1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্লগারদের হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক

আরাফাতুল ইসলাম২১ ডিসেম্বর ২০১৫

ব্লগার হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক, আপত্তিজনক উল্লেখ করে খুনিদের বিচার দাবি করেছেন ‘নিউ এজ’ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির৷ পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করায় সরকারের সমালোচনা করেছেন৷

https://p.dw.com/p/1HR0O
Bildergalerie Bangladesch Andenken an den Mord an Sagar Sarowar und Meherun Runi
ছবি: DW/M. Mamun

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে৷ সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে৷ এ সব সমালোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন একের পর এক ব্লগারকে জবাই করা হচ্ছে দেশটিতে৷ পাশাপাশি সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপরও হামলা হচ্ছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷

ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ' পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির জানিয়েছেন, কীভাবে বাংলাদেশ সরকার বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করছে, এবং কিভাবে উগ্রপন্থিরা আবারো বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিচ্ছে৷

ডিডাব্লিউ: বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ‘সংকুচিত' হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত টোমাস প্রিনৎস৷ আপনারও কি মনে হয় বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে?

নুরুল কবির: বাংলাদেশে সাধারণভাবে সংবিধানের ভিত্তিতে বাকস্বাধীনতা পুরোপুরি কখনোই ছিল না৷ তবে সাম্প্রতিককালে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, যাঁরা সরকারের রাজনৈতিক, দার্শনিক লাইনের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলেন, কিংবা ভাবেন, তাঁদের বাকস্বাধীনতা খর্ব করার নানা ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আয়োজন সরকারের তরফ থেকে চলছে৷ এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে একটা ভয়ের সংস্কৃতি নানানভাবে জেঁকে বসেছে৷ তার কারণে এক ধরনের ‘সেল্ফসেন্সরশিপও' অন্তত মিডিয়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ সেকারণে যে অভিযোগ উঠছে, সেটা ভিত্তিহীন নয়৷

প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যে চাপের কথা বলছেন, সেটার ধরন আসলে কেমন?

যদি আমি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি, যেমন বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে একসময় আমাকে নিয়মিত ডাকা হতো নানান রাজনৈতিক, সামাজিক ইস্যুতে কথা বলার জন্য৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমাকে ডাকা হয় না৷ আমি যখন ঘটনার কী জানবার চেষ্টা করেছি, তখন জানতে পেরেছি, টেলিভিশন কর্তৃপক্ষগুলোকে নানানভাবে সরকারের এজেন্সির লোকজন এবং সরকারের সাথে যুক্ত কিছু তরুণ তুর্কী, যারা নানানভাবে সরকারের সুবিধাভোগী, তারা মিলে এক ধরনের হুমকিধামকি দিয়ে রেখেছেন৷ তাদের পরিষ্কারভাবে একটা লিস্ট দেয়া হয়েছে যে, এদেরকে তারা কথাবার্তা বলার জন্য ডাকতে পারবেন না৷ যেহেতু এই কোম্পানিগুলোকে নানান ব্যবসায়িক কারণে সরকারের কথা মানতে হয়, ফলে তারা অন্যায় হলেও এই হুমকিধামকি এবং উপদেশ মানতে বাধ্য হচ্ছে৷ যেকারেণ আমিসহ বেশ কিছু লোক যাঁরা টেলিভিশনে কথা বলতে নিমন্ত্রণ পেতেন, তাঁরা সেই নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন না৷

ইউরোপীয় পার্লামেন্টও সম্প্রতি গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ ইপি-র এই আহ্বান আপনার কাছে কি তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়?

Bangladeshi Zeitungsredakteur Nurul Kabir
বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে একটা ভয়ের সংস্কৃতি নানানভাবে জেঁকে বসেছে: নুরুল কবিরছবি: DW

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ‘রেসোলিউশন' যেহেতু কোনো রাষ্ট্রের জন্যই বাধ্যবাধকতামূলক নয়, সেহেতু প্রায়োগিক অর্থে সেটা খুব একটা কার্যকর হবে না৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে যখন এরকম একটা ‘রেসোলিউশন' হয়, তার একটি নৈতিক চাপ যে কোনো সরকারের উপরই জারি থাকতে বাধ্য৷

আরেকটি বাস্তব সত্য হচ্ছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, সেই সরকারের জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে৷ প্রাথমিকভাবে এই সরকারের কোনো রাজনৈতিক ন্যযতা ছিল না এই কারণে যে, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় আসেনি৷ এমনকি সরকার ক্ষমতায় আসতে যে ১৫০ এর অধিক সিট লাগে, সেই সংখ্যক সিটেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি৷ ফলে তার একটি রাজনৈতিক ন্যযতার আকাল রয়েছে৷ অন্যদিকে, তারা যে অন্যায়, অবিচার সমাজের উপর চাপিয়ে রেখেছে, সেটার কারণে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে৷

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন অ্যাপ বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেসব বন্ধ রাখা হচ্ছে৷ আবার কেউ কেউ বলছেন, মুক্তভাবে মত প্রকাশের পথ বন্ধে এরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে৷ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ফেসবুক বা এ ধরনের সামাজিক মাধ্যমগুলো সাধারণ মানুষ যে মত প্রদান করেন তার শতকরা নব্বইভাগেই সরকারের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়৷ একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার কখনোই এটা সহ্য করতে পারে না৷ সেকারণেই তারা এটা প্রধানত বন্ধ করেছিল৷ তাছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিও আছে৷ তবে সেটা ফেসবুক বন্ধ করে নয়, সমাধান করতে হবে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে৷

বাংলাদেশে চলতি বছর চারজন ব্লগার, একজন প্রকাশকসহ একাধিক শিয়া মুসলমান, পীরের মুরিদ, বাউল ফকির হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ অনেক হত্যার ধরন একই৷ ধারাবাহিক এ সব হত্যাকাণ্ডের প্রভাব গণমাধ্যমের উপরও কি পড়ছে?

ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, আপত্তিজনক৷ আমি মনে করি, ব্লগারদের তাদের নিজস্ব কথাবার্তা, ধর্মসংক্রান্ত বিষয়াদি লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে, সেটার সঙ্গে আমরা একমত না হলেও৷ যখনই একটি সমাজের মধ্যে সাধারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ উপেক্ষিত হয়, কিংবা অনুপস্থিত থাকে তখনই এ ধরনের চরমপন্থি কর্মকাণ্ড ঘটাবার সামাজিক, রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়৷ ফলে একদিন থেকে যেমন এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা দরকার৷ দোষীদের বের করে শাস্তি দেয়া দরকার৷ তেমনি এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেকারণে সরকারের তরফ থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের মত প্রকাশের, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবার অবাধ, গণতান্ত্রিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে৷

বাংলাদেশে কি সত্যিই ভয়ের সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে? আপনার মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান