1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিন্টি ও রোমা

৯ এপ্রিল ২০১২

ইউরোপীয় ভবঘুরে উপজাতির মানুষদের নাৎসি আমলেই ইহুদিদের সাথে এক পর্যায়ে ফেলে নিপীড়ন করা হয়েছিল৷ জার্মানিতে এরা প্রধানত রোমা এবং সিন্টি৷ আজও এদের বিরুদ্ধে একটি গোপন বিদ্বেষ নানা জায়গায় মাথা চাড়া দেয়৷

https://p.dw.com/p/14Zdr
ছবি: DW/M.Ilcheva

‘‘একটি গোটা রোমা গ্রাম বার্লিনে এসে বাসা বেঁধেছে'', অথবা ‘‘রোমা ছেলেমেয়েদের সামলাতে গিয়ে বার্লিনের শিক্ষক-শিক্ষিকারা গলদঘর্ম'', বার্লিনের বিভিন্ন দৈনিকে এই ধরণের শীর্ষক খবর অতীতের নয়, চলতি মাসেরই৷ সেই সঙ্গে থাকে রিপোর্ট: এই ভবঘুরেরা কিভাবে যেখানেই থাকে, সেখানেই ময়লা ফেলে; কিংবা তারা কিভাবে জোঁকের মতো ছেঁকে ধরে রাস্তায় ভিক্ষে করে; কিংবা তারা কিভাবে জার্মানিতে থেকে নামে-বেনামীতে সামাজিক ভাতা আদায় করে৷

শত শত বছর ধরে ইউরোপের প্রায় সব দেশে যাদের এই রকম অপবাদ শুনতে হয়েছে, তারা আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সন্দেহের পাত্র৷ জার্মানির ৪৪ শতাংশ মানুষ আজও বিশ্বাস করে যে, সিন্টি ও রোমাদের মধ্যে একটা সহজাত অপরাধপ্রবণতা আছে৷ ৪০ শতাংশ তাদের বসতবাড়ির কাছাকাছি ভবঘুরেরা বাসা বাঁধলে অস্বস্তি বোধ করে৷ এ'সবই একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষার ফলাফল৷ অথচ যাদের সমীক্ষা করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশ সম্ভবত কোনোদিন কোনো রোমা কিংবা সিন্টি'কে দেখেনি৷

অবশ্য তা'তে কোনো ক্ষতি নেই৷ রোমারা যখন প্রায় ৬০০ বছর আগে - তারা বলে, ভারত থেকে - ইউরোপে এসে পৌঁছয়, তার পর থেকেই তারা যতোটা না বাস্তবের, তার চাইতে বেশি কল্পলোকের অধিবাসী৷ সেই কল্পলোক কিন্তু সার্ভান্তেজ থেকে শেক্সপিয়ার, এমনকি গুইন্টার গ্রাসেরও হতে পারে৷ সর্বক্ষেত্রেই তারা একদিকে যেমন রোম্যান্টিক, অন্যদিকে তেমন ভীতিপ্রদ ও অপরাধপ্রবণ৷ যৌন বিচারেও তাদের জীবন - অন্তত গ্রাম কি শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের কল্পনায় - লাগামছাড়া৷

Sinti und Roma Gedenken Nationalsozialismus
নাৎসি আমলে সিন্টি ও রোমাদের উপর নিপীড়ন নিয়ে ২০০৮ সালের একটি প্রদর্শনীছবি: dapd

জার্মানিতে আজ যে সব রোমা এবং সিন্টিদের বাস, তারা স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি, সর্বত্রই এই কল্পনার রোমাদের সঙ্গে একত্রভাবে যুগযুগান্তের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার মুখোমুখি হন৷ কোনো রোমা কিংবা সিন্টি দায়ে কিংবা অভাবে পড়ে হোক, কিছু করলেই হল৷ সেই অপকাজের দুর্নামটাও বাকি সকলের ভাগ্যে জোটে৷

মজার কথা, সিন্টি এবং রোমারা কিন্তু জার্মানিতে জাতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃত এবং সেই অনুযায়ী সরকারিভাবে সুরক্ষিত৷ কিন্তু বিদ্বেষ ও গালিগালাজের হাত থেকে তাদের বাঁচাবে কে? তাই ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে গেলেই দেখা যায়, ইউরোপের এই আদিম, স্বাধীন, রোম্যান্টিক যাযাবরদের বিরুদ্ধে কি'ধরণের অপপ্রচার চলেছে৷ এবং এ'ক্ষেত্রে নব-নাৎসিরাও যে আবার সোচ্চার, সেটাই হয়তো সিন্টি ও রোমাদের সবচেয়ে আতঙ্কের বস্তু৷

বলতে কি, ১৯৪৫ সাল যাবৎ জার্মানিতে রোমাদের আলাদা করে কোনো পরিসংখ্যানই রাখা হয় না৷ এবং কসোভো কিংবা পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে কতোজন মানুষ জার্মানিতে এলো কিংবা না এলো, তার সঙ্গে রোমাদের কোনো সম্পর্কই নেই৷ তবুও ঠিক সেই বহিরাগত প্রসঙ্গেই বার বার তাদের নাম এসে পড়ে; পত্রপত্রিকায় লেখা হয়, ‘‘হাজার হাজার রোমা'' জার্মানিতে আসছে৷

Roma und Sinti in Deutschland
সিন্টি ও রোমাদের সাহায্যের জন্য কোলোনে একটি আশ্রয়কেন্দ্রছবি: DW

এ'ভাবেই কিন্তু জার্মানিতে এই সেদিনও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ শেষমেষ প্রত্যক্ষ শারীরিক আক্রমণে পরিণত হয়েছে৷ জার্মান পুলিশও তাদের প্রথাগত জাতিগত চিন্তাধারা থেকে মুক্ত হতে পারেনি, বলেন গবেষকরা৷ আজও পুলিশ রিপোর্টে পরদেশি, নয়তো যার বাড়ির ঠিক নেই, নয়তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ - নানা বর্ণনায় সেই একই ইঙ্গিত প্রচ্ছন্ন থাকে: এরা হল যাযাবর, ভবঘুরে, ‘সিগয়নার'৷

প্রতিবেদন: আন্দ্রেয়া গ্রুনাউ / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য