1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হামলায় মূলত জামায়াত'

৩০ জানুয়ারি ২০১৪

খুব তাড়াতাড়িই আরো কয়েকটি মামলার রায় দিতে পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ অতীত অভিজ্ঞতালব্ধ আশঙ্কা, তখন আবার হামলার শিকার হবে হিন্দুরা৷ এটা মেনেই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন রানা দাশগুপ্ত৷

https://p.dw.com/p/1Az4l
Bangladesch Hindus Überfall Jessore
ছবি: DW

ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন আগামী দেড় মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি মামলার রায় হতে পারে৷ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর থেকে প্রতিটি রায়ের আগে-পরে সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির৷ ব্যাপক হামলা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর৷ রানা দাশগুপ্ত এমন হামলাকে বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া এমনিতেই থেমে যাবে এমন কোনো বিষয় মনে করেন না৷ টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে অতীতের কিছু তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ছয় দশক ধরে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, একটি বিশেষ রাজনৈতিক মহল যারা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তারা যখন সরকারে থাকে, অথবা না-ও থাকে, তারপরও নানান রাজনৈতিক সংকট এবং নির্বাচনের যে ডামাডোল থাকে সেটাকে সামনে রেখে এক ধরনের ক্লিনজিং প্রসেস, যেটাকে আমরা বলছি ‘সংখ্যালঘু নিঃসকরণ প্রক্রিয়া', তা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে আসছে৷''

বাংলাদেশের এই প্রথিতযশা আইনজীবী হিন্দুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রতিকারহীন হামলার পেছনে শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি আইনেরও ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন৷ চুয়াত্তরে অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করা হয়েছিল, তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পরবর্তী সরকারগুলো তা আবার ফিরিয়ে আনে – এ কথা জানিয়ে মানবাধিকার কর্মী রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা যদি ১৯৭১-এর দিকে তাকাই তাহলেও দেখা যাবে, পাকিস্তান দখলদার হানাদার বাহিনী এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি পাকিস্তান রক্ষার নামে তখনও ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলো থেকে সংখ্যালঘু নির্মূল করার জন্য গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল আর যাঁরা গণহত্যার শিকার হয়নি তাঁদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল৷ আমরা লক্ষ্য করি, ১৯৭২ সালের পর গত চার দশকের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পর যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলেন তাঁরা মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অনুসৃত ‘সংখ্যালঘু নিঃসকরণ' নীতিকেই গ্রহণ করেছিলেন৷ ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির মেলবন্ধনে একদিকে তাঁরা বৈষম্য, নিপীড়ন, নির্যাতনকে অব্যাহত গতিতে চালিয়ে নিয়েছেন অন্যদিকে তথাকথিত অর্পিত বা শত্রু সম্পত্তি আইনের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে ভূমিচ্যুত করে দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন৷''

একটি জায়গায় ডানপন্থি-মধ্যপন্থি, মৌলবাদী আর তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার মধ্যে মিলও লক্ষ্য করেছেন রানা দাশগুপ্ত৷ তাঁর মতে, হামলায় মূলত মৌলবাদি সাম্প্রদায়িকরা বেশি সক্রিয় হলেও হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের বেলায় অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয়ভাবে হলেও একজোট৷ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তাই তিনি বলেছেন, ‘‘কিছু কিছু ঘটনায় আমরা লক্ষ্য করছি, (সম্পত্তি দখলের ক্ষেত্রে) সর্বদলীয় সাম্প্রদায়িক ঐক্যও হয়েছে৷''

[No title]

বাংলাদেশে কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়না৷ নির্বিচার হামলার মুখে সংখ্যালঘুরা বরং দেশত্যাগী হন৷ কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর এত ঢালাও এবং একতরফাভাবে না হলেও, হামলা-নির্যাতন তো অনেক দেশেই হয়৷ প্রতিবাদ ছাড়া দেশ ছেড়ে যাওয়ার নজীর কি আছে কোথাও? রানা দাশগুপ্ত মনে করেন বাংলাদেশের কোনো সরকার কখনো হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়নি বলেই নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পেতে প্রিয় জন্মভূমি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, ‘‘২০০১ সালের ঘটনার পূর্বাপরে ৯ থেকে ১১ লক্ষ লোককে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল৷ এই চক্রটিই কিন্তু ‘সংখ্যালঘু নিঃসকরণ' প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এই হামলাগুলো অব্যাহত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে৷ যারা সংখ্যালঘু ধর্মগোষ্ঠীর ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে এসেছে এ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি৷ মাঝেমাঝে যা কিছু করা হয়েছে সবগুলোই ছিল মূলত আইওয়াশ৷''

হামলার পর মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতি, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে কিছু ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়াকে সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ মনে করার কোনো কারণ এখন আর আছে কিনা এ প্রশ্ন রাখতে হয়নি, তার আগেই রাণা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘‘সরকারের কাছে আমরা বারবার বলছি, সংখ্যালঘুরা গরিব হতে পারে, ভিখারি নয়৷ অতএব ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে তাঁদের কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করাটা বৃথা৷''

Sheikh Hasina
ছবি: Reuters

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাওয়া রাণা দাশগুপ্ত মনে করিয়ে দিলেন হিন্দুদের ওপর বছরের পর বছর ধরে হামলা চালিয়ে যাওয়া হামলাও মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়েই পড়ে৷ আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘‘ ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর যে ব্যাপক এবং পরিকল্পিত হামলা চলছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে৷'' এ অপরাধ নির্মূল করার জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি৷

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কিছু উদ্যোগে সামান্য আশার আলো দেখছেন রানা দাশগুপ্ত৷ তবে উদ্যোগগুলো শেষ বিচারে আন্তরিক এবং প্রকৃত অর্থে কার্যকর কিনা এ বিষয়ে সংশয়ও আছে তাঁর৷ সেরকম সংশয় থেকেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করে রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, অতি সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দুর্গত এলাকা সফর করেছেন৷ সফরের সময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেছেন৷ কিছু কিছু জায়গায় মামলা হয়েছে এবং মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইন অথবা সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে৷ এখন আমরা দেখতে চাই আসলে এগুলোর মধ্য দিয়ে শাস্তিটাকে নিশ্চিত করার জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কিনা৷ যদি গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয়ই বলবো, স্বাধীনতার চার দশক পর হলেও এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ৷''

একাত্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল মুক্তিকামী বাঙালি৷ অথচ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে রানা দাশগুপ্ত শোনালেন চরম এক শঙ্কার কথা৷ তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশের রাজনীতি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে (মোট জনসংখ্যার) ৯ দশমিক ৭ পার্সেন্ট হিন্দুদের জিরো পার্সেন্টে নেমে আসা দেখার জন্য আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না৷ যদি জিরো বা এক পার্সেন্টে নেমে আসে তাহলে আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশও 'বাংলাস্তান’ হয়ে যাবে৷’’

সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য