাপী যে জঙ্গিবাদ তা প্রতিরোধে আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷ এছাড়া আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিচ্ছি৷''

আরো যাঁরা কাজ করেন

জঙ্গি দমনে র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) কাজ করছে৷ তাদেরও আছে জঙ্গিবিরোধী আলাদা ইউনিট৷ আর সেখানেও জঙ্গিদের তথ্য সংগ্রহ, জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং তদন্ত চলে৷ তারা যৌথ অভিযানেও অংশ নেয়৷ জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই তো র‌্যাব-এর হাতেই আটক হয়েছিল৷ ১০ আগস্ট র‌্যাব জেএমবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ছ'জনকে আটক করে, যারা নতুন আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এছাড়া সীমান্তে জঙ্গিবিরোধী নজরদারি এবং তৎপরতায় বিজিবি সক্রিয়৷

সামাজিক সচেতনতা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাপক সামাজিক তৎপরতা শুরু হয়েছে৷ এই কাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলমি চিন্তাবিদ এবং সুশীল সমাজের সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷ সামাজিকভাবে জঙ্গিবিরোধী নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে৷ এর বাইরেও নাগরিকদের আবাসস্থল এবং সেখানে যারা অবস্থান করছে তাদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য