1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাসিড আক্রমণ

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী৭ জুন ২০১৫

একজন তরুণীকে ঠিক কতটা ‘ভালোবাসলে' তার ‘পিয়ামুখচন্দা' অ্যাসিড মেরে চিরকালের জন্য পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে? মোনা লিসা-কে কতটা ভালোবাসলে, দা ভিঞ্চির চিরন্তন সৃষ্টি নষ্ট করে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে?

https://p.dw.com/p/1FbjC
Opfer von Säureattacken Shaina und Laxmi
ছবি: Ashish Shukla

অ্যাসিড আক্রমণ নিয়ে আমার প্রশ্ন আমাদের কাছে, পুরুষদের কাছে৷ কী চাই আমরা মহিলাদের কাছে, কিভাবে চাই যে, তা না পেলে আমাদের মাথায় খুন চাপে, শয়তান এসে ভর করে?

অন্য মানুষ কিংবা জন্তুকে কষ্ট দেবার, ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি দেবার যতো অমানুষিক, জান্তব প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি থাকতে পারে, মনুষ্য জাতি এতদিনে তার সব ক'টি আবিষ্কার করে ফেলেছে, বলে ধরে নেওয়া যায়৷ কিন্তু যে পরিচিত কিশোরী বা তরুণী প্রতিদিন সপ্রতিভ মুখে পাড়া আলো করে ফুটপাথ ধরে স্কুল, কলেজ কিংবা কাজে যায়; যা-কে আমার-আপনার অনেকদিন ধরেই যেন একটু বেশি ভালো লাগে; যা-কে নিয়ে জীবনে এই প্রথমবার আমার-আপনার মতো ফুটবল-পাগলের মনেও নিঃসঙ্গ, নির্জন দ্বিপ্রহরে কুবো পাখি ডাকে; সেই মেয়েটি শুধু আমার হলো না বলেই...

অ্যাসিড আক্রমণ শুধু ঐ মেয়েটির নয়, আমার-আপনার সকলের জীবন বদলে দিচ্ছে, মানুষের প্রকৃতি, তার ভাবনা-চিন্তা, তার চেতনা, তার মধ্যে স্নিগ্ধ, নান্দনিক, মনুষ্যোচিত যা কিছু আছে, তাকে বদলে দিচ্ছে৷ দেখেন না, টেলিভিশনে কোনো অ্যাসিডে পোড়া তরুণীর মুখ দেখালে আমরা ‘নিরপরাধ' দর্শকরা – কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় – জীয়ল গাছের আঠার মতো কষ্ট পাই, মুখ ফিরিয়ে নিই, কিংবা রিমোট টিপে চ্যানেল বদল করি?

কেন করি? বিশেষ করে আমরা পুরুষরা? কিসের ভয় আমাদের? কী থেকে পালানোর চেষ্টা করছি আমরা? বোধহয় এই উপলব্ধি থেকে যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটানো তো পাপ বটেই, এমনকি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেওয়াও পাপ৷ শের শাহ সুরির আমলে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে কোনো চুরিডাকাতি, খুনখারাবি ঘটলেই নিকটস্থ, নিকটতম গাঁয়ের লোকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো, অপরাধীর নাম ফাঁস করতে কিংবা খেসারত কি জরিমানা দিতে বাধ্য করা হতো৷ একটি মেয়ের উপর অ্যাসিড আক্রমণ সেই ধরনের অপরাধ – আর আমরা সবাই সেই গাঁয়ের লোক, বিশেষ করে আমরা যারা পুরুষ বলে গর্ব বোধ করি৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

কেমন লাগে অ্যাসিড মারতে? ফুলের ওপর অ্যাসিড মেরে দেখতে পারেন – ফুল পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, এই যা রক্ষা৷ নয়ত ও পোড়ার দাগ কোনোদিন ঘুচবে না – মেয়েটির মুখেও নয়, আপনার মনেও নয়, যদি এই ঘটনার পর আপনার মন বলে কিছু থাকে৷ যে ধর্মের, যে সম্প্রদায়ের মানুষই আপনি হোন না কেন, এবার থেকে আপনার একমাত্র প্রার্থনা হবে: ঈশ্বর বলে যেন কিছু না থাকে; থাকলেও তিনি যেন অন্ধ হন, বধির হন; যেন তিনি কিছু দেখে না থাকেন, শুনে না থাকেন৷

কাজেই ঐ মুখপোড়া মেয়েটির জন্য নয়, আমার প্রার্থনা আমার-আপনার মতো পুরুষদের জন্য: ঈশ্বর যেন পরের বার পুরুষ না করে জন্ম দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য