1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী শ্রমিক পান মাত্র ২ পেন্স!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৪ মার্চ ২০১৬

৫.৯৯ পাউন্ডে ডেনিম জিন্স বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে জার্মান পোষাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘লিডল'৷ প্রশ্ন উঠেছে, প্রাইমার্ক-এর মতো প্রতিষ্ঠান যখন দাম ৮ পাউন্ডের নীচে আনতে পারে না, তখন লিডল কীভাবে এত কম দামে জিন্স দেবে?

https://p.dw.com/p/1ICuO
Bangladesch Näherinnen bei der Arbeit
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

৫.৯৯ পাউন্ডে লিডল যে জিন্স দিচ্ছে, তার নাম হলো ‘জেগিংস'৷ এটা এক ধরনের আঁটসাঁট লেগিংস, যা জিন্স দিয়ে তৈরি৷ এছাড়া এতে দেওয়া হয়েছে ‘আকর্ষণীয় ডেনিম ইফেক্ট'৷ ৭৭ শতাংশ কটন ফ্র্যাব্রিক্সের ওই জেগিংস-এ রয়েছে ওয়েস্ট ব্যান্ড ইলাস্টিক, একটি বোতাম, জিপার, দু'টি ব্যাক পকেট এবং দু'টি ফ্রন্ট পকেট৷

প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনে একে ‘ম্যাজিক' বললেও আসলে এখানে কোনো ম্যাজিক নেই৷ এর পেছনে রয়েছে সস্তা শ্রম৷ লিডল-এর একটি জিন্স বানানোর জন্য বাংলাদেশের একজন নারী শ্রমিককে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২ পেন্স৷

বাংলাদেশি জিন্স ফ্যাক্টরির উৎপাদন খরচের তালিকা অনুযায়ী, একটি জিপারের দাম পড়ে ১০ পেন্স, একটি বোতাম ৪ পেন্স, প্রতিটা রিভেট ১ পেন্স, এম্ব্রয়ডারির জন্য ৯ পেন্স, পকেটের জন্য ৬ পেন্স, লেবেলের জন্য খরচ হয় ৭ পেন্স এবং সেলাইয়ের জন্য আরও ১৯ পেন্স৷ ধোয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলে একটা জিন্সের প্যান্টের পেছনে মোট খরচ হয় ৩.৯০ পাউন্ডের মতো৷ তার ওপর কারখানার খরচ পড়ে ৫৬ পেন্স৷ আর এ থেকে কারখানা মুনাফা করে ১৬ পেন্স৷ অর্থাৎ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে একটি জিন্সের পেছনে ব্যয় হয় সাড়ে চার পাউন্ড৷

আমিরুল ইসলাম

এছাড়া রয়েছে ওয়্যারহাউজ চার্জ ও বন্দর ফি৷ এখানে আরও ৩০ পেন্স খরচ হয়৷ তাহলে একটি জিন্সের প্যান্টের পিছনে ব্যয় দাঁড়ায় ৪ পাউন্ড ৮০ পেন্স৷ এখানেও শেষ নয়৷ কারণ এরপর বন্দর থেকে প্যান্টগুলোকে দোকানে নিতে হয়৷ এতে ব্যয় হয় আরও ৫০ পেন্স৷ এতে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৫ পাউন্ড ৩০ পেন্স৷ এর পরেও আছে ভ্যাট৷

একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০ জোড়া থেকে ৩৩ জোড়া পর্যন্ত জিন্স প্যান্ট প্রস্তুত করেন৷ প্রতিটি জিন্স থেকে একজন শ্রমিক ২ থেকে ৯ পেন্স পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন৷

বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বেশিরভাগ শ্রমিকদের আইনত ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা (প্রায় ৪৮ পাউন্ড)৷ এক্ষেত্রে সপ্তাহে ছয় দিন ৮ ঘণ্টা করে হিসেব করলে তাঁদের মজুরি পড়ে ঘণ্টায় ২৩ পেন্সের মতো৷ অথচ ২০১৩ সালে এশিয়ান ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স-এর মতে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হওয়া দরকার ২৩০ পাউন্ড৷

এ নিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা উইমসাম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত কম দামে ডেনিম দেয়া যায় না৷ এটা আসলের ডেনিমের মতো করে বানানো৷ আর ডেনিম শতভাগ কটনের৷ ৭৭ ভাগ কটন হলে এটা আর ডেনিম হয় না৷''

তিনি বলেন, ‘‘ভালো প্রোডাক্টের জন্য ভালো দাম দিতেই হবে৷ আমরা হয়ত ‘প্রোফিট মার্জিন' কমিয়ে কম দামে দেই৷ আমাদের ব্যবসার নানা হিসাব আছে৷ যদি অর্ডার বেশি হয় তাহলে প্রোফিট মার্জিন কমানো সম্ভব৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘একটি জিন্সের জন্য একজন শ্রমিকের মজুরি যা, তাই আমরা দেই৷ ক্রেতা দাম কম দিলেও আমাদের মজুরি কমানোর সুযোগ নেই৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘এখানে মজুরি তুলনামূলক কম৷ তবে মজুরি একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবনযাপনের মানের ওপর নির্ভর করে৷ সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৩০০ টাকা একজন শিক্ষানবীশ অদক্ষ শ্রমিকের জন্য৷ অর্থাৎ বেশি বেতনের শ্রমিকও আছেন৷''

আমিরুল বলেন, ‘‘কম দামের কথিত ডেনিম ছাড়া হয় কম আয়ের একটি গ্রুপকে টার্গেট করে৷ এতে করে ডেনিম তার জৌলুস ধরে রাখতে পারবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য