1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গল বাঁচিয়ে কফির চাষ

ডান হিয়রশফেল্ড/এসি৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চা বাগানের মতো কফি চাষের ক্ষেত্রেও শেড ট্রি ছায়া দেয়৷ উত্তর পেরুর শামপুইয়াকু অঞ্চলে কফিঝোপের পাশে নানা ধরনের গাছ লাগানো হচ্ছে, শুধু ছায়া দেওয়ার জন্য নয়, টুরিস্টদের মন কাড়ার জন্যও৷

https://p.dw.com/p/1GQQL
Äthiopien Kaffeeanbau Illustration
ছবি: Coffee Circle

পেরুর উত্তরে মূলত কফিচাষ করা হয়৷ বিশেষ করে বিশ্ববাজারে কফির দাম যখন বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে৷

শামপুইয়াকু পৌর এলাকায় এককালে চার হাজার হেক্টার জঙ্গল ছিল – জঙ্গল বলতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷ আজ সেই বনভূমির মাত্র ছ'শো হেক্টার উদ্বৃত্ত৷ শামপুইয়াকু অঞ্চল আজ আইইউসিএন, অর্থাৎ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার' সংগঠনের একটি অরণ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের অঙ্গ৷

সংরক্ষণ

কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল-এর আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে যা করছি – যেহেতু আমরা একদিকে অরণ্য সংরক্ষণে আগ্রহী, সেই কারণে আমরা কফি চাষিদের অন্যান্য নানা পদ্ধতি শেখাচ্ছি, যাতে তাঁরা জঙ্গল না কেটে কিংবা পুড়িয়ে আরও বেশি পরিমাণে উচ্চ মানের কফি ফলাতে পারেন৷''

গাঁয়ের মহিলারা কফির আবাদের দিকে চলেছেন৷ তাঁরাই প্রথম অরণ্য সংরক্ষণের কাজে শামিল হয়েছেন, রাসায়নিক সারের বদলে প্রকৃতিজাত সার ব্যবহার করা শুরু করেছেন৷ এ ভাবে ফসল বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন৷ পুরুষরাও স্বভাবত এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ৷ শামপুইয়াকু-র অধিবাসী এলিতা তিঙ্গাল বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের আগে জঙ্গলের অবস্থা ভালো ছিল না৷ যা পাওয়া যায়, যেটুকু পাওয়া যায়, সব আমরা জঙ্গল থেকে নিতাম৷ আজ আমরা অন্যভাবে কাজ করি, জঙ্গলকে কিছু কিছু ফেরতও দিই৷''

গাঁয়ের মোড়ল টোমাস ওয়াহাহাই টুভিটস অতিথিদের তাঁর ‘জঙ্গল কিন্ডারগার্টেন' দেখাতে ভালোবাসেন৷ অন্য সব চাষির মতো তাঁর বাড়ির পিছনেই কফিগাছ লাগিয়েছেন৷ কফিঝোপের পাশে কচি কচি গাছের চারা লাগানো হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক৷ এগুলো কফিগাছের পাশাপাশি বেড়ে উঠবে৷ মোড়ল বলেন, ‘‘মানুষজনকে গাছ লাগাতে রাজি করাতে, তার সুবিধা বোঝাতে, খুব বেগ পেতে হয়েছে৷ আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলেছি৷ আজ ক্রমেই আরো বেশি মানুষ তাই করছেন: কফি চাষের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগাচ্ছেন৷ পরে এই গাছগুলোই কফি বাগানে ছায়া দেবে৷''

মহিলা মহল

পৌরভবনে গাঁয়ের মহিলারা আজ ফল নিয়ে এসেছেন: কলা, আম, মুলো, নারকেল৷ সবই এসেছে জঙ্গল থেকে৷ তাঁরা বোঝাচ্ছেন, এই সব ফল দিয়ে কী করা যায়৷ কমবয়সি মেয়েরা শিখছে, বনজঙ্গল ঠিক থাকলে, তা থেকে কতো রকমের খাবার পাওয়া যায়, রোজগারের পথ খোলে৷ নানি-দাদির ঐতিহ্য এ ভাবে বেঁচে-বর্তে থাকছে৷ সেটাও প্রকল্পের অঙ্গ৷ কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল-এর আলোন্সো কাস্ত্রো বলেন, ‘‘আমরা এখানে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছি: জমির ক্ষয় রোধ করা, জঙ্গলের সুযোগসুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহার করা৷ ফলমূল, চিকিৎসার জন্য জড়িবুটি, ঔষধি৷ তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাই লাভবান হন৷''

পৌরভবন থেকে বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে নারানহিয়ো নদী৷ নদীতীরের ঘন জঙ্গল বহুদিন আগেই উধাও হয়েছে৷ নদীর স্রোতে পাড় ভাঙছে, কেননা গাছেদের শিকড়বাকড়ই মাটিকে ধরে রাখে৷

আলন্সো কাস্ত্রো এখানেও প্রচুর গাছ লাগিয়েছেন – নদীতীরের খেতগুলোর ঠিক মাঝখানে৷ শুধু গাছই নয়, সেই সঙ্গে প্রচুর ঝোপঝাড়৷ আলোন্সো বলেন, ‘‘এই ঝোপগুলো এখানে জমিটাকে ধরে রেখেছে, কেননা ওদের শিকড় বহু গভীর পর্যন্ত যায়৷ সেই সঙ্গে আমরা এই ছোট গাছগুলোকে রেখেছি৷ ছোট গাছগুলো একা মাটির ক্ষয় রুখতে পারে না – সে কাজের জন্য ওরা এখনও বড়ই ছোট৷''

পর্যটন

টুরিস্ট গাইড হোসে ক্রুস ইয়াতাস-এরও কফির চাষ আছে৷ হোসে এক পরিচিত লোকের কাছ থেকে কয়েক হেক্টার জমি ইজারা নিয়েছেন এবং সেখানে কফি ও কলাগাছ লাগিয়েছেন৷ এ সব গাছপালা তাঁর নিজের লাগানো৷ গাছপালা লাগানো যাবৎ ফসল বেড়েছে, জানালেন হোসে৷ তিনি বলেন, ‘‘টুরিজম আজ সান মার্তিন-এর আশেপাশের এলাকার মানুষজনের পক্ষে একটা বিরাট লাভ, এখানকার সকলের জন্যেই৷ টুরিস্টরা আজকাল বেশি করে আসছেন, এমনকি বিদেশ থেকেও৷ তারা পয়সা খরচ করেন, যা থেকে এখানকার মানুষজনের সত্যিই সাহায্য হয়৷''

কিন্তু হোসে-র টুরিস্টরা শুধু ততোদিনই আসবেন, যতোদিন বনজঙ্গল ভালো থাকবে৷ পরের দিন সকালেই আরেক দল টুরিস্টের আসার কথা৷ ভালোই তো৷ হোসে-কে বোট-টা তৈরি রাখতে হবে...