জার্মানির সবচেয়ে বড় উদ্যান ও তার স্থপতি
এককালে সঁসুসি প্রাসাদের রাজকীয় উদ্যানের মহাপরিচালক ছিলেন পেটার ইওসেফ লেনে, যিনি বার্লিন ও পটসডামকে উদ্যান নগরী করে তোলেন৷
সঁসুসি প্যালেসের গার্ডেন্স
প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রিডরিশ তাঁর ‘‘নিশ্চিন্দিপুর’’ প্রাসাদ তৈরি করিয়েছিলেন ১৭৪৭ সালে, রকোকো শৈলীতে, গ্রীষ্মকালীন বাগানবাড়ি হিসেবে৷ তার প্রায় এক শতাব্দী পরে চতুর্থ ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম প্রাসাদটিকে সারান ও তার আয়তন বাড়ান৷ সেই সময়ে তিনি উদ্যান স্থপতি পেটার ইওসেফ লেনেকে আনেন প্রাসাদের বাগান ও কাছের পটসডাম শহরের বিভিন্ন বাগান তৈরি করাতে৷ লেনে মারা যান ১৫০ বছর আগে ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি৷
দর্শকের ভিড়
সঁসুসি প্রাসাদের বাগান দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা আসেন৷ স্থানীয় লোকজনও ছুটির দিনে সারা দিনটা কাটান এই বাগানে চড়ুইভাতি করে, অথবা বাগানের পথে ঘুরে বেরিয়ে৷
বাবেলসব্যার্গ প্রাসাদ
পটসডামে হাফেল নদীর ওপরেই দেখা যাবে নব্য গথিক শৈলীর বাবেলসব্যার্গ প্রাসাদটিকে৷ গোড়ায় এই প্রাসাদটি ছিল সম্রাট প্রথম ভিলহেল্মের গ্রীষ্মকালীন আবাস, প্রাসাদদুর্গটি তৈরি হয় ১৮৩৩ থেকে ১৮৪৯ সালের মধ্যে, প্রখ্যাত স্থপতি কার্ল ফ্রিডরিশ শিংকেলের নকশা ব্যবহার করে৷ একই সঙ্গে লেনে দুর্গ আর নদীর মাঝখানের বাগানটির পরিকল্পনা করেন শিংকেলের শৈলীর সঙ্গে মিলিয়ে৷
রাশিয়ান কলোনি
১৮২৬ সালের সূচনায় তৃতীয় ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম রাশিয়ার জার প্রথম আলেক্সান্ডারের স্মরণে একটি ‘‘রাশিয়ান কলোনি’’ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন৷ স্মৃতিসৌধটি প্রাশিয়ায় ফলচাষের নমুনা প্রদর্শন করবে, এই ছিল পরিকল্পনা৷ সেই ১২টি খামারবাড়ি আর রক্ষীদের ফাঁড়ি ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত হয়৷
পিকক আইল্যান্ড
‘ময়ূরদ্বীপ’-ও বিশ্ব সংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এই দ্বীপের অবস্থিতি বার্লিনের দক্ষিণে হাফেল নদীর মাঝখানে৷ রাজা চতুর্থ ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম চেয়েছিলেন, পটসডামের কাছে সাক্রোভ গ্রামে ত্রাণকর্তা খ্রিষ্টের গির্জের চারপাশের বাগান ও ঘাট যেন একটি জাহাজের আকারে হয় – লেনে রাজার নিজের আঁকা নকশা অনুযায়ী ঠিক সেই ধরনের বাগান সৃষ্টি করেন৷
গ্লিনিচকে প্রাসাদ
রাশিয়ার প্রিন্স কার্লের স্বপ্ন ছিল, ভূমধ্যসাগরের তীরে একটি ইটালিয়ান ভিলা৷ ১৮২৩ সালে ইটালি ঘুরে এসে ২১ বছর বয়সের রাজপুত্র ঠিক করেন যে, তিনি স্থপতি কার্ল ফ্রিডরিশ শিংকেলের সাহায্য নিয়ে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করবেন৷ তৈরি হয় বার্লিনের কাছে গ্লিনিচকে প্রাসাদ, যার বাগানের পরিকল্পনা করেন লেনে৷
বার্লিনের ফ্রিডরিশসফেল্ডে এলাকার ক্যাসল পার্ক
১৮২১ সালে ফ্রিডরিশসফেল্ডে প্রাসাদের বাগান হিসেবে ক্যাসল পার্কের সূচনা৷ পেটার ইওসেফ লেনে এলাকার তিনটি ভবনকে নতুন করে সাজান৷ ১৯৫৫ সাল থেকে এগুলি একটি ‘টিয়ারপার্ক’ বা ছোট চিড়িয়াখানার অঙ্গ৷
বার্লিনের জুওলজিক্যাল গার্ডেন্স
এটি জার্মানির প্রথম চিড়িয়াখানা৷ চালু করেন আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ট, ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে; বাগানগুলোর পরিকল্পনা করেছিলেন লেনে৷ রাজা চতুর্থ ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম তাঁর সংগ্রহ থেকে প্রথম জীবজন্তুগুলি দান করেন৷
বার্লিনের ‘লান্ডভের’ খাল
১৮৪০ সালের পর লেনে বার্লিনের দিকে মন দেন; এর এক দশক পরে তাঁর সৃষ্টি, বার্লিনের সুবিখ্যাত ‘লান্ডভেরকানাল’৷ ২২ মিটার প্রস্থের ও দু’মিটার গভীরতার এই দশ কিলোমিটার লম্বা খালটি ফ্রিডরিশহাইন এলাকায় স্প্রে নদী থেকে বেরিয়ে শার্লটেনবুর্গ এলাকায় ঐ স্প্রে নদীতেই ফিরে গেছে৷ আজ এই খাল প্রধানত নৌকাবিহারের জায়গা৷
বয়েৎসেনবুর্গ ক্যাসল
উকারমার্ক দ্বীপের ওপর অবস্থিত বয়েৎসেনবুর্গ ক্যাসলের সঙ্গে রয়েছে একটি ইংলিশ গার্ডেন বা ইংল্যান্ডের ধরনের বাগান৷ ক্যাসল বা প্রাসাদদুর্গটি সৌন্দর্যে বাভারিয়ার নয়শোয়ানস্টাইনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে৷ আজ প্রাসাদটি একটি হোটেল৷
বাজেডোভ ক্যাসলের প্রাঙ্গণ
১৮২১ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে লেনে ১২০টির বেশি বাগানের পরিকল্পনা করেন, তার মধ্যে ছিল মেকলেনবুর্গের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাজেডোভ প্রাসাদদুর্গের উদ্যান৷ লেনে যে সব বাগানের পরিকল্পনা করেছেন, তার মধ্যে বাজেডোভ ক্যাসলের পার্কটি সবচেয়ে বড় উদ্যানগুলির মধ্যে পড়ে৷