1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের প্রয়োগ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আবার মানবপাচারকারী ধরা পড়ার খবর৷ এ নিয়ে বাংলাদেশের বাইরেও বইছে স্বস্তির সুবাতাস৷ তবে মানবপাচারকারীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হওয়ার খবরে অনেকেই অসন্তুষ্ঠ৷ পাচার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পক্ষে তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/1GYiO
Symbolbild Human Trafficking
ছবি: AFP/Getty Images

গত কয়েকমাস ধরে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ সক্রিয়৷ প্রায়ই আসছে মানবপাচারকারী ধরা পড়ার খবর৷ তবে এবার কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে মানপাচারের অভিযোগে যে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে৷ দাবি শুধু বাংলাদেশের পুলিশের নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও আটকদের একজনকে ‘মানবপাচারকারীদের গডফাদার' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

মালয়েশিয়ার সংবাদপত্র বাংলাদেশ পুলিশের এই সাফল্যকে বড় সুখবরই মনে করছে৷

মানবপাচারকারীরা আজকাল সন্ত্রাসী হামলায় ভূমিকা রাখছে বলেও বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানাচ্ছে৷ এ বিষয়টিও উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে শুধু মানবপাচারকারী ধরা পড়ার খবর সংবাদ শিরোনাম হলেও কিছুদিন আগে প্রায় নিয়মিত পরিবেশন করা হতো মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ড যেতে চেয়ে দরিদ্র মানুষের সাগরে ডুবে মরা কিংবা ভিনদেশে অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হওয়ার খবর৷

সেই সময়েই মানবপাচার কত মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে, সে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন আনিসুর রহমান এরশাদ৷ সামহয়্যারইন ব্লগে তিনি,‘মানবপাচার থেকে মানবিক বিপর্যয়'শিরোনামে লিখেছিলেন, ‘‘যারা প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিল তাদের স্বজনরা আজ অশ্রুসজল৷ নিঃস্ব, অসহায় মানুষেরা দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে সাগরে ভাসছে৷ বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ এই সংকটের সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার৷''

মানবপাচার রোধের উপায় জানাতে গিয়ে আনিসুর রহমান এরশাদ লিখেছিলেন, ‘‘মানবপাচারের মতো এমন একটি জঘন্য অপরাধ রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হেবে৷ অবৈধ অভিবাসনের নামে মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি৷ আর বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে উদ্ধার কয়েক হাজার অভিবাসীর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ কোনো সমাধানের পথ নয়৷ একটি ব্যাপার আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, কেন ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ অভিবাসনের আশায় আন্দামান সাগর পাড়ি দিচ্ছে? দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে মানবপাচার বন্ধে একটা সম্বন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, আঞ্চলিক উদ্যোগ সবই প্রয়োজনীয়৷''

কিছু কঠোর উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে৷ পাচার রোধে সাত বিভাগে ‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল' গঠনের উদ্যোগের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই৷

অনেক মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বেশ কিছু মানবপাচারকারী পুলিশের দাবি অনুযায়ী ‘এনকাউন্টারে' মারাও গেছে৷ এমন মৃত্যুর বিপক্ষে বরাবরই মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার৷ একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আয়োজিত সংলাপে কথিত মানবপাচারকারীদের এমন মৃত্যুর বিপক্ষেও সাধারণ মানুষের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে৷

বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মানবপাচারকারীদের ‘এনকাউন্টারে' নিহত হওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন, ‘‘মানবপাচার নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বলেই পাচারকারীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘এনকাউন্টারের' মতো ঘটনা ঘটছে৷''

তবে উল্লেখিত আলোচনাসভায় মানবপাচারকারীদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগও উঠেছে৷ সাধারণ শ্রোতাদের মন্তব্যে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্যোগের সমালোচনা এবং প্রশংসা দুটোই ছিল৷ একজনের বিশ্বাস, ‘‘সরকার চাইলে যে কোনো সমস্যাই সমাধান করতে পারে৷'' আরেক শ্রোতা এনকাউন্টারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন এভাবে: ‘‘যারা মানবপাচার করেছে, তাদেরকে বিচার ছাড়া গুলি করেই মারা উচিত৷ তার কারণ, এইসব দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে উঠালে আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে আবার সেই অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে৷'' আরো কয়েকজন এনকাউন্টারকে সমর্থন দিয়েছেন৷ একজন জানান, ‘‘যারা নিরীহ মানুষদেরকে পাচার করে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেয়, সেইসব পাচারকারীদের বিনা বিচারে এনকাউন্টারে মারা উচিত৷''

Flüchtlingsboot kentert vor Bangladesch
মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ সক্রিয়ছবি: Reuters

তবে অনেকেই এনকাউন্টারের বিপক্ষে৷ তাঁদের একজনের মতে, ‘‘মানবপাচার নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ৷ তবে তার জন্য এনকাউন্টার করলে তা হবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস৷'' আরেকজনের মন্তব্য, ‘‘এনকাউন্টার কি কোনো সমাধান? এই সরকার বিচার বলতেই বুঝে ক্রসফায়ার! সব কিছুকেই ক্রসফায়ার দিয়ে থামাতে চায়!!'' সেখানে মানবপাচার রোধের সহজ-সরল সমাধানসূত্রও দিয়েছেন কেউ কেউ৷ একজন বলেছেন, ‘‘বৈধ ভাবে বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করলেই অবৈধ পথে যাওয়া বন্ধ হবে৷'' কারো কারো মতো, ‘‘আসল গডফাদারদের রক্ষা করতেই এনকাউন্টারের নাটক করছে সরকার৷''

অবশ্য একজন জোর দিয়েছেন আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে৷ তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করতে হবে৷ জাতীয়ভাবে রেডিও-টেলিভিশনে মানবপাচারকারীদের হাতে পড়ে কিভাবে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে, কিভাবে জীবনহানি হচ্ছে, কিভাবে অকালে প্রাণ ঝরে যাচ্ছে, এই সব বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে৷....সবশেষে বলা যায়, মানুষকে সচেতন করা না গেলে শুধুমাত্র আইন দিয়ে মানবপাচার সমস্যার সমাধান আসবে না৷''

সচেতনতা বৃদ্ধির কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে চোখে পড়েছে৷ মানবপাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পদযাত্রা হয়েছে৷

সচেতনতা বৃদ্ধির দু-একটা দৃষ্টান্তও দেখা গেছে৷ এক নারী মানবপাচারের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তাঁর স্বামীকে নিজে তুলে দিয়েছেন পুলিশের হাতে৷

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য