বড়দিনের আগে যে ১০টি বিষয় জানা প্রয়োজন
জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব শুরু হয় বড়দিনের বেশ কিছু দিন আগেই৷ এই উৎসবের ব্যতিক্রমী দশটি দিক নিয়ে ডয়চে ভেলের বিশেষ ছবিঘর৷
বড়দিনের আগে শুরু হয় বড়দিন
বড়দিনের চার সপ্তাহ আগেই উৎসব শুরু হয় জার্মানিতে৷ ‘আডভেন্ট’ মৌসুম বা খ্রিষ্টের আগমনের সময় অনুসারে বিশেষ ক্যালেন্ডার পাওয়া যায়, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য৷ বড়দিনের সময় গণনার এই ক্যালেন্ডারে ২৪টি খোপ থাকে, ১লা ডিসেম্বর থেকে ক্রিসমাস ইভ বা ২৪ তারিখ পর্যন্ত৷ সাধারণত খোপগুলো পূর্ণ থাকে চকলেটে৷ অনেকে অবশ্য নানা উপহার দিয়ে নিজের হাতেই এটা তৈরি করেন৷
স্যান্টা ক্লজের চেয়ে এগিয়ে সেন্ট নিক
ডিসেম্বরের ৬ তারিখ সকালে জুতো পরার আগে সেটা পরখ করে নিন৷ সেদিন জুতো ভর্তি চকলেটে থাকতে পারে৷ এ দিনটা আসলে ‘সেন্ট নিকোলাস ডে’৷ প্রায় বড়দিনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস৷ বাচ্চারা এ দিন উপহার প্রত্যাশা করে৷ বিশ্বের অনেক দেশে স্যান্টা ক্লজ গুরুত্ব পেলেও, জার্মানিতে সেন্ট নিকোলের জনপ্রিয়তা কিন্তু বেশি৷
যীশু নিয়ে আসেন উপহার
সেন্ট নিকোলাস কিংবা স্যান্টা ক্লজ – কেউই বড়দিন উপলক্ষ্যে জার্মান বাচ্চাদের জন্য উপহার নিয়ে আসে না৷ এই দায়িত্বে আছেন ‘যীশু শিশু’৷ আর তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করে এক সোনালি নারী দেবদূত৷ দৃশ্যত এক রাতেই গোটা দেশে ঘুরে বেড়াতে পারদর্শী সে৷ তবে বাচ্চাদের জন্য আসলে যে বাবা-মাই উপহার কিনে আনেন – সে কথা তো বুঝতেই পারছেন৷
উপহারের রাত
জার্মানিতে বড়দিনের উপহার আদান প্রদান করা হয় ২৪শে ডিসেম্বর রাতে, মানে ক্রিসমাস ইভে৷ এই প্রথা বাচ্চাদের কাছে বেশ প্রিয়৷ সাধারণত পরিবারের সকল সদস্য রাতে ডিনারের পর উপহার খুলতে বসেন৷ তাই রাতে খাবারের পরিমাণ কম হলেই খুশি হয় শিশুরা৷ কারণ এতে করে উপহার খুলতে সময় একটু বেশি পাওয়া যায়৷
বড়দিনের পানীয়
আডভেন্ট মৌসুমে সাধারণ মানুষ প্রায়ই স্থানীয় ক্রিসমাস মার্কেটে হাজির হন ‘গ্ল্যুওয়াইন’ পান করতে৷ রেড ওয়াইন, চিনি এবং বিশেষ মসলার মিশ্রণে তৈরি এই গরম পানীয় পান করতে হয় ধীরে ধীরে৷ এটা খেতে তো ভালোই, শীতের কনকনে ঠান্ডা থেকেই রেহাই পাওয়া যায় খানিকটা৷
চকলেট মেলে আগে, তবে গাছ নয়
চকলেট দিয়ে সাজানো আডভেন্ট ক্যালেন্ডার বড়দিন শুরুর মোটামুটি চার সপ্তাহ আগে থেকেই পাওয়া যায়৷ তবে জার্মানিতে ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানো হয় ২৪শে ডিসেম্বর সকালে বা তার আগের দিন৷ ‘টানেনবাউম’ বা ‘ভাইনাখট্সবাউম’ সাধারণত জানুয়ারির ৬ তারিখ, ‘থ্রি কিংস ডে’ পর্যন্ত রেখে দেয়া হয়৷
অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা
বড়দিনের উৎসব উদযাপনের সময় বাড়তি সতর্কতা এবং নিরাপত্তা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেয়া হয়৷ তবে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়৷ তাই পাইন গাছ সাজাতে লাল গ্লাস বল এবং কাঠের ‘ট্রিঙ্কেটের’ পাশাপাশি লাল বা সাদা মোমবাতি ব্যবহার করা হয়৷ শুনতে বিপজ্জনক মনে হলেও, জার্মানরা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সঙ্গে রাখেন৷ তাই বিপদের ঝুঁকি কম৷
খাবার-দাবার জমিয়ে রাখুন
জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব একদিন হয় না, বরং হয় তিনদিনব্যাপী৷ ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ কার্যত একটি ছুটির দিন, যদিও সেদিন সকালের দিকে মুদির দোকান খোলা থাকে৷ তবে ২৫ এবং ২৬শে ডিসেম্বর সব কিছু বন্ধ থাকে৷ আপনি যদি আডভেন্ট ক্যালেন্ডার থেকে পাওয়া ক্যালোরির ওপর নির্ভর না করে থাকতে চান, তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ২৩ তারিখই আগামী কয়েকদিনের জন্য বাজার করে রাখা৷
পরের দিন ঘুমান
বিশ্বের কিছু দেশের মানুষ বড়দিনের পরের দিন সকালেই শপিং মলে দৌঁড়ান গিফট কার্ড থেকে পছন্দের গিফট কিনতে কিংবা অপছন্দের উপহারটি ফেরত দিতে৷ জার্মানিতে এমনটা করার উপায় নেই৷ কেননা শপিং মল আবারো খোলে ২৭ তারিখ৷ তাছাড়া গিফট কার্ড বড়দিনের উপহার হিসেবে তেমন একটা জনপ্রিয় নয় এদেশে৷ তাই নিশ্চিন্তে ২৫ তারিখের সকালটা ঘুমিয়ে কাটাতে পারেন৷
শিশুরা না গাওয়া পর্যন্ত শেষ নয়
আডভেন্ট ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ রবিবার জার্মানিতে শুরু হয় বড়দিনের উৎসব৷ এরপর বড়দিনের সময় তিন দিন থাকে ছুটি৷ তবে তারপরই কিন্তু উৎসব শেষ হয়ে যায় না৷ বড়দিনের উৎসব কার্যত শেষ হয় জানুয়ারির ৬ তারিখ৷ সেদিন ‘থ্রি কিংস ডে’৷ এই দিনে শিশুরা গান গায়, পরে ক্রিসমাস ট্রি-টিও ফেলে দেওয়া হয়৷ আর এভাবেই শেষ হয় বড়দিন৷