1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পারিবারিক কারণে মানসিক রোগ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ নভেম্বর ২০১৫

গত মাসেই ঢাকার রাস্তায় একজন মানসিক রোগীকে প্রকাশ্যে পেটায় পুলিশ৷ আর তারপর একজন সাংবাদিক সেই পেটানোর ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷

https://p.dw.com/p/1GySG
Indien Kolkata Psychiatrische Klinik
ছবি: The Week/Gunjan Sharma

সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি৷ তবে মানসিক রোগীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও বোঝা যায়৷ আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে৷ যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের এই আচরণের সমালোচনা করেছেন তাদের আচরণই বা কেমন?

গত বছর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ডাকাত সন্দহে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে এক মানসিক রোগীকে৷ নোয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্র বোরহান উদ্দনিকে (২২) গণপিটুনি দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ আর তাকে বাঁচাতে গিয়ে এলাকাবাসীর হামলায় আহত হন পাঁচ পুলিশ সদস্য৷ এছাড়া গত মাসে যশোরে এক শিশুকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগে তার পিতাকে আটক করে পুলিশ৷ বাবার দাবি, ‘‘আমার ছেলে পাগল৷''

বাংলদেশে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ মানসিক রোগীদের প্রতি এখনো সহানুভূতিশীল নয়৷ তারা মানসিক রোগীদের ‘পাগল' বলে অভিহিত করেন৷ আর সংবাদমাধ্যমে এখনো প্রায়ই বিজ্ঞাপন দেখা যায় – ‘‘পাগল চিকিত্‍সালয়৷''

‘সাড়ে তিন কোটির বেশি মানসিক রোগী'

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে উদ্যোগে ২০১১ সালে আমরা একটা জরিপ করেছি৷ তাতে দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে শতকরা ১৮.১ ভাগ এবং ১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে ১৬.১ ভাগ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগী৷ মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিনকোটিরও বেশি মানসিক রোগী৷''

তবে তিনি জানান, ‘‘আমরা গুরুতর মানসিক রোগ যদি বিবেচনা করি তাহলে তা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭ ভাগ৷ আর যে কোনো মানসিক রোগীই চিকিত্‍সা পেলে পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন৷''

চিকিত্‍সা ব্যবস্থা কেমন?

বাংলাদেশে মানসিক রোগের চিকিত্‍সার জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটি পাবানায়৷ ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে ডাক্তার আছেন মাত্র চারজন৷ এছাড়া দু'জন চিকিত্‍সক বাইরের সরকারি হাসপাতাল থেকে আসে৷ কিন্তু প্রয়োজন ৩০ জন চিকিত্‍সকের৷ হাসপাতালে কর্মচারীদের জন্য ৪৯২টি পদ থাকলেও বর্তমানে কাজ করছেন ৩৬৬ জন৷

এর বাইরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট এবং প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগ চিকিত্‍সা বিভাগ আছে৷

পাবনা মানসিক হাসপাতাল নিয়ে ভুক্তভোগীদের অনেক অভিযোগ আছে৷ তাদের কথা, ‘‘এখানে চিকিত্‍সা নিতে গেলে রোগীর মানসিক অবস্থা আরো খারাপ হয়৷ এমনকি সুস্থ মানুষকেও ষড়যন্ত্র করে এই হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ আছে৷'

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বড়ুয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে পাবনার স্থানীয় সাংবাদিক ইমরোজ খন্দকার জানান, ‘‘এখানে জনবলের সংকট তো আছেই৷ তার সঙ্গে অবহেলা গিয়ে পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে৷ রোগীদের শুধুমাত্র ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়৷ আর কোনো চিকিত্‍সা বলতে নেই৷ রোগীদের বিনোদন, ক্রীড়া বা তাদের সেবার কোনো বালাই নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সুযোগে পাবনায় ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি পর্যায়ে অনেক মানসিক রোগ চিকিত্‍সা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে৷ সরকারি হাসপাতাল থেকে তারা রোগী ভাগিয়ে নেয়৷''

যে কোরণে মানসিক রোগ

চিকিত্‍সকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বাংলাদেশে যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, তাদের একটি অংশ আক্রান্ত হন বায়োলজিক্যাল এবং জেনেটিক কারণে৷ কিন্তু বড় একটি অংশ আক্রান্ত হন পারিবারিক এবং সামাজিক কারণে৷ নানা চাপ, দারিদ্র্য, সামাজিক এবং পারিবারিক অসঙ্গতি এর অন্যতম কারণ৷

বলা বাহুল্য, মানসিক রোগীদের চিকিত্‍সার জন্য ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং ও সঠিক সেবা যত্ন জরুরি৷ বাংলাদেশে পরিবার এবং সামজিক পরিবেশ এর প্রতিকূল অবস্থায় আছে৷ পরিবার মনে করে চিকিত্‍সা কেন্দ্রে পাঠাননোই যথেষ্ঠ৷ আর সামাজিকভাবে মানসিক রোগীদের হেয় করে দেখা হয়৷

ঢাকায় একজন মানসিক রোগীর অভিভাবক শাহরিয়ার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার বড়ভাই সিজিনোফ্রিয়ায় আক্রান্ত৷ চিকিত্‍সায় তিনি স্বাভাবিক হলেও কাউন্সেলিং এবং পুনর্বাসনের অভাবে তাঁকে পুরোপুরি স্বাভাবি জীবনে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের সবাই ব্যস্ত থাকেন৷ আবার নিয়মিত কাউন্সেলিং-এরও ব্যবস্থা নেই৷'' প্রসঙ্গত, পাবনা মানসিক হাসপাতালে কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ নেই৷ নার্সের ২০টি পদ খালি৷

আমাদের যা করতে হবে

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আতিকুল হক মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানসিক রোগী এই শব্দটিই যেখানে পরিহারের কথা উঠছে সেখানে আমাদের দেশে এখনো মানসিক রোগীদের পাগল বলা হয়৷ আর মানসিক রোগাক্রান্তকে হেয় করে দেখা হয়৷ এব্যাপরে আমরা সচেতন না হলে শুধু চিকিত্‍সায় কাজ হবে না৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘মানসিক রোগীকে জানান যাবে না যে সে মানসিক রোগী৷ তাকে আত্মবিশ্বাস বা অন্যকিছু বলে চিকিত্‍সা করাতে হবে৷ জাপান তাই করছে৷ তাই আমি বলি, দেশে কোনো মানসিক রোগী নেই৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সারা বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন৷ ডা. আতিকুল হক মজুমদারের মতে, আধুনিক এই জীবনে তাই শুধু চিকিত্‍সা নয়, মানসিক রোগে কেউ যাতে আক্রান্ত না হন তার জন্য পরিবার ও সমাজকে সহনশীল ও প্রীতিময় হতে হবে৷

মানসিক রোগী মানেই কি পাগল? আপনার কী মনে হয়? জানিয়ে দিন নীচের মনতব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য