1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘দাম্পত্য ধর্ষণ'

দেবারতি গুহ১৮ জুলাই ২০১৫

ভালোবাসার বিয়ে নয়, সম্বন্ধ করে বিয়ে – ‘আধুনিক' ভারতবর্ষে আজও যেভাবে অধিকাংশ বিয়ে হয় আর কি! বিয়ের পর বাসর ঘরে লজ্জায় রাঙা হয়ে অপেক্ষা করছে কনেবউ৷ স্বপ্ন দেখছে কীভাবে শুরু হবে দু'জনের বন্ধুত্ব, নতুন পথচলা৷ কিন্তু...

https://p.dw.com/p/1G029
Symbolbild Missbrauch Opfer
ছবি: Fotolia/DW

স্বামী ঘরে ঢোকার পর মুহূর্তেই পালটে যায় তার জীবন৷ ভেঙে, গুঁড়িয়ে যায় সমস্ত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা৷ অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন কী এমন ঘটলো বাসর ঘরে? না, তেমন কিছু নয়৷ খুব সাধারণ ব্যাপার৷ স্বামী এসে দু-একটা মিষ্টি কথা বলা তো দূরের কথা, একরকম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মেয়েটির শরীরে৷ যন্ত্রণায় চিৎকারও করতে পারেনি সে, মুখে গুঁজে দেয়া হয়েছিল চাদর...৷ বাহ্ রে, নিজের বউ বলে কথা৷ তার ওপর জোর-জবরদস্তি করার একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে না স্বামীর? আর ‘বিয়ে' তো শুধু নারী-পুরুষের মধ্যকার সামাজিক ও ধর্মীয় চুক্তি নয়, এ তো স্বামীর ইচ্ছে মতো স্ত্রীকে ভোগ করার একটি বৈধ ‘লাইসেন্স'৷ তাই না?

আপনার উত্তর যাই হোক, ভারত তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে এটাই সত্য৷ আসলে স্বামী যদি স্ত্রীকে শারীরিক নিযার্তন করে আর ভুক্তভোগী স্ত্রী আইনের আশ্রয় নেয় – তাহলে ধীরে হলেও ব্যাপারটা আমরা মেনে নিতে শুরু করেছি৷ কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে ধর্ষণ করছে – এটা মেনে নিতে আজও কোথাও যেন বাধে৷ ‘ম্যারিটাল রেপ' বা দাম্পত্য ধর্ষণ এখনও যে অপরিচিত না হলেও অনুচ্চারিত একটি শব্দ! এর পেছনে অবশ্য রয়েছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক অবকাঠামো, যেখানে স্ত্রীকে আজও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা হয় স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা রয়েছে , তাতে স্বামীকে ধর্ষকের ভূমিকা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সযত্নে (স্ত্রীর বয়স যদি ১৫ বছরের নীচে না হয়)৷ অর্থাৎ স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রাখা কোনো অপরাধ নয়৷ তাই স্বামীর হাতে প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও, তাকে ‘ধর্ষণ' বলা যাবে না৷ ভারতের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ অন উইমেন (আইসিআরডাব্লিউ) বা আন্তর্জাতিক নারী গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, স্ত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে প্রতি পাঁচজনের একজন ভারতীয় পুরুষ৷ তাও আবার লজ্জিত হয়ে নয়, বেশ গর্ব করেই৷

Deutsche Welle Süd-Ost-Asien Debarati Guha
দেবারতি গুহ, ডিডাব্লিউ-র বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৫২টি দেশ ‘ম্যারিটাল রেপ'-কে আইনের অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং শাস্তির বিধান রেখেছে৷ ইংল্যান্ডে অবশ্য ১৯৯২ সালেই স্ত্রীকে ধর্ষণের অপরাধ থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দেয়ার আইনটিকে অবলুপ্ত করে ‘হাউস অফ লর্ডস'৷ এরপর ১৯৯৩ সালের জুলাই মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র সব রাজ্যে দাম্পত্য ধর্ষণকে বে-আইনি ঘোষণা করে৷ দাম্পত্য ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে মেনে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মেক্সিকোও৷ ওদিকে আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া ও নেপালে দাম্পত্য ধর্ষণ বিরোধী আইন থাকলেও, ধর্ষক স্বামীর জন্য অতি সামান্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ অথচ ভারত-বাংলাদেশে...?

এখানে নারীকে পারিবারিক চাপ অথবা অন্য উপায় না থাকার ফলে বছরের পর বছর বাস করতে হয় ‘স্বামী' নামের ধর্ষকের সঙ্গে৷ একবার নয়, হয়ত প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে ধর্ষণ হয় তার৷ লোকলজ্জার ভয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না সে৷ তাই বয়ে বেড়াতে হয় যৌন রোগ, ক্ষত বা মানসিক অসুখ৷ তাই কোনো নারীকে যদি প্রশ্ন করেন – আপনার স্বামী কি আপনাকে ধর্ষণ করছেন? – তাহলে বেশিরভাগ নারীই এক হয় চুপ হয়ে যাবে কিংবা পড়ে যাবে চিন্তায়৷ আর কেউ যদি সাহস করে সত্যটা বলেও ফেলে, তাহলে তার ভবিষ্যৎ কী? কে দেবে তাকে পুনর্বাসন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ? পরিবার? রাষ্ট্র? ধর্ম?

কেউ না৷ আর সে জন্যই ধর্ষক স্বামীরা আজও বুক ফুলিয়ে হাঁটে আর মেয়েরা পুতুল খেলতে খেলতে মুখ বন্ধ করে ‘ধর্ষিতা' হন!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান