লেনদেনের উপর নতুন কর
২৩ জানুয়ারি ২০১৩আর্থিক লেনদেনের উপর কর চাপানোর ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশ অগ্রসর হতে বদ্ধপরিকর৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে তারা সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বাকি দেশগুলিও এতে কোনো আপত্তি জানায়নি৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি ও স্পেন এই উদ্যোগে সামিল হওয়ায় বাকিদের অনুপস্থিতি নিয়ে আর তেমন আলোচনা হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রিটেন ও সুইডেন সহ কিছু দেশ এখনো এর বিরোধিতা করছে৷
তবে সুইডেন, ডেনমার্ক, রুমেনিয়া ও হাঙ্গেরির মতো দেশ ভবিষ্যতে এই কাঠামোয় অংশ নেওয়ার পথ খোলা রাখার পক্ষে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, ইউরোপের অর্থনীতির এই দুর্দিনে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা অনেক বেশি জুরুরি৷ শিল্প-বাণিজ্য জগতের উপর বাড়তি কর চাপালে তাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে৷ ওদিকে জার্মানি ও ফ্রান্স সহ নতুন এই করের প্রবক্তারা বলছে, এতকাল সংকট সামাল দিতে শুধু করদাতাদের অর্থের দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে৷ এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির লেনদেনের উপর কর বসিয়ে ইউরোপের নাগরিকদের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছানো যাবে৷
ইউরো এলাকার দেশগুলির গোষ্ঠী ‘ইউরোগ্রুপ'-এর প্রধানের পদে এতকাল দায়িত্ব পালন করে এসেছেন লুক্সেমবুর্গ-এর প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার৷ এবার তাঁর জায়গায় এবার এলেন নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রী ইয়েরুন ডাইসেলব্লুম৷ ইউরো এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এই পদের বাড়তি গুরুত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে৷ অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ইয়ুংকার পারদর্শিতার সঙ্গে এই দায়িত্ব সামলে এসেছেন৷ ডাইসেলব্লুম বলেছেন, আগামী ৩০ মাস ধরে তিনি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান৷ সোমবার রাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি৷ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পদে স্বাগত জানানো হয়৷
স্পেন অবশ্য ডাইসেলব্লুমের নিয়োগ সম্পর্কে সন্তুষ্ট নয়৷ তাদের বক্তব্য, ইউরো এলাকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদই শক্তিশালী দেশগুলির দখলে, যাদের অর্থনীতি এখনো ‘ট্রিপল এ' রেটিং পেয়ে চলেছে৷ স্পেনের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলি সেখানে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না৷
গত বছর সংকটে জর্জরিত দেশগুলি সংস্কার, ব্যয় সংকোচ ইত্যাদি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ ফলে ২০১৩ সালে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকার কথা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে থাকায় তার সুফল পেতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে৷ তবে পূর্ব-ইউরোপে প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে৷
শুধু গ্রিস নয়, এবার পর্তুগাল ও আয়ারল্যান্ডও ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীদের কাছে ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাড়তি সময় চেয়েছে৷ ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত কয়েকটি কিস্তিতে মোটা টাকা ফেরত দিতে হবে পর্তুগালকে৷ একটু সময় পেলে বাজার থেকে আবার স্বাভাবিক ভাবে ঋণ পাওয়ার পথ সুগম হয়ে যাবে, এমনটাই আশা সে দেশের অর্থমন্ত্রীর৷ এ দিকে ইউরোপীয় কমিশন মঙ্গলবার দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বলেছে, ২০১২-১৩ সালে স্পেনের সরকারি ব্যয় কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, সে দেশের সরকার তা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা যাচ্ছে৷
এদিকে জার্মানির অর্থনীতি সম্পর্কে গত সপ্তাহে দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও জার্মানি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সূচক বেড়ে গেছে৷ ২০১০ সালে ইউরো এলাকায় ঋণ সংকট শুরু হওয়ার পর এই মাত্রা এত বাড়েনি৷ ফলে সামগ্রিকভাবে ইউরো এলাকার অর্থনীতি সম্পর্কে ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)