1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদের ফাঁসি বহাল

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৬ জুন ২০১৫

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকলো জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে৷

https://p.dw.com/p/1Fhtb
Bangladesch Ali Ahsan Mohammad Mojaheed Urteil Kriegsverbrechen
ছবি: DW/S. Kumar Dey

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ফিরে পাবো না, তবে এই রায়ে বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে৷''

৪৩ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও স্বাধীনতাকামীদের গণহত্যার দায়ে তৎকালীন আলবদর বাহিনীর প্রধান আর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ফাঁসির আদেশ দেয় ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই৷ আর মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ প্রধানত বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দেশের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে৷ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন – বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী৷

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আশে দেয়৷

সে সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছিল, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজাহিদ যে অপরাধ করেছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) না দিলে সুবিচার হবে না৷'' রায়ে বলা হয়, ‘‘সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা-নির্যাতনে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল৷ মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিল এবং ঐ বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিল৷''

মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থেকেছে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে৷ নিজের দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নজির আর কোনো দেশে নেই৷ কিন্তু মুজাহিদ সেই অপরাধটিই করেছে৷ আমরা যে বুদ্ধিজীবীদের হারিয়েছি, এক শতাব্দীতেও এমন বুদ্ধিজীবী তৈরি হবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘বুদ্ধিজীবীদের আমরা ফিরে পাবো না৷ তবে এটুকু সান্ত্বনা যে, বিচার পাওয়া গেল৷ এতে তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আরো কিছু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে৷''

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহিদ ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘এই প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য কারুর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো৷ আর যার শাস্তি হলো সে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন৷'' তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে একটা ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি' প্রতিষ্ঠিত হলো৷ প্রমাণ হলো, তারা শুধু বাংলাদেশের অভ্যুদয় নয়, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বিনির্মাণকেও শেষ করে দিতে চেয়েছিল৷''

ডা. নুজহাত চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমরা কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি, সরকারের প্রতি৷ কারণ দেরিতে হলেও বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হয়েছে৷ জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে৷ এখন রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় আছি৷''

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মুনীর দাবি করেন, ‘‘একাত্তরের অক্টোবর থেকে মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলন৷ তিনি আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না৷ এমনকি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের সময় মুজাহিদের নাম আলবদর বাহিনীর তালিকায় পাননি৷ তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা কেন, একাত্তরে কোনো হত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতও ছিলেন না৷''

আপিলের রায়ের পর এই মামলার অন্যতম সাক্ষী জালাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই রায়ে আমি খুশি৷ রায় কার্যকর হলে যদি আমার সহযোদ্ধা বদি-রুমী-আজাদ ভাই, আলতাফ মাহমুদসহ শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পায়, তাহলে আরো খুশি হবো৷''

বিচ্ছু জালান নামে খ্যাত এই মুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, ‘‘কুখ্যাত মুজাহিদ বলেছিল, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই৷ জামায়াত শিবির বলেছিল, আমরা যুদ্ধাপরাধী না৷ আজ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর তা তাদের মেনে নেয়া উচিত৷''

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি চতুর্থ মামলা, আপিল আদালতে যার চূড়ান্ত রায় হলো৷

এর আগে আবদুল কাদের মোল্লা, দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে৷ দণ্ড কার্যকর হয়েছে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের৷ আপিল বিভাগের আরেক রায়ে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ আর আপিলের শুনানির আগেই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায়, তাদের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে৷

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম সর্বোচ্চ সাজা পায় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদ৷ ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে৷ এরপর ২০১৩ সালের ১১ই আগস্ট ট্রাইব্যুনালের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী এই নেতা৷

ওদিকে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ছ'টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ছ'টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান