1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই মনের ‘নেটওয়ার্ক’

২৬ এপ্রিল ২০১৩

বিজ্ঞানীরা দেখছেন, সমবেত যন্ত্রসংগীতের সময় বাদক ও শ্রোতাদের মনে এক ‘নেটওয়ার্ক' সৃষ্টি হয়৷ এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে হয়ত অটিজিমের চিকিৎসা একদিন সম্ভব হবে৷

https://p.dw.com/p/18O1v

মনের উপর বাদ্যযন্ত্রের প্রভাব

ইয়োহানা সেঙার গান শুনতে সে বড়ই ভালবাসেন৷ বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় শিল্পীর মনের মধ্যে ঠিক কী ঘটে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চান তিনি৷ কারণ বাজানোর সময় মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় চাই৷ উদ্দেশ্য এক হলে তবেই ঐকতান সম্ভব৷

এই গবেষক মনে করেন, দুটি মস্তিষ্কের সমন্বয় তখনই ঘটে, যখন তারা একসঙ্গে কিছু করতে চায়৷ তখন যেন পরস্পরের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়৷ দুই মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগের ফলে যেন তা একটি মস্তিষ্কে পরিণত হয়৷ তিনি বললেন, ‘‘ডাক্তারের চেম্বারে অথবা টেলিভিশনের পর্দায় প্রায় সবাই গ্রাফের রেখা দেখেছে৷ আসলে সংগীতের ক্ষেত্রেও এমন তরঙ্গ কল্পনা করতে পারলে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন, দুই গিটার-বাদকের মনের মধ্যেও একই রকম রেখা তৈরি হচ্ছে৷ তবে দুজনেরই মস্তিষ্কে তরঙ্গের ওঠানামা যে একেবারে একই সঙ্গে হতে হবে, তা কিন্তু নয়৷ তার পরেও বলতে হবে, যে দুজনের মনেই প্রায় একই রকম রেখার বিন্যাস দেখা যায়৷''

দুই গিটার বাদকের সঙ্গে বাকি যারা আছেন, তারাও কি টের পান যে দুজনের মস্তিষ্কই যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে? সংগীতশিল্পী ভিওলা ভাইসার মনে করেন, ‘‘কিছু প্রক্রিয়া, যেমন সংগীতের দ্রুত বা ধীর গতি – এ সব আস্তে আস্তে নিজের অজান্তেই ঘটতে থাকে৷'' তাঁর এক সতীর্থ ডানকান টেলরের মত হলো, ‘‘যখন আমরা একসঙ্গে বাজনা বাজাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক কী ঘটে? এটা আমি সত্যি জানতে চাই৷''

19.05.2006 Projekt Zukunft Musikstudie
মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য বড়ই গভীরছবি: DW-TV

বাদক ও শ্রোতাদের মনে তরঙ্গের সমন্বয়

গবেষকরা দেখেছেন, ডুয়েট বাজানোর সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গের সমন্বয় ঘটে৷ সেঙার এবার জানতে চান, দুই শিল্পী আলাদা ধ্বনিতে বাজালেও তাদের তাল একই থাকে কি না৷ কারণ তখন মস্তিষ্ককে নতুন করে বার বার সমন্বয় করতে হয়৷ একজন তাল দেন৷ কিন্তু সংগীত শুরু হবার আগেই দুটি মস্তিষ্কেই একই রকম তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, যা সত্যি অবাক করার মতো ঘটনা৷

ইয়োহানা সেঙার বললেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, যে দুরকম সমন্বয় ঘটে – একদিকে নিজের মস্তিষ্কের ভিতরে এবং অন্যদিকে দুটি মস্তিষ্কের মধ্যে৷ এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সমন্বয়ের এই প্রক্রিয়া গোটা জলসা জুড়ে সমান থাকে না৷ সংগীতের বিশেষ কিছু অংশ এলে দুই বাদকের মধ্যে সমন্বয়ের মাত্রা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন দুজনকেই একই তাল দিতে হয়৷ আমরা ধরে নিতে পারি, সেই সব সময়ে দুজনের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে৷ তখন মস্তিষ্ক সমন্বয় করতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে৷''

অনেক সংগীতশিল্পী একসঙ্গে সংগীত পরিবেশন করলেও একাধিক মস্তিষ্কের মধ্যে এক নেটওয়ার্কের সৃষ্টি হয়৷ গবেষণাগারে এই কনসার্টের সময় শ্রোতাদের মস্তিষ্কেও সেন্সর লাগানো হয়েছে৷ তাদের মস্তিষ্কও বাদকদের নেটওয়ার্কে অংশ নিচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে৷

দুই মনের সমন্বয়ের আরও উদাহরণ

খেলাধুলা বা আড্ডার সময়ও মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে এমন সমন্বয়ের উদাহরণ দেখা যায়৷ এ বিষয়ে আরও জ্ঞান লাভ করলে গবেষকরা হয়ত নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির দিশা দেখাতে পারেন৷

মাক্স প্লাংক ইন্সিটিউটের অধ্যাপক উলমান লিন্ডেনবুর্গার বললেন, ‘‘যে সব মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত এবং অদ্ভূত সংকেত পাঠায় বলে বাকিদের সঙ্গে ঠিকমতো ভাবের আদান প্রদান করতে পারে না, তাদের হয়তো আমরা সাহায্য করতে পারি৷ ঠিক কোথায় কী পরিবর্তন করলে তারা স্বাভাবিকভাবে বাকিদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারবে, তাও হয়ত স্থির করতে পারি৷ যেমন অটিস্টিক শিশু বা অস্বাভাবিক আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের যোগাযোগের ক্ষমতার উন্নতি করা তখন সম্ভব হয়ে উঠতে পারে৷''

ইয়োহানা সেঙারের কাজ এই লক্ষ্য পূরনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে৷ বহু বছরের মৌলিক গবেষণার কতটা প্রয়োজন রয়েছে এবং বাস্তবেও তা কতটা কাজে লাগে, ইয়োহানা সেঙারের এই উদ্যোগ তারই উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত৷

এসবি/ডিজি