ষাঁড়ের সঙ্গে দৌড়ানোর উত্সবে যুবক নিহত পাম্পলোনায়
১১ জুলাই ২০০৯প্রতি বছরেই ষাঁড়ের দৌড়ের বাত্সরিক উত্সবে দুই চারজন করে আহত হয় স্পেনের পাম্পলোনা শহরে৷ কিন্তু এই উত্সবে যোগ দিতে গিয়ে কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটল বেশ কয়েক বছর পর আবারও৷ এই নিয়ে মোট পনেরোজনের মৃত্যু হল এই বিপদজনক খেলায় জানাচ্ছে সংবাদসংস্থা৷ শেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৫ সালে, তারপর এই ২০০৯-এ৷
উত্সবটা যথেষ্ট হৈচৈ ভরা৷ চলে জুলাই মাসের গোড়ায় টানা এক সপ্তাহ ধরে৷ সারারাত পানভোজনের পর সকালবেলায় তাগড়া চেহারার ষাঁড়দের ক্ষেপিয়ে দিয়ে তাদের আগে পরে দৌড়৷ এরপর সেই ষাঁড়দের লড়াইয়ের অ্যারিনার মধ্যে টেনে এনে সেখানে ম্যাটাডোরের লড়াই৷ এই হচ্ছে মোটের ওপর উত্সবের চেহারা৷ প্রখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসে পাম্পলোনার এই ষাঁড়ের দৌড়ের কথা বিস্তারিত ভাবে লেখার পর এই উত্সব এক অন্য মাত্রাও পেয়ে গেছে বহুদিন যাবৎ৷ ১৯১১ সাল থেকে চলে আসছে ষাঁড় আর মানুষের মধ্যে শক্তি পরীক্ষার এই বিপদজনক লড়াই আর অ্যাডভেঞ্চারের উত্সব৷ শুধুমাত্র স্পেনের মানুষরাই নয়, এই জনপ্রিয় উত্সবে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অ্যাডভেঞ্চার বিলাসীরা প্রতি বছর পাম্পলোনায় এসে জড়ো হন৷
কিন্তু এ বছর পাম্পলোনার এই পরিচিত উত্সবে মৃত্যুর করাল ছায়াপাত ঘটে গেল শুক্রবার৷ সকালবেলায় যথারীতি পাম্পলোনার পথে উন্মত্ত ষাঁড়দের সামনে পিছনে দৌড়বাজরা যখন দৌড়াচ্ছে, তখন সাতাশ বছরের এক দৌড়বাজ যুবক ড্যানিয়েল জিমেনোকে নিজের শিং-এর পাল্লায় ধরাশায়ী করে ফেলে একটি উন্মত্ত ষাঁড়৷ মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় প্রাণঘাতী ঘটনা৷ প্রায় পাঁচশো পাউন্ড ওজনের সেই তাগড়া ষাঁড়ের হামলায় ঘাড় ভেঙে যায় যুবকটির৷ তার হৃৎপিণ্ডের মধ্যে ঢুকে যায় ষাঁড়ের শিং৷ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় ড্যানিয়েল৷ শুধু ড্যানিয়েলই নয়, শুক্রবার দিনটা দৌড়বাজদের পক্ষে তেমন আনন্দের ছিল না কারণ, আরও চছয়জন দৌড়বাজ আহত হন পাগলা ষাঁড়ের হামলায়৷ তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা বেশ সঙ্গিন৷
যে ষাঁড়টি ড্যানিয়েলকে খুন করেছে, তাকে শুক্রবার বিকালেই লড়াইয়ের ময়দানে হত্যা করেছেন এক ম্যাটাডোর৷কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হল বলে মনে করছেন না অনেকেই৷ পাম্পলোনার বহু পুরানো উত্সবের নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে এর আগেও যে কথা ওঠে নি তা নয়৷ কিন্তু, স্পেনের সংস্কৃতির মধ্যেই যে ম্যাটাডোরের লড়াই বা ষাঁড়ের সঙ্গে মানুষের লড়াইয়ের ব্যাপার রয়েছে বহু শতাব্দ ধরে এবং এই উত্সব যেহেতু তারই অঙ্গবিশেষ, অতএব এ নিয়ে তেমন কোন জোরালো তর্ক এতদিন ওঠেনি৷ কিন্তু, কয়েক বছর পর ড্যানিয়েল জিমেনোর মৃত্যু এবং সেইসঙ্গে আরও চছয়জনের আহত হওয়ার ঘটনার পর এবার হয়তো এই পশু আর মানুষের শক্তি পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হতে হবে প্রশাসনকে৷ খতিয়ে দেখতে হবে নিরাপত্তার কোন বিশেষ আয়োজন করা যায় কিনা৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই