1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কঙ্কালের ‘হাড়' বেচেও অর্থ উপার্জন করছে জার্মানি

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১১

জার্মানির উত্তরে বন্দর নগরী হামবুর্গে একটা রয়েছে একটি ভুতুড়ে বাড়ি৷ নাম ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক'৷ এমনিতে এ বাড়ি কারো চোখে পড়ার কথা নয়৷ নিতান্তই সাধারণ৷ কিন্তু ভিতরে ঢুকলেই বুঝবেন কেন বলছি এ কথা৷

https://p.dw.com/p/12fYl
এমন কঙ্কালের চাহিদা কম নয়ছবি: AP

বাড়িটায় পা ফেললেই কেমন যেন হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়৷ সিংহ-দুয়ার পেরোলেই চোখে পড়বে সারি সারি কঙ্কাল, একেবারে গা ঘেঁসে দাঁড়ানো৷ অন্যদিকে, একটার পর একটা কার্ডবোর্ডের বাক্স৷ তার একটার থেকে বেরিয়ে আছে কাটা হাত, অন্যটার থেকে পা অথবা কোনোটার থেকে উঁকি দিচ্ছে চিকন একটা আঙুল৷ এখনও ভাবলে গা শিরশির করে ওঠে৷

না, আসলে এটা কোনো ভুতুড়ে বাড়ি নয়৷ নয় কোনো ‘সিরিয়াল কিলার'-এর লুকিয়ে রাখা লাশ-ঘর৷ এখানে রাখা সব কটা কঙ্কাল, কিন্তু সবগুলো হাড়-গোড়ই প্লাস্টিকের তৈরি৷ আদতে এটা হলো – বিশ্বের বৃহত্তম ‘অ্যানাটমিক্যাল মডেল'-এর ভাণ্ডার৷ যার নাম ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক'৷

যাহ্, আমি কি আপনাদের সব কৌতূহল একদম মাটি করে দিলাম? আসলে বাড়িটাতে গিয়ে প্রথমে আমি নিজেই গিয়েছিলাম একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে৷ কথায় বলে, অনুসন্ধিৎসা হচ্ছে জ্ঞানের উৎস৷ তা সেই অনুসন্ধিৎসার কারণেই ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক' কোম্পানির ঐ ঘরটা দেখতে গিয়েছিলাম আমি৷ কিন্তু গিয়ে দেখলাম, তাতে সত্যিকারের মানবদেহের কোনো অংশ নেই৷ সবই কৃত্রিম৷

কিন্তু না, জ্ঞান আমার বৃদ্ধি হলো অনেকটাই৷ জানলাম, কোম্পানিটি কঙ্কাল, মনুষ্যদেহের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গ জার্মানি থেকে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের বিভিন্ন স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে বিক্রি করে থাকে৷ বেশিরভাগই ডাক্তারি পড়ছে – এমন ছাত্র-ছাত্রীদের ‘অ্যানাটমি' পড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য৷ মানে, ‘হাড়' বেচেও অর্থ উপার্জন করে থাকেন এরা৷ সেই ১৯৪৮ সাল থেকে৷ জার্মানিসহ সারা বিশ্বে এ কোম্পানির প্রায় ৬০০ কর্মচারী রয়েছেন৷ অবাক হোলাম৷

Ausstellung Körperwelten in Heidelberg freies Format
জার্মানির গ্যুন্টার ফন হাগেন্স অভিনব মৃতদেহ প্রদর্শনীর কারণে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেনছবি: AP

শুনেছিলাম, শারীরবৃত্ত হচ্ছে ‘ফিজিওলজি' আর শারীরস্থান হচ্ছে ‘অ্যানাটমি'৷ অর্থাৎ কিনা, জ্যান্ত শরীর নিয়ে কাটা-ছেঁড়া না করে, এই সমস্ত প্লাস্টিকের মডেল নিয়ে পড়াশোনা করে থাকেন ‘অ্যানাটমি'-র ছাত্র-ছাত্রীরা৷

জানলাম, ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক'-এর বিক্রি করা সবচেয়ে জনপ্রিয় জিনিস হলো কঙ্কালের একটা ‘সিরিজ'৷ যার নামকরণ করা হয়েছে ‘স্ট্যান'৷ এর থেকেও ভালো মডেল রয়েছে তাদের৷ নাম ‘স্যাম'৷ শুনে সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়লো ‘স্টান্টম্যান' ছবিটার কথায়...না, সে কথা থাক৷

যা বলছিলাম৷ ১.৭০ মিটার লম্বা ঐ সিরিজের কঙ্কালগুলি নাকি কোম্পানিটি গত প্রায় ৫০ বছর ধরে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে আসছে৷ তবে মজার বিষয় হলো, ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক' কিন্তু নিজেরা এই সব মডেল তৈরি করে না৷ এগুলি তৈরি হয়ে আসে চীন আর হাঙ্গেরি থেকে৷ সে জন্যই এ্যাতো কার্ডবোর্ডের বাক্স! এবার বুঝতে পারলাম৷

তবে কোম্পানিটির ম্যানেজার অটো গিস জানালেন যে, বাইরে থেকে শুধু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি আসে৷ আর এখানে তাঁরাই সেগুলিকে ‘অ্যাসেম্বল' বা একসঙ্গে জোড়া লাগান৷ এই কাজে সবচেয়ে দক্ষ এভিলিন পর্শ বললেন, ‘‘আমি দিনে প্রায় ১২টা কঙ্কাল জোড়া দিতে পারি৷'' অবশ্য এভিলিন শুধু হাড় জোড়া দেন৷ পেশি বা ‘মাসেল' লাগানোর কাজটা করেন ফিলিপ উয়েবেলাকার৷ ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্লাস্টিক গলিয়ে তবে তাঁকে এ কাজটি করতে হয়৷

ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, বুড়ো-বাচ্চা – নানা ধরনের কঙ্কাল জোড়া লাগিয়ে বিক্রি করে ‘থ্রিবি সাইন্টিফিক'৷ ম্যানেজার গিস জানান, শুধুমাত্র এ বছরেই অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার কঙ্কাল রপ্তানি করবেন তাঁরা৷ এটাই এবারের টার্গেট৷ যার অনেকাংশই যাবে ব্রাজিল, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং ভারতে৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক