সমুদ্রে তিমি শিকার

যদিও ১৯৮৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রজাতির তিমি নিধন নিষিদ্ধ, তারপরও নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো তিমি শিকার অব্যাহত রেখেছে৷ বিশেষ করে জাপানের দাবি, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তারা তিমি শিকার করছে৷

২৭ বছর আগে তিমি নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই প্রাণীর সংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে৷ তবে নীল তিমি, ‘ফিন’ তিমির মতো কিছু প্রজাতির সংখ্যা এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে৷ সামুদ্রিক তিমি ৩৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ১৯০ টন অবধি ওজনের হতে পারে৷

গত ২০ বছর ধরে কূটনৈতিক পন্থায় জাপানকে তিমি শিকার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলিয়া৷ এখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে)৷

জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই খাবার টেবিলে তিমির মাংসের উপস্থিতি ছিল৷ বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বীপবাসী তিমির মাংসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল৷ বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং ক্যান্টিনে তিমির মাংসের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল কেননা তা গরুর মাংসের চেয়ে সস্তা ছিল৷ তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে৷ জাপানে যে পরিমাণ মাংসের প্রয়োজন হয়, তার মাত্র এক শতাংশ এখন তিমির মাংস৷

জাপানের গুদামে সাত হাজার টনের বেশি তিমির মাংস রয়েছে৷ ক্রেতা কমে যাওয়ায় এক জাপানি প্রতিষ্ঠান তিমির মাংস দিয়ে কুকুরের খাবার প্রস্তুত করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটি তিমির মাংস দিয়ে কুকুরের খাবার তৈরির বিষয়টি বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও অনেক জাপানি এখনও তিমি শিকারকে সমর্থন করছে এবং উল্টো গ্রিনপিসের মতো সংগঠনগুলোর বিরোধিতা করছে৷ জাপান সরকার আন্তর্জাতিক চাপ অগ্রাহ্য করে তিমি শিকার কর্মসূচিতে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করছে৷

নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আইসল্যান্ড এবং নরওয়েও তিমি শিকার কর্মসূচি পরিচালনা করছে৷ দেশ দুটি তিমি শিকার বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা মানার চেষ্টা করছে না৷ চলতি মাসের শুরুতে আইসল্যান্ডের মাছ ধরার জাহাজ ‘ফিন’ তিমি শিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে৷ এসব তিমির মাংস জাপানে বিক্রি করা হবে৷

রাশিয়ার চুকচি এবং ক্যানাডার ইনুইটদের মতো আদিবাসী গোষ্ঠীর এখনো তিমি শিকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি রয়েছে৷ তবে তারা তা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে করতে পারবে না৷ এসব মানুষের কাছে তিমি শিকার ঐতিহ্যের বিষয় যা গত কয়েকশ বছর ধরে চালু রয়েছে৷ তিমি তাদের মাংস, তেল এবং হারের জোগান দেয় এবং এসবই আদিবাসীরা ব্যবহার করে৷

তিমি শিকার নিষিদ্ধে পরিবেশবাদীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন৷ তারা এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কয়েক দশক ধরে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন৷ ‘সি সেপার্ড’ নামক সংগঠনটি তিমি রক্ষায় তাদের বিতর্কিত এবং আগ্রাসী কর্মসূচির জন্য পরিচিতি পেয়েছে৷

অনেক দেশ এখন তিমি শিকার থেকে সরে এসে তিমি দেখা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ জাপান এবং নরওয়ের অনেক সাবেক তিমি শিকারি এখন তাদের অভিজ্ঞতা পর্যটকদের জানিয়ে অর্থ আয় করছেন৷ খাবারের টেবিলের বদলে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো তিমি দেখার প্রতি জাপানিদের আগ্রহও বাড়ছে৷