দাম্পত্যজীবনকে সুখী রাখার উপায়
সুখ-দুঃখ-আনন্দ মিলিয়েই দাম্পত্যজীবন৷ তবে দুঃখের মাত্রা যেন বেড়ে না যায়, বিশ্বাস ভঙ্গ না হয় এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে চিরদিন কীভাবে মধুময় রাখা যায় – তারই কিছু উপায় জানিয়েছেন এক জার্মান বিশেষজ্ঞ৷
জীবনসঙ্গী
শুরু থেকে হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে একে অপরকে নিজের ইচ্ছা, পছন্দ, অপছন্দ আর প্রত্যাশার কথা ধীরে ধীরে জানিয়ে দিন৷ যাতে করে একজন অন্যজনের চাওয়া বা না চাওয়ার কথা জানতে পারে ও সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে৷ তবে শুরুতেই কিন্তু সমালোচনা বা অভিযোগের কোনো জায়গা নেই৷
কিছুটা স্বাধীনতা সবারই প্রয়োজন
যুগলজীবন মানেই কিন্তু স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেওয়া নয়৷ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কিছুটা সময় নিজের জন্য বের করুন৷ সেটা হতে পারে নিজেদের কোনো খেলাধুলা, ব্যায়াম বা পড়াশোনা৷ অর্থাৎ যে হবিগুলো আপনার বিয়ের আগে ছিল, সেগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকুন৷ আসলে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব৷ সংসারের বন্ধন দৃঢ় করতে এ দু’টোর সমান প্রয়োজন৷
সন্তানের জন্মের পর
বাচ্চার জন্মের পর ওকে ঘিরেই সব কিছু চলে৷ তবে সন্তান শুধু আনন্দই বয়ে আনে না, আনে নানা সমস্যাও৷ জার্মানিতে শিশু জন্মের পর অনেক মা বিষন্নতায় ভোগেন, বাবাদেরও নানা সমস্যা হয়ে থাকে৷ তাই সন্তানকে কোনো বাধা বা ঝামেলা না ভেবে, এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন৷ সব কিছুর মাঝেও নিজেদের, অর্থাৎ দু’জনের জন্য খানিকটা সময় বের করে নিন৷
বিবাহিত জীবনে ‘কমপ্রোমাইজ’-এর বিকল্প নেই
যে কোনো কারণেই দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হতে পারে, কথা বলা বন্ধ থাকতে পারে – এটা স্বাভাবিক৷ তবে তা যেন বেশিক্ষণ না থাকে৷ এমনটা হলে একজনকে এগিয়ে যেতে হবে৷ তাই আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে কাছে টেনে নিন, প্রয়োজনে ‘স্যরি’ বলুন, দেখবেন সব সমস্যা মিটে গেছে৷ এরপর ভবিষ্যতের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে কোনো শান্ত সময়ে ঝগড়া বা রাগের কারণ নিয়ে আলোচনা করুন৷
একঘেয়েমিকে দূরে রাখুন
বিবাহিত জীবনের বয়স যত বাড়ে, ততই সব কিছু রুটিনমাফিক চলতে থাকে৷ ভালোবাসার কথাও আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে যায়৷ তাই ভালোবাসাকে আবার চাঙ্গা করতে মাঝে মাঝে একে-অপরকে ছোটখাটো উপহার দিয়ে চমকে দিন৷ কোথাও খেতে বা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যান অথবা পুরনো রোম্যান্টিক ছবি নিয়ে কথা বলুন৷ আর হ্যাঁ, ভালোবাসি বা দেখতে সুন্দর লাগছে বলতে ভুলবেন না যেন!
বোঝা বা জানার চেষ্টা
সংসার, সন্তান, পেশা, স্বাস্থ্য –সব মিলিয়ে আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে রয়েছে নানা ঝামেলা৷ আর এই সব ঝামেলার মধ্যে সবসময় কারুরই মেজাজ ঠিক থাকেনা৷ তাই অকারণে একজন রেগে গেলে অন্যজন পাল্টা রাগ না করে বরং জানার চেষ্টা করুন রাগের আসল কারণ কি ৷ আলোচনা করে একে অপরকে সাহায্য বা পারামর্শ দিতে দিন৷ ভালো কিছু রান্না করুন, পরিস্থিতিকে সহজ করার চেষ্টা করুন৷
বিশ্বাস
ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হওয়া বা ভেঙে যাওয়ার সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ কারণই হচ্ছে অবিশ্বাস৷ কেউ যদি ভুল বা ইচ্ছে করে অন্য কারো সাথে প্রেমে জড়িয়ে যান, তাহলে সে বিষয়ে কথা বলুন৷ হয় ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসুন, না হয় দাম্পত্যজীবনের বিচ্ছেদ ঘটান৷ অবিশ্বাস জিইয়ে রাখলে অনেক সময় হয়ত সংসার টিকে থাকে, তবে সুখের কখনো হয় না৷ ভালোবাসার মূলমন্ত্রই যে হলো ‘বিশ্বাস’!
সেক্স নিয়ে কথা বলুন
আনন্দময় যৌনমিলন ছাড়া মধুময় দাম্পত্যজীবন কখনোই সম্ভব নয়৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় নারীদের এ ব্যাপারে আগ্রহ কম বা স্বামীও তাঁর মনের কথা ঠিকমতো বলতে পারছেন না৷ তাই এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
সন্তান বড় হয়ে গেলে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সন্তান বড় হয়ে গেলে মা-বাবারা কিছুটা নিঃসঙ্গ বোধ করেন৷ ‘বয়স হয়েছে’, ‘বুড়ো হচ্ছি’ ধরণের কথাবার্তা বলেন৷ এ সব চিন্তা একেবারেই মাথায় না এনে সময়টাকে আনন্দময় করতে সন্তানদের কারণে এতদিন যা করতে পারেননি, সেই হবিগুলো আবারো শুরু করুন৷ নতুন পোশাক কিনুন, সাজগোজ করুন৷ দু’জনেরই ভালো লাগে, এমন কিছু করতে পারেন৷সোজা কথা পজিটিভ চিন্তা করলেই ভালো ও আনন্দে থাকা সম্ভব৷
ছুটি কাটানো
দু’জনে মিলে আগের কোনো পছন্দের জায়গায় বা কোনো সমুদ্রসৈকতে ছুটি কাটাতে যান৷ সোজা কথা, মন যা চায় সেভাবেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে হবে৷ তবেই তো মধুময় থাকবে দাম্পত্যজীবন৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মানির স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ও সুখি যুগলজীবনের কোচ ডা. স্ভেন সেবাস্টিয়ান৷